ইসি নির্বাচন ব্যবস্থাপনা শাখা জানিয়েছে, প্রার্থীর মৃত্যুর কারণে নওগাঁ-২ আসনের নির্বাচন স্থগিত করায় রবিবার ২৯৯টি আসনে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনে আগের রাতে কারচুপি রোধ করতে এবারই প্রথম প্রথম বেশির ভাগ কেন্দ্রে ভোটের দিন সকালে ব্যালট পেপার যাচ্ছে। আগামীকাল ভোটের দিন সকালে ৯৩ শতাংশ কেন্দ্রে, অর্থাৎ ৩৯ হাজার ৬১টি কেন্দ্রে ব্যালট পেপার যাবে। আর ৭ শতাংশ কেন্দ্রে, অর্থাৎ দুই হাজার ৯৬৪ কেন্দ্রে শনিবার ব্যালট পেপার পৌঁছাবে। দুর্গম এলাকাগুলোতে আজ শনিবার ব্যালট পেপার পৌঁছাবে। কোথাও কোথাও হেলিকপ্টারে ব্যালট পেপার পাঠানো হচ্ছে।
এই নির্বাচনে ভোটকেন্দ্র ৪২ হাজার ১৪৮টি এবং ভোটকক্ষ দুই লাখ ৬১ হাজার ৫৬৪টি। এসব কেন্দ্রে সুষ্ঠুভাবে ভোটগ্রহণ সম্পন্ন করতে এরই মধ্যে ৯ লাখ ৯ হাজার ৫২৯ জন ভোট গ্রহণকারী কর্মকর্তাকে (প্রিজাইডিং অফিসার, সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার ও পোলিং অফিসার) প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। এতে প্রিজাইডিং অফিসার চার লাখ ছয় হাজার ৩৬৪ জন, সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার দুই লাখ ৮৭ হাজার ৭২২ জন এবং পোলিং অফিসার পাঁচ লাখ ৭৫ হাজার ৪৪৩ জন রয়েছেন।
এই নির্বাচনে ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ পাচ্ছেন ১১ কোটি ৯৩ লাখ ৩২ হাজার ৯৩৪ জন, যার মধ্যে পুরুষ ভোটারের সংখ্যা ছয় কোটি পাঁচ লাখ ৯২ হাজার ১৯৭, নারী ভোটারের সংখ্যা পাঁচ কোটি ৮৭ লাখ ৩৯ হাজার ৮৮৯ এবং তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার আছেন ৮৪৯ জন। এবার নারীর চেয়ে ১৮ লাখ ৫২ হাজার ৩০৮ পুরুষ ভোটার বেশি। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পুরুষ ভোটার ছিল পাঁচ কোটি ২৫ লাখ ৭২ হাজার ৩৬৫ জন এবং নারী ভোটার ছিল পাঁচ কোটি ১৬ লাখ ৬৬ হাজার ৩১২ জন। নারীর চেয়ে সে সময় ৯ লাখ ছয় হাজার ৫৩ জন পুরুষ ভোটার বেশি ছিল।
এই নির্বাচনে আদালতের নির্দেশনায় বিভিন্নজনের প্রার্থিতা ফিরে পাওয়ার পর মোট প্রার্থী দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৯৭০ জন। এর মধ্যে ৯০ জন নারী প্রার্থী, আর ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর রয়েছেন ৭৯ জন প্রার্থী। নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধিত ২৮টি রাজনৈতিক দল প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অংশ নিচ্ছে। ওই দলগুলোর প্রার্থীর সংখ্যা এক হাজার ৫৩৪। আর স্বতন্ত্র প্রার্থী ৪৩৬ জন। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের প্রার্থীর সংখ্যা ২৬৬। আর বিরোধী দল জাতীয় পার্টির ২৬৫ জন প্রার্থী রয়েছেন। এ ছাড়া তৃণমূল বিএনপির ১৩৫ জন, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির ১২২ জন, বাংলাদেশ কংগ্রেসের ৯৬ জন, বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির ৭৯ জন, জাসদের ৬৬ জন, সাংস্কৃতিক মুক্তিজোটের ৬৩ জন, বাংলাদেশ জাতীয়বাদী আন্দোলনের ৫৬ জন, বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্টের ৪৫ জন, ইসলামী ঐক্যজোটের ৪২ জন, ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশের ৩৯ জন, তরীকত ফেডারেশনের ৩৮ জন, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের ৩৭ জন, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের ৩০ জন, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির ২৬ জন, জাকের পার্টির ২১ জন, গণফ্রন্টের ২১ জন, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির ১৬ জন, জাতীয় পার্টি-জেপির ১৩ জন, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের ১১ জন, বিকল্পধারা বাংলাদেশের ১০ জন, গণতন্ত্রী পার্টির ১০ জন, গণফোরামের ৯ জন, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির পাঁচজন, বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির (ন্যাপ) পাঁচজন, বাংলাদেশ সাম্যবাদী দলের চারজন এবং বাংলাদেশ মুসলিম লীগের (বিএমএল) চারজন প্রার্থী রয়েছেন।
গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের লক্ষ্যে কঠোর অবস্থানে ইসি
নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করতে শুরু থেকে ইসি কঠোর অবস্থানে রয়েছে। নির্বাচনে রেকর্ডসংখ্যক শোকজ, তলব, সতর্ক ও জরিমানার পরও প্রার্থীদের বাগে আনতে পারছে না ইসি। এর পরও সারা দেশে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের হুমকি-ধমকি, হামলা, পোস্টার ছিঁড়ে ফেলাসহ নানা আচরণবিধি লঙ্ঘন করে চলেছেন অনেক প্রার্থী। এসব অভিযোগে শুক্রবারও কয়েকজন প্রার্থী ও তাঁদের সমর্থককে শোকজ করেছে নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটি। নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গের অভিযোগে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, স্বতন্ত্র প্রার্থীসহ তাঁদের সমর্থকদের এ পর্যন্ত ৫৮৯টি শোকজ ও তলব নোটিশ দিয়েছে নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটি। এর মধ্যে ঢাকা অঞ্চলে সর্বোচ্চ ১৩১টি এবং সিলেট অঞ্চলে সর্বনিম্ন ২১টি নোটিশ দেওয়া হয়। নোটিশের জবাবে এ পর্যন্ত ৩৮৪ প্রার্থী ও তাঁদের সমর্থক অনুসন্ধান কমিটির কাছে সরাসরি অথবা প্রতিনিধির মাধ্যমে লিখিত ব্যাখ্যা দিয়েছেন। এ পর্যন্ত ইসির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১০ প্রার্থীসহ ৬০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন সংশ্লিষ্ট নির্বাচন কর্মকর্তা। প্রার্থী ও তাঁদের সমর্থকদের সর্বোচ্চ এক লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানা করা হয়েছে। একজন স্বতন্ত্র প্রার্থীর প্রার্থিতা বাতিল করা হয়েছে। যদিও ওই প্রার্থী উচ্চ আদালতে আপিল করে প্রার্থিতা ফিরে পেয়েছেন।
এ বিষয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘আমরা ছয় শর মতো অভিযোগ পেয়েছি। এর মধ্যে প্রায় ৪০০ অভিযোগ এন্টারটেইন করেছি। এন্টারটেইন করে নির্বাচন কমিশন কার্যালয় থেকে কী করণীয় বা কী পদক্ষেপ গৃহীতব্য সেটা আমরা সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং অফিসারদের জানিয়েছি। বিধি অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।’