ঢাকা: মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, বরেণ্য রাজনীতিবিদ পঙ্কজ ভট্টাচার্যের প্রতি শেষ শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন রাজনৈতিক সহযোদ্ধা, স্বজনসহ সর্বস্তরের মানুষ।
আজ মঙ্গলবার বিকেলে রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদনের আগে এই বীর মুক্তিযোদ্ধার প্রতি রাষ্ট্রীয় সম্মান প্রদর্শন করা হয়। শ্রদ্ধা নিবেদনের পর রাজধানীর পোস্তগোলা মহাশ্মশানে তার শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়।
প্রগতিশীল আন্দোলনের অন্যতম পুরোধা ও ঐক্য ন্যাপের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি পঙ্কজ ভট্টাচার্য ২৪ এপ্রিল ভোররাতে রাজধানীর হেলথ অ্যান্ড হোপ হাসপাতালে শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। এরপর তার মরদেহ শমরিতা হাসপাতালের হিমঘরে রাখা হয়। সেখান থেকে মরদেহ শহীদ মিনারে চত্বরে নেওয়া হয় বিকেল ৪টায়। আগে থেকে সেখানে সর্বস্তরের মানুষ অপেক্ষা করছিল। এরপর মরদেহে ঐক্য ন্যাপ ও জাতীয় পতাকায় মুড়ে দেওয়া হয়।
তারপর ঢাকা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাকে রাষ্ট্রীয় সম্মান (গার্ড অব অনার) প্রদান করা হয়। অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট হেদায়েতুল ইসলামের নেতৃত্বে ডিএমপির চৌকস দল বিউগলে করুণ সুর তোলে। এ সময় অশ্রুসজল হয়ে ওঠে মৃতের স্বজন ও রাজনৈতিক সহযোদ্ধা অনেকের চোখ।
রাষ্ট্রীয় শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে মরদেহ রাখা হয় শহীদ মিনার চত্বরের অস্থায়ী মঞ্চে। এরপর এক মিনিট নীরবতা পালন ও শান্তি সংগীত পরিবেশনের পর ফুলেল শ্রদ্ধা নিবেদন শুরু হয়। শুরুতে শ্রদ্ধা নিবেদন করে পরিবার, ঐক্য ন্যাপ ও সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন। এরপর বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক-সাংস্কৃতিক ও নাগরিক সংগঠন এবং বিশিষ্টজনরা শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
আওয়ামী লীগের পক্ষে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন প্রেসিডিয়াম সদস্য মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন ও নূরুল ইসলাম নাহিদ, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, সংস্কৃতিবিষয়ক সম্পাদক অসীম কুমার উকিলসহ অন্য নেতারা।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সাবেক মন্ত্রী আব্দুল্লাহ আল নোমান ও খায়রুল কবির খোকনের নেতৃত্বে বিএনপি, ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে গণফোরামের একাংশ ও মোস্তফা মহসীন মন্টুর নেতৃত্বে অপর অংশ এবং কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক বজলুর রশীদ ফিরোজের নেতৃত্বে বাম গণতান্ত্রিক জোট শ্রদ্ধা নিবেদন করে।
পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করে রাশেদ খান মেনন ও ফজলে হোসেন বাদশার নেতৃত্বে বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টি, মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম ও রুহিন হোসেন প্রিন্সের নেতৃত্বে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), সংসদ সদস্য আফরোজা হক রীনার নেতৃত্বে জাসদ, সাবেক মন্ত্রী দিলীপ বড়ুয়ার নেতৃত্বে সাম্যবাদী দল এবং বাংলাদেশ জাসদ, বাসদ, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, গণসংহতি আন্দোলন, গণতন্ত্রী পার্টি, কৃষক লীগ, ক্ষেতমজুর সমিতি, কৃষক সমিতি, ছাত্র ইউনিয়ন, জাসদ ছাত্র লীগ, রিকশা-ভ্যান শ্রমিক ইউনিয়ন ও ইমারত নির্মাণ শ্রমিক ইউনিয়নের নেতারা।
এ ছাড়াও শ্রদ্ধা নিবেদন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান, অধ্যাপক ড. সৈয়দ আনোয়ার হোসেনের নেতৃত্বে সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) সাবেক সভাপতি মনজুরুল আহসান বুলবুলের নেতৃত্বে সাংবাদিক নেতা, শরীফ জামিলের নেতৃত্বে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা), সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, আদিবাসী ইউনিয়ন, আদিবাসী ফোরাম, মহিলা পরিষদ, নারী প্রগতি সংঘ, জাতীয় কবিতা পরিষদ, উদীচী, খেলাঘর, সাম্প্রদায়িকতা ও জঙ্গিবাদ বিরোধী মঞ্চ, সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন), দুস্থ স্বাস্থ্য কেন্দ্র, জনউদ্যোগ, বারসিকসহ অন্যান্য সংগঠন।
শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে গণমাধ্যমকে দেওয়া প্রতিক্রিয়ায় তথ্য মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, 'লোভ-লালসার ঊর্ধ্বে থাকা আজীবন সংগ্রামী রাজনীতিবিদ পঙ্কজ ভট্টাচার্য। যিনি পদ-পদবির পেছনে ছোটেননি। রাজনীতিকে ব্রত হিসেবেই নিয়েছিলেন। পঙ্কজ ভট্টাচার্য ভাষাসংগ্রাম থেকে মুক্তিযুদ্ধ, সকল গণ-আন্দোলন ও সংগ্রামে অংশ নিয়েছেন। স্বাধীনতার পরও গণতান্ত্রিক আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা রেখেছেন। তার মৃত্যুতে রাজনৈতিক অঙ্গনে বড় শূন্যতা তৈরি হয়েছে।' তার জীবন থেকে শিক্ষা গ্রহণের জন্য সকলের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
১৯৩৯ সালের ৬ আগস্ট চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলার নোয়াপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন পঙ্কজ ভট্টাচার্য। তিনি ১৯৫২ সালে ২২ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম সরকারি কলেজ থেকে ভাষা আন্দোলনের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে মিছিলে অংশগ্রহণের মাধ্যমে রাজনৈতিক জীবন শুরু করেন। সেই থেকে তিনি আমৃত্যু মিছিলে, সংগ্রামে, মুক্তিযুদ্ধে ও সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলনে নিবেদিত ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধে ন্যাপ-ছাত্র ইউনিয়ন-কমিউনিস্ট পার্টির যৌথ গেরিলা বাহিনীর অন্যতম সংগঠক তিনি।