নিউইয়র্ক: নিউইয়র্কের জ্যাকসন হাইটস ঈদ মেলায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় গ্লোবাল পিস অ্যামব্যাসেডর ড. আবু জাফর মাহমুদ বলেছেন, বাংলাদেশিদের বড় সম্পদ ভালোবাসা ও মানবিকতা। এই বৈশিষ্ট্য দিয়েই আমরা বিশ্বজয় করেছি। আমাদের নিজস্ব সংস্কৃতি ও মানবিক বৈশিষ্ট্যগুলো নতুন প্রজন্মের মাঝে ছড়িয়ে দিতে হবে। জ্যাকসন হাইটস্ এর রুজভেল্ট ৭৭ স্ট্রিটে বিনোদন মাল্টিমিডিয়া সার্ভিসের ব্যানারে এই মেলা অনুষ্ঠিত হয়। মেলার সহযোগিতায় ছিলেন জ্যাকসন হাইটস বাংলাদেশি বিজনেস এসোসিয়েশন।
বিনোদন মাল্টিমিডিয়ার প্রেসিডেন্ট, চ্যানেল আই এর যুক্তরাষ্ট্র প্রতিনিধি রাশেদ আহাম্মেদের সভাপতিত্বে মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট কণ্ঠশিল্পী রথীন্দ্রনাথ রায়, শহীদ হাসান, বীর মুক্তিযোদ্ধা রেজাউল বারী উপস্থিত ছিলেন। মেলায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সাপ্তাহিক আজকাল সম্পাদক, ওল্ড এজ হোম কেয়ারের প্রেসিডেন্ট শাহ নেওয়াজ, অ্যাটর্নি মঈন চৌধুরী, নিউইয়র্ক সিটি মেয়র দপ্তরের এশিয়ান এ্যাফেয়ার্স ভলেন্টিয়ার ফাহাদ সোলাইমান, শাহ গ্রুপের সত্তাধিকারী শাহ্ জে চৌধুরী। দুপুরে মেলার প্রথম পর্বে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অ্যাসেমব্লিওম্যান ক্যাটালিনা ক্রূজ।


বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের মাউন্টেন ব্যাটালিয়ন কমান্ডার, যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশ সমাজে হোম কেয়ার সেবার পাথিকৃৎ, বাংলা সিডিপ্যাপ ও অ্যালেগ্রা হোম কেয়ারের প্রেসিডেন্ট এণ্ড সিইও এবং পিপল ইউনাইটেড ফর প্রোগ্রেস এর প্রেসিডেন্ট আবু জাফর মাহমুদ বলেন, এখানে আমরা সবাই বাংলাদেশি আমেরিকান। বাংলাদেশি জীবনের সবকিছুই আমাদের অস্তিত্ব। এসব নিয়েই আমরা আমেরিকান। এগুলো বাদ দিয়ে আমরা আমেরিকান নই। ভালোবাসাটা আমরা বাংলাদেশ থেকে শিখে এসেছি। ওই ভালোবাসাটা নিয়েই এখানে আমরা হোম কেয়ার করছি। সেবাদানকারীদেরকে বেচাকেনা করা যায় তখন সেখানে আর মানবতা যখন ব্যবসা হয়ে যায় তখন সেখানে আর ভালোবাসা থাকে না। আমাদের সমাজের যা কিছু সৌন্দর্য্য সেটিসহই আমরা আমেরিকান।


তিনি তরুণ শিল্পী কলাকুশলীদের উদ্দেশ্যে বলেন, এই তরুণ বয়সে যেভাবে স্পন্দিত হৃদয়ে তোমরা সঙ্গীত নৃত্য ভালোবাসো, দেশপ্রেম যেন তোমাদের অন্তরে থাকে। দেশটি যদি থাকে তাহলে পূর্ব পুরুষের সঙ্গে সম্পর্ক থাকবে। তোমরা একদিন বাবা হবে দাদা নানা হবে। সেদিন এই সম্পর্কের মর্যাদা অনেক বেশি উপলব্ধি করবে। আর যদি দেশপ্রেম না থাকে নিজেরাও অন্যান্য জাতির মতো হারিয়ে যাবে। তা আমরা চাই না।
আবু জাফর মাহমুদ বাংলাদেশের প্রসঙ্গ তুলে ধরে বলেন, আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে আমরা বাংলাদেশের যা কিছু দুর্দশা সব বদলে দেবার কথা বলেছিলাম। আঠারো বছর বয়সে আমি বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে মাউন্টেন ব্যাটালিয়ন কমা- করেছি আর এখন একটা মাত্র ব্যাটালিয়ন নয়, পুরো বাংলাদেশ কমা- করবো, ইনশাল্লাহ। আমরা ফিরে আসবো আবার। আবার ফেরাবো বাংলাদেশকে। বাংলাদেশ যুদ্ধ স্বাধীন করার পর যে স্বপ্ন ছিল, আবার সেখানে পৌঁছে যাবে। বাংলাদেশ পৌঁছে যাবে সফলতায়।
ড. মাহমুদ বলেন, আমেরিকা আমাদের মিত্র। পৃথিবীর সবচেয়ে বড় শক্তি আমাদের মিত্র। এই মিত্র আজ বাংলাদেশের সাথে। সব বাংলাদেশিদের সাথে। এই মনোবল সহ আমরা আজ আমেরিকান বাংলাদেশি। এই মনোবলই আমাদেরকে সামনের দিকে এগিয়ে নেবে।
তিনি বলেন, জাতির স্বাধীন জীবন যাপনের লক্ষ্যে জীবন উৎসর্গ করার প্রতিজ্ঞাই ছিল মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের তাগিদ। মুক্তিযুদ্ধের আগে আমরা কেউ অস্ত্র হাতে নিইনি, ইউনিফরম পরিনি, যুদ্ধের কথা ভাবতেও পারিনি। যখন আমরা প্রকৃত ভালোবাসায় অন্ধ হয়ে যাই, যখন আমরা শক্তির ভেতর মানবিকতা ছাড়া আর কিছুই দেখি না, তখন দেশের স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধই অনিবার্য হয়ে ওঠে।
ড. মাহমুদ ঈদুল আজহার শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, ধর্মের সবচেয়ে বড় শিক্ষা মানুষকে ভালোবাসা। কোনো মানুষকে যেন কষ্ট না দেয়া। এই একই শিক্ষা আমরা বাংলাদেশ থেকে পেয়েছি। আচরণ ও মনোভাবের এই সৌন্দর্য ছাড়া আমাদের কোনো অস্তিত্ব নেই। মনে রাখতে হবে অন্য প্রাণি থেকে মানুষের পার্থক্যের জায়গাটিই হচ্ছে দেশপ্রেম।
মেলায় বেশ কয়েকটি বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠান রকমারি পণ্যের স্টল সাজিয়ে বসে। বিনোদন মাল্টিমিডিয়া’র পক্ষ থেকে বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে বেশ কয়েকজনকে বিশেষ সম্মাননা প্রদান করা হয়। মেলার মিডিয়া পার্টনার ছিল চ্যানেল আই, বিশ্ববাংলা ২৪ টিভি ও সাপ্তাহিক আজকাল। মেলায় প্রবাসের সকল প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন।