আগাম করে কেউ বলেও নাই তাঁকে জেলে দেব, ফাঁসি দেব, সেটাও সঠিক নয়। যতই অপরাধ করুক, সে বাংলাদেশের নাগরিক। নাগরিক হিসেবে তাঁর যে অধিকার আছে, সেটা তো থাকবে। বিচারব্যবস্থাই এটি সম্পন্ন করবে।’
কালের কণ্ঠে ‘বেনজীরের ঘরে আলাদীনের চেরাগ’ ও ‘বনের জমিতে বেনজীরের রিসোর্ট’ শিরোনামে গত ৩১ মার্চ ও ২ এপ্রিল পৃথক দুটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনে বেনজীর আহমেদের বিপুল সম্পদ অর্জনের তথ্য উপস্থাপন করা হয়। প্রতিবেদন দুটি প্রকাশের পর দেশে-বিদেশে ব্যাপক সাড়া পড়ে। মূলত এর পরই দুদক বেনজীর এবং তাঁর পরিবারের সদস্যদের অবৈধ সম্পদ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয়।
গত ২৪ মে দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালত বেনজীর আহমেদ, তাঁর স্ত্রী, দুই মেয়ে এবং এক স্বজনের নামে থাকা ৩৪৫ বিঘা (১১৪ একর) জমি ক্রোক বা জব্দের আদেশ দেন। একই দিন বেনজীর, তাঁর স্ত্রী-সন্তানদের নামে বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংকে থাকা ২৩টি ব্যাংক হিসাব (অ্যাকাউন্ট), চারটি ক্রেডিট কার্ড ও ছয়টি বিও অ্যাকাউন্ট অবরুদ্ধের আদেশ দেওয়া হয়। এরপর গত ২৬ মে একই আদালত বেনজীর আহমেদের স্ত্রী জীশান মীর্জার নামে থাকা মাদারীপুরে ২৭৬ বিঘা জমি এবং বেনজীর পরিবারের নামে থাকা গুলশানের চারটি ফ্ল্যাটও জব্দের আদেশ দেন। একই দিন বেনজীর, তাঁর স্ত্রী-সন্তানদের নামে থাকা ১৯টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও তিনটি বিও হিসাব এবং ৩০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র অবরুদ্ধের আদেশ দেওয়া হয়।
এসব অভিযোগের বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বেনজীর আহমেদকে গত বৃহস্পতিবার (৬ জুন) সেগুনবাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে উপস্থিত থাকতে নোটিশ পাঠিয়েছিল সংস্থাটি। তবে তার আগে গত বুধবার আইনজীবীর মাধ্যমে ১৫ দিন সময় চেয়ে আবেদন করেন বেনজীর।
অন্যদিকে গত বৃহস্পতিবারই ঢাকা মহানগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ মোহাম্মদ আসসামছ জগলুল হোসেন বেনজীর আহমেদ, তাঁর স্ত্রী জীশান মীর্জা, বড় মেয়ে ফারহিন রিসতা বিনতে বেনজীর, মেজো মেয়ে তাহসিন রাইসা বিনতে বেনজীরসহ তাঁদের মালিকানায় থাকা প্রতিষ্ঠানের সম্পদ দেখভাল ও রক্ষণাবেক্ষণে প্রশাসক নিয়োগের আদেশ দিয়েছেন। আদালতের এই আদেশের মাধ্যমে বেনজীর পরিবারের গোপালগঞ্জ, মাদারীপুর, কক্সবাজার ও সাভারের সম্পত্তি, রিসোর্ট, স্থাপনা, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ রাষ্ট্রের হাতে এলো। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) উপপরিচালক হাফিজুল ইসলামের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে প্রশাসক নিয়োগের আদেশ দেন আদালত।