নিউইয়র্ক অঞ্চলে বসবাসরত বীর মুক্তিযোদ্ধাগণকে অভিনন্দিত করে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা বললেন, বাংলাদেশের এই ক্রান্তিকালে আপনারা আবারো ঐক্যবদ্ধ হয়েছেন-এটা গোটা জাতির জন্যে খুবই বড় ধরনের একটি সুখবর।

গত রোববার ,৪ মে,সন্ধ্যায় নিউইয়র্কের জ্যাকসন হাইটসে নবান্ন পার্টি হলে যুক্তরাষ্ট্র বঙ্গবন্ধু পরিষদ এবং বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশনের যৌথ উদ্যোগে অনুষ্ঠিত এ মুক্তিযোদ্ধা সমাবেশে টেলিফোনে যুক্ত হয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনা আরো বলেন, সুপরিকল্পিত ষড়যন্ত্রের মধ্যদিয়ে গত জুলাই-আগস্টের কথিত আন্দোলনের নামে বাংলাদেশ থেকে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত সকল স্থাপনা ধ্বংস করা হয়েছে। জেলা-উপজেলায় মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স-সহ অনেক মুক্তিযোদ্ধার বাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে লটতরাজ শেষে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে ফেলার ঘটনাও ঘটেছে। জাতির পিতার বাসভবন, বঙ্গবন্ধু ভবন-যেটিকে আমরা স্মৃতি জাদুঘরে পরিণত করেছিলাম, সেটি প্রথমে লুটতরাজের পর আগুন দিয়েছিল, পরবর্তীতে বুলডোজার দিয়ে গুড়িয়ে দিলো। মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর গড়ে দিয়েছিলাম, সেখানে আমরা মুক্তিযুদ্ধের সকল ইতিহাস-সংগ্রামের ধারাবিবরণী সংরক্ষণ করেছিলাম। সেটিও ধ্বংস করা হয়েছে। কারণ, সুদখোর ইউনূস মুক্তিযুদ্ধের কোন চিহ্নই রাখবে না। শেখ হাসিনা বলেন, মুক্তিযোদ্ধাগণ ইন্তেকাল করলে তাকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সম্মান জানানোর মধ্যদিয়ে দাফনের যে ব্যবস্থা করেছিলাম, সেটি পর্যন্ত বন্ধ করে দিয়েছে। আপনারা দেখেছেন এরইমধ্যে মুক্তিযুদ্ধে সরাসরি অংশগ্রহণকারি আওয়ামী লীগের অনেক নেতার লাশ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফনের সুযোগ দেয়া হয়নি। এমন চরমভাবে আজ মুক্তিযোদ্ধাদেরকে অবজ্ঞা করা হচ্ছে। শেখ হাসিনা বলেন, কেন অবজ্ঞা করছে-সেটি আমার প্রশ্ন। আজ সে (ইউনুস) যুদ্ধাপরাধী জামাত-জঙ্গি-সন্ত্রাসী ,এদের নিয়েই রাষ্ট্র পরিচালনা করছে। মুক্তিযুদ্ধে যাদেরকে পরাজিত করেছিলাম, সেই পরাজিত শক্তির সাথেই এদের দহরম-মহরম। আমরা দেখতে পাচ্ছি একে একে মুক্তিযুদ্ধের সব স্মৃতিচিহ্ন তারা মুছে ফেলার চেষ্টা করছে। আজ আমি অত্যন্ত আনন্দিত যে, আপনারা সবাই এক হয়েছেন, এজন্যে আপনাদেরকে ধন্যবাদ জানাই। আমাদেরকে আবার সেই মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ফিরিয়ে আনতে হবে। সারাজীবনই মুক্তিযোদ্ধারা আত্মত্যাগ করেছেন, সেই তরুণ বয়সে সবকিছু ছেড়ে দিয়ে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন দেশকে শত্রুর হাত থেকে মুক্ত করবার জন্য। এই যে অবদান-সেই অবদানকে অস্বীকার করে কীভাবে? শেখ হাসিনা উল্লেখ করেন, আজ তারা ক্ষমতায় বসেছেন, যদিও তাদের কোন ম্যান্ডেট নেই, কোন সাংবিধানিক বৈধতা নেই, ডাকাতি করে ক্ষমতায় এসেছে ইউনূস, এভাবে ক্ষমতায় বসে তার এতো সাহস হয় কী করে যে সে মুক্তিযোদ্ধাদেরকে অবজ্ঞা করবে। এতো সাহস হয় কী করে যে সে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন মুছে ফেলবে? এটা তো কক্ষনোই মেনে নেয়া যায় না। আজ স্বাধীনতা বিরোধী সেই আলবদর, রাজাকার, আল শামস বাহিনী নিয়ে যারা বুুদ্ধিজীবীদের হত্যা করেছে, গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়েছে, মা-বোনদের তুলে নিয়ে যারা পাকিস্তানী সেনা ক্যাম্পে দিয়েছে-আজকে তাদের রাজত্ব বাংলাদেশে। এর চেয়ে দুর্ভাগ্যের আর কিছু হয় না। ।খবর বাপসনিউজ।

শেখ হাসিনা বলেন, যে বাংলাদেশটাকে এতো উন্নত করেছিলাম, সেই বাংলাদেশটাকে আজ ধ্বংস করে দিচ্ছে। আর এখোন দেখা যাচ্ছে- আমাদের মুক্তিযোদ্ধা, আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়, সাংবাদিক, আইনজীবী, পেশাজীবী কাউকেই ছাড়ছে না। প্রত্যেকের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেয়া, হয়রানি করা, এতবেশী হত্যা মামলা, কারণ হত্যা মামলা দিলে জামিন পাবে না। কারাগার থেকে জঙ্গি, সন্তুাসী, কুখ্যাত দাগী আসামীর সকলকে আগেই মুক্তি দিয়েছে। খালি সেই কারাগার আজ ভরে ফেলেছে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী, চৌদ্দ দলের নেতা-কর্মী দ্বারা। এই ধরনের একটা অরাজক পরিস্থিতি সারাদেশে। আমি আপনাদের অনুরোধ করবো, এই মুক্তিযোদ্ধাগণের আত্মত্যাগেই আমাদের এই বাংলাদেশ। আমাদের লক্ষ্য আমরা সোনার বাংলা গড়ে তুলবো। আর সেই লক্ষ্যেই কিন্তু আমরা অনেক অগ্রগামী ছিলাম। অনেক অর্জন আমরা করেছিলাম। বাংলাদেশকে ২০২১ সালে, যখোন আমরা স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তি এবং জাতিরজনক বঙ্গবন্ধুর শততম জন্মবার্ষিকী উদযাপন করেছি তখোনই কিন্তু বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছিল। আজকে অর্থনীতিকে এমনভাবে ধ্বংস করে দিচ্ছে, আমি জানিনা এই লক্ষ্যটা ধরে রাখতে পারবে কিনা। দেশটাকে ইচ্ছাকৃতভাবে একেবারে ধ্বংসের কিনারায় নিয়ে গিয়ে গিয়ে এখোন যেটা ঘটছে-তা আরো জঘন্য, আপনারা কিছুদিন আগে শুনলেন, পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেছে পার্বত্য চট্টগ্রামের লাইখনছড়ি থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত এলাকায় নাকি বাংলাদেশের নিয়ন্ত্রণ নেই। কেন নিয়ন্ত্রণ থাকলো না-এটা আমার প্রশ্ন। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত আমাদের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে ছিল, সেখানে তো মিয়ানমার থেকে প্রায় ১১ লক্ষ রোহিঙ্গা আমাদের দেশে আশ্রয় নিয়েছে। মানবতার খাতিরে তাদের আশ্রয় দেয়া হয়েছে। আমরা তো কারো সাথে ঝগড়া করতে যাইনি। ‘সকলের সাথে বন্ধুত্ব-কারো সাথে বৈরিতা নয়’-এই পররাষ্ট্র নীতি নিয়েই আমরা চলেছিলাম। হ্যাঁ, মিয়ানমারের মধ্যে তাদের নিজেদের মধ্যে সংঘাত ছিল, সেই সংঘাতে আমরা কেন কোনকিছু যোগ করবো বা তাদের জোগানদার হবো? শেখ হাসিনা বলেন, অন্যের ঘরে আগুন দিলে নিজের ঘরওতো পুড়ে। আজ সুদখোর, খুনী জঙ্গিবাদি ইউনূসের কারণে বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব আজ বিপন্ন। একজন উপদেষ্টা আরো বলেছে যে বাংলাদেশের মানচিত্র নাকি বদলে যাবে। যে বাংলাদেশ ৩- লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে আমরা অর্জন করেছি, আজ সেই বাংলাদেশটাকে তারা ধ্বংস করতে চাচ্ছে। কাজেই মুক্তিযোদ্ধাসহ সকলে মিলে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে, প্রতিহত করতে হবে এবং জাতিরপিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ৭ মার্চে যে ভাষণ দিয়েছেন, যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবেলা করতে হবে। আজ সময় এসেছে, যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে এই খুনী ইউনূসের এই দু:শাসন থেকে জাতিকে মুক্ত করতে হবে। দেশের মানুষের শান্তি নেন-নিরাপত্তা নেই, চুরি-ডাকাতি-ছিনতাই প্রতিনিয়ত ঘটছে। তাই দেশের মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, আর্থ-সামাজিক উন্নতি করা এবং ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে আমরা উন্নত-সমৃদ্ধ ডিজিটালি স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলে জাতিরপিতার স্বপ্ন বাস্তবায়িত করার যে কর্মসূচি আমরা দিয়েছিলাম-সেটা যেন আমরা বাস্তবায়ন করতে পারি, সেজন্য আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। সবথেকে আগে প্রয়োজন এই সুদখোর খুনি ইউনূসের হাত থেকে এবং তার দু:শাসন থেকে বাংলার মানুষকে মুক্ত করার। আমরা আবারো আপনাদেরকে অনুরোধ জানাই যে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে সমুন্নত করে রেখে এবং তরুণ সমাজ যারা ইতিমধ্যে বিভ্রান্ত হয়ে গেছে, অর্থের কাছে বিক্রি হয়ে গেছে, তাদেরকে ফিরিয়ে আনতে হবে। আর যারা ইতিমধ্যেই বুঝতে পারছে যে, তারা বিভ্রান্ত হয়েছিলো, তারা ভুল করেছে, এবং সেই ভুলের খেসারত এখোন জাতি দিচ্ছে, তাদেরকেও আমি বলবো এখোন অন্তত: চেতনা ফিরে এসেছে, সবাই এক হয়ে এই দু:শাসনের হাত থেকে দেশকে মুক্ত করার। আপনাদের সবাইকে ধন্যবাদ। ইনশাআল্লাহ-বাংলার মানুষের জয় হবেই। জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু। এ টেলিফোন কলের সমন্বয় করেন যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক  প্রকৌশলী মোহাম্মদ আলী সিদ্দিকী।
বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশনের সভাপতি আব্দুল কাদের মিয়ার সভাপতিত্বে এ সমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন বঙ্গবন্ধু পরিষদের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা ড. নুরুন্নবী। বিশেষ অতিথি  ছিলেন যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের  অন‍্যতম  উপদেষ্টা  ড.প্রদীপ রঞ্জন  কর,বীর মুক্তিযোদ্ধা ড. জিনাত নবী,বীর মুক্তিযোদ্ধা ও অথর সিরু বাংগালি,বীর মুক্তিযোদ্ধা তাজুল ইমাম, বংগবন্ধু পরিষদ যুক্তরাষ্ট্ শাখার সাধারন সম্পাদক প্রকৌশলী রানা হাসান মাহমুদ,সাংগঠনিক সম্পাদক ও ওয়াসিংটন ডিসি সময় টিভির প্রতিনিধি প্সাংবাদিক এডভোকেট গোলাম দস্তগির ,শেখ কামাল সংসদের সভাপতি ডাঃমাসুদল হাসান ।                                                   অতিথিদের পাশে ছিলেন বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশনের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন ফজলুল হক এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. জাফরউল্লাহ।

সঞ্চালনায় ছিলেন বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশনের সেক্রেটারি কামাল হোসেন মিঠু এবং বঙ্গবন্ধু পরিষদের যুগ্ম সম্পাদক স্বীকৃতি বড়ুয়া। সমাবেশে উপস্থিত বীর মুক্তিযোদ্ধাগণকে পরিচয় করিয়ে দেন বীর মুক্তিযোদ্ধা লাবলু আনসার। মুক্তিযোদ্ধার মধ্যে আরো ছিলেন ইঞ্জিনিয়ার আশরাফুল চৌধুরী, আবুল বাশার চুন্নু, গুলজার হোসেন, মো. নাজিমউদ্দিন, মো. নূরল ইসলাম, মেসবাহউজ্জামান, এনামুল হক, হেলাল মজিদ, আশরাফ আলী, খুরশিদ আনোয়ার বাবলু, প্রাণ গোবিন্দ কুন্ডু, আবুল বাশার ভূইয়া, শরাফ সরকার, এম এ হাসান, ফিরোজ পাটোয়ারি প্রমুখ।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড. নুরুন্নবী বলেছেন, হায়েনার গোষ্ঠি আজ হামলে পড়েছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিরুদ্ধে। তাই আমাদেরকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে যে কোন ত্যাগের বিনিময়ে।

সভাপতির বক্তব্যে আব্দুল কাদের মিয়া সকলের প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া সত্বেও বিপুল উপস্থিতির মাধ্যমে সমাবেশকে সাফল্যমন্ডিত করার জন্যে। একইসাথে বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনাকেও ধন্যবাদ জানিয়েছেন মুক্তিযোদ্ধাগণের এই সমাবেশে বক্তব্যের মাধ্যমে বাংলাদেশকে আবারো সঠিক ট্র্যাকে ফিরিয়ে আনার চলমান আন্দোলনকে বেগবান করার উদাত্ত আহবান জানানোর জন্যে।

একাত্তরে কলকাতা তথা পশ্চিমবঙ্গের সীমান্তে শরনার্থী শিবিরে ত্রাণ কার্যক্রমে জড়িয়ে পড়া সে সময়ের দশম শ্রেণীর ছাত্র এবং আজকে নিউইয়র্ক অঞ্চলের মানবাধিকার কর্মী এবং লেখক ড. পার্থ ব্যানার্জি উদ্ভ’ত পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে সকলকে আবারো অসাম্প্রদায়িক চেতনায় উজ্জীবিত হবার পরামর্শ দিয়েছেন।
বঙ্গবন্ধু পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক সাংবাদিক গোলাম দস্তগীর বলেন, বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার চেতনাকে ধ্বংসের আন্তর্জাতিক চক্রান্তের বিরুদ্ধে সকলকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। লড়তে হবে একসাথে।

বীর মুক্তিযোদ্ধা ড. প্রদীপ কর জাতিসংঘ সনদের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছেন যে, গত জুলাই-আগস্টের কথিত আন্দোলনে নিহত হবার ঘটনাবলিকে কোনভাবেই ‘গণহত্যা’ হিসেবে অভিহিত করার সুযোগ নেই। এটা হচ্ছে একাত্তরের পরাজিত শক্তির আরেকটি চক্রান্ত যার মধ্যদিয়ে দেশপ্রেমিক বাঙালি নিধন করতে চায়।

বীর মুক্তিযোদ্ধা ও শিল্পী তাজুল ইমাম ২০০৯ থেকে ২০২৪ সালের আগস্ট পর্যন্ত শেখ হাসিনার নেতৃত্বে যেসব উন্নয়ন হয়েছে তা উপস্থাপন করেন।

বীর মুক্তিযোদ্ধা আশরাফ চৌধুরী বলেছেন শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠানো হচ্ছে, কিন্তু এখোন পর্যন্ত ইউনূসের চাটুকাররা সুনির্দিষ্ট কোন দুর্নীতির তথ্য উদঘাটনে সক্ষম হয়নি।

ডেমক্র্যাটিক পার্টির ডিস্ট্রিক্ট লিডার ড. দিলীপ নাথ বলেন, গত ১৫ বছরের প্রতিটি দিন যেভাবে আমেরিকান  কংগ্রেস, স্টেট ডিপার্টমেন্ট, হোয়াইট হাউজ এবং জাতিসংঘে শেখ হাসিনার সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ সাবমিট করা হয়েছে, তার কিয়দংশও গত ৮ মাসে ঘটেনি। এ দায়িত্বটি পালন করতে হবে ইউনূসের অপশাসনের বিরুদ্ধে বিশ্বজনমত গড়ে তোলার জন্যেই।


ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ আলী সিদ্দিকী বলেন, সময়ের প্রয়োজনেই ইউনূসের অপকর্মের বিরুদ্ধে সকল প্রবাসীকে রাজপথে নামতে হবে।

রানা হাসান মাহমুদ বলেন, বঙ্গবন্ধু পরিষদ বসে নেই। গত ৮ মাসে আমরা কংগ্রেসের সদস্য সমীপে স্মারকলিপি পাঠিয়েছি। কথা বলার চেষ্টাও করেছি। সর্বশেষ ওয়াশিংটন ডিসিতে অবস্থিত ন্যাশনাল প্রেসক্লাবে একটি প্রেস কনফারেন্সের মাধ্যমে বাংলাদেশের পরিস্থিতি উপস্থাপন করা হয়েছে।

ড. জিনাত নবী বলেছেন, আমিও সকল প্রবাসীর সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছি। হতাশ হলে চলবে না। কাজ করতে হবে দু:শাসনের অবসানের জন্যে ।আরো বক্তব্য পাখেন বীর মুক্তিযোদ্ধা শরাফ সরকার, সাংবাদিক শাবান মাহমুদ, সাংবাদিক হেলাল মাহমু প্রমুখ। কবিতা আবৃত্তি করেন জীবন বিশ্বাস।

‘মৌলবাদি, সাম্প্রদায়িক ক’চক্রিমহল বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের শানিত চেতনার বিরোধিতাকারি অপশক্তির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াও বাংলাদেশ’-এ মন্ত্রে উজ্জীবিত এ সমাবেশ শুরু হয়েছিল একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ থেকে পরবর্তী প্রতিটি গণতান্ত্রিক আন্দোলনে শহীদ এবং গত জুলাই-আগস্ট থেকে আজ অবধি ধর্মীয় সন্ত্রাসীদের হাতে শহীদ হওয়া বীর বাঙালিগণের আত্মার মাগফেরাত কামনায় এক মিনিট দাঁড়িয়ে নিরবতা পালনের মধ্যদিয়ে। এরপর সকলে দাড়িয়ে জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন করেন। সমাবেশে বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশনের নেতৃবৃন্দের মধ্যে আরো ছিলেন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আলিম খান আকাশ, সাংগঠনিক সম্পাদক আলমগীর কবির ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক-হাজী আব্দুল জলিল, তথ্য ও প্রযুক্ত বিষয়ক সম্পাদক-নুরুন্নাহার খান নিশা, কোষাধ্যক্ষ  নাঈমউদ্দিন, নির্বাহী সদস্স‍্য নুরুল আবসার, সহ-সভাপতি আবু তাহের রহমান মামুন, জহিরুল ইসলাম ইরান, সাহাবউদ্দিন চৌধুরী লিটন প্রমুখ।

সমাবেশের সকলে হাত উঁচুতে উঠিয়ে অসাংবিধানিক উপায়ে ক্ষমতা দখলকারি ইউনূসের অবিলম্বে অপসারণ দাবি সম্বলিত একটি ঘোষণাপত্র গৃহিত হয়। অনুষ্ঠানের সঞ্চালক স্বীকৃতি বড়ুয়া কর্তৃক উপস্থাপিত ঘোষণাপত্রের বিবরণ :
জাতির পতাকা আজ আবারো খামচে ধরেছে পুরোনো শকুন, প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ আজ আবারো সেই ১৯৭১ এর পরাজিত পাক হানাদার বাহিনীর তৎকালীন দোসর এবং তাদের সৃষ্ট নব্য হানাদারদের কবলে। বাঙালী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের নেতৃত্বে দীর্ঘ তেইশ বছরের লড়াই সংগ্রাম এবং বিপুল আত্মত্যাগের বিনিময়ে ১৯৭১ এর ১৬ ডিসেম্বর “বাংলাদেশ নামের রাষ্ট্রের সৃষ্টি হয়, লাল সবুজের পতাকার গৌরব অর্জন করে বাঙালি জাতি। ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইলের জাতিগোষ্ঠী পৃথিবীর বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়ায়। ১৯৭২ সালের ১০ ই জানুয়ারী বঙ্গবন্ধু স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করে যুদ্ধবিদ্ধস্ত বাংলাদেশকে গড়ে তোলার উদ্যোগ নেন। কিন্তু দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানকে ১৯৭৫ সালের ১৫ ই আগস্ট নির্মমভাবে হত্যা করা হয়, শিশু রাসেল কে ও সেদিন হত্যাকারীরা নির্দয় ভাবে হত্যা করতে দ্বিধা বোধ করেনি। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মধ্য দিয়েই শুরু হয় বাংলাদেশের মহান মুক্তি সংগ্রামে অংশ নেয়া মুক্তিযোদ্ধা এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী জনগণকে নিঃশেষ করার নতুন ষড়যন্ত্র ! জিয়া শাহীর আমলে সামরিক ট্রাইবুনালের নামে মুক্তিযোদ্ধা অফিসারদের অন্যায় ভাবে ফাঁসী দেয়ার ভেতর দিয়ে এই প্রক্রিয়া শুরু হয়, মুক্তিযুদ্ধের সকল চেতনাকে বিসর্জন দিয়ে পাকিস্তানী ভাবধারায় বাংলাদেশকে ফিরিয়ে নেবার সকল প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখে তৎকালীন সরকারগুলো। আবারো দীর্ঘ একুশ বছরের সংগ্রামের পথপরিক্রমায় মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সরকার গঠিত হলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে পুণঃপ্রতিষ্ঠিত করার উদ্যোগ নেয়া হয়।

২০০১ সালে আবারো মুক্তিযদ্ধের বিপক্ষ শক্তি ক্ষমতা দখল করে। ২০০৯ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী সংগঠন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে সরকার গঠিত হলে দেশের সর্বস্তরে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে সুসংগঠিত করা হয়, মূল্যায়ন করা হয় জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের, মুক্তিযোদ্ধাদের বিশেষ ভাতা প্রদান করা হয়। যে সকল মুক্তিযোদ্ধা মারা যান, তাঁদের রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় গান স্যালুট এর মাধ্যমে সম্মান জানানো হয়।

২০২৪ এর জুলাই মাসে কোটা বিরোধী আন্দোলনের নামে আবারো ১৯৭৫ এর কায়দায় দেশি বিদেশী ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে একটি নির্বাচিত সরকারকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দিয়ে মৌলবাদী জঙ্গী সশস্ত্র গোষ্ঠী ক্ষমতা দখল করে, গুড়িয়ে দেয়া হয় শহীদ মিনার, বাংলা জাতিসত্ত্বার সৃষ্টির আঁতুরঘর ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের বাড়ি সহ নানা স্থাপনা, মুক্তিযুদ্ধের শিল্পকলা এবং মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত “মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর”। দেশব্যাপী মুক্তিযোদ্ধাদের নানাভাবে হেনস্থা করা হয় , তাঁদের বাড়িঘর ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা চালানো হয়। মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবার এবং তাঁদের শুভার্থীরা রক্ষা পায়নি এসব হামলা থেকে। এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ্য, কোটাবিরোধী আন্দোলনের নামে আন্দোলনকারীরা আর যাই হোক তারা যে বাংলাদেশের স্বাধীনতা এবং সার্বভৌমত্বে বিশ্বাস করে না তা ইতিমধ্যেই প্রমাণিত হয়েছে নানাভাবে।


একাত্তরের মতন করে নারীদের সম্ভ্রমহানী করা হচ্ছে, বিরাট সংখ্যায় ধর্ষণের ঘটনা ঘটছে, মব সৃষ্টির মধ্যে দিয়ে জনমানুষের মধ্যে ব্যাপক ভীতির সঞ্চার করা হয়েছে এবং হচ্ছে। আর এই সব ঘটনাই ঘটছে অবৈধ ভাবে ক্ষমতা দখল করা, সুদখোর ইউনুস সরকারের রাষ্ট্রীয় পৃষ্টপোষকতায়। আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা ঠুঁটো জগন্নাথে পরিণত হয়েছে , সামরিক এবং আধা সামরিক বাহিনীর নাকের ডগায় নানা অপকর্ম চললেও তারা এই বিষয়ে নির্বিকার। মুখে সংবাদপত্রের স্বাধীনতার কথা বললেও গোপনে সেন্সরশিপ জারি করা হয়েছে, মিডিয়ার মুখ চেপে ধরা হচ্ছে। অতি সম্প্রতি জনৈক উপদেষ্টাকে প্রশ্ন করার দায়ে চাকরি হারিয়েছে তিনটি টিভির বেশ কজন সাংবাদিক ! এর আগেও সাংবাদিকদের অন্যায়ভাবে মামলা দিয়ে কারারুদ্ধ করা হয়েছে ! অসংখ্য বীর মুক্তিযোদ্ধাকে কারাগারে নিক্ষেপ করা হয়েছে ! আমরা আজকের এই মুক্তিযোদ্ধা সমাবেশ থেকে সকল ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। অবিলম্বে সকল মুক্তিযোদ্ধার নিঃশর্ত মুক্তি দাবী করছি। মবের সঙ্গে জড়িত সকল রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের বিচারবিভাগীয় তদন্ত দাবি করছি। মুক্তিযুদ্ধের অবমাননাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী জানাচ্ছি। বাংলাদেশের ধর্ষণসহ নারীসমাজের প্রতি ঘটে যাওয়া প্রতিটি ঘটনার বিচার দাবী করছি। বঙ্গবন্ধু ভবন, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, শহীদ মিনারসহ নানা স্থাপনায় হামলাকারীদের অবিলম্বে আইনের আওতায় আনার জোর দাবি জানাচ্ছি।

আজকের এই সমাবেশ থেকে আমরা মুক্তিযোদ্ধারা এই মর্মে ঘোষণা করতে চাই যে, ১৯৭১ এর মতন মুক্তিযোদ্ধারা প্রয়োজনে আবারো লড়াই করবে। আর আমাদের পাশে থাকবে নতুন প্রজন্মের মুক্তিযোদ্ধারা, আমাদের সন্তানেরা !!! ১৯৭১ ই বাংলাদেশের একমাত্র মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতার সংগ্রাম।

বঙ্গবন্ধুর ডাকে আমরা যেমন করে যার যা কিছু আছে, তা নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলাম, ঠিক একইভাবে আবারো জীবনপণ লড়াই করার জন্য আমরা প্রস্তুত। রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতাকে আমরা কোনোভাবেই ভুলুন্ঠিত হতে দেবোনা। ৩০ লক্ষ শহীদের আত্মদান বৃথা যেতে পারে না। ২ লক্ষ মা-বোনের হারানো সম্ভ্রম আমরা ভুলিনাই, ভুলবো না। জয় বাংলা – জয় বঙ্গবন্ধু। বাংলাদেশ চিরজীবী হোক । শেষে সবাইকে নৈশভোজে আপ‍্যায়ন করা হয় ।