খবর প্রকাশিত: ২৯ নভেম্বর, ২০২৩, ০৮:১৩ এএম
আর্ন্তজাতিক ডেস্ক: ভারতীয়দের জন্য এটা ছিল একটা স্বপ্নের মুহূর্ত। অধীর অপেক্ষা নিয়ে তারা ক্ষণ গুনছিলেন। প্রথমবারের মতো চাঁদের রহস্যময় দক্ষিণ মেরুর ধূসর পৃষ্ঠে নামতে যাচ্ছে চন্দ্রযান-৩-এর ল্যান্ডার ‘বিক্রম’। গতকাল বুধবার টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচার করা হচ্ছিল এ অবতরণের দৃশ্য; চলছিল সময় গণনা। অবশেষে ভারতীয় সময় বিকেল ৬টা ৪ মিনিটে আসে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ; ‘বিক্রম’ স্পর্শ করে চাঁদের পৃষ্ঠ। নতুন ইতিহাস রচনার আনন্দে উৎসবে মেতে ওঠে পুরো ভারত। বাসাবাড়ি, অলিগলিতে শুরু হয় উদযাপন ও উল্লাস।
ল্যান্ডার ‘বিক্রম’কে চাঁদে পাঠায় ভারতের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইসরো। চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে শেষ মুহূর্তের অবতরণে সময় লেগেছে ১৯ মিনিট। ওই এলাকায় এর আগে কোনো দেশের চন্দ্রযান নামতে পারেনি। এ কারণে এটি ছিল এক অনন্য ঘটনা। রাশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের পর চতুর্থ দেশ হিসেবে ভারত চাঁদে সফল অভিযান চালাল। অবতরণের পর ইসরো এক টুইটে লিখেছে, ‘ভারত, আমি আমার গন্তব্যে পৌঁছে গেছি।’ বিবিসি জানায়, ছয় চাকার ‘বিক্রম’ চাঁদের দক্ষিণ মেরুর রহস্যের জট খুলবে। এর অনুর্বর পৃষ্ঠে ঘুরতে ঘুরতে সংগ্রহ করবে ছবি ও তথ্য। এগুলো পৃথিবীতে ইসরোর বিজ্ঞানীদের কাছে পাঠাবে। দক্ষিণ মেরুর ওই অন্ধকার পৃষ্ঠে জমাট বাঁধা পানি থাকতে পারে বলে অনেক দিন ধরে ধারণা করে আসছিলেন বিজ্ঞানীরা।
‘বিক্রম’-এর অবতরণ নিয়ে কৌতূহলী দৃষ্টিতে অপেক্ষা করছিলেন বিজ্ঞানীরা। ইসরোর এক বিজ্ঞানী গণমাধ্যমকে বলেন, শেষ সময়টা ছিল শ্বাসরুদ্ধকর। তারা অধীর আগ্রহে অবতরণের অপেক্ষা করছিলেন। শুধু বিজ্ঞানীরাই নন, পুরো ভারতের মানুষ এ দৃশ্য দেখার জন্য পর্দায় চোখ রেখেছিলেন। শেষ মুহূর্তের দৃশ্য দেখতে খোলা অনেক স্থানে পর্দা বসানো হয়। চলছিল ক্ষণ গণনা ও প্রার্থনা। ব্রিকস সম্মেলনে যোগ দিতে দক্ষিণ আফ্রিকায় আছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তিনিও এ দৃশ্য সরাসরি দেখছিলেন। অবতরণের পরপরই মোদি জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন। তিনি এটাকে ‘ঐতিহাসিক দিন’ উল্লেখ করে ইসরোর বিজ্ঞানীদের ধন্যবাদ জানান।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণে বলেন, ‘আমি হয়তো দক্ষিণ আফ্রিকায় আছি; কিন্তু আমার হৃদয় সব সময় চন্দ্রযান অভিযানের সঙ্গে ছিল। এটা শুধু ভারতের সফলতা নয়, এটা পুরো মানবজাতির সফলতা।’ তিনি বলেন, কোনো দেশ এর আগে সেখানে (চাঁদের দক্ষিণ মেরু) যেতে পারেনি। তিনি বলেন, ‘আমরা মাটিতে পরিকল্পনা করেছি, আর তা বাস্তবায়ন করেছি চাঁদে। ভারত এখন চাঁদে পৌঁছে গেছে।’ মোদি বলেন, ‘এ ধরনের ঐতিহাসিক মুহূর্ত আমাদের গর্বিত করে। এটা ভারতের নতুন যুগের সূচনা।’
চন্দ্রযান-৩-এর সফল অবতরণের জন্য পুরো ভারতের মানুষ প্রার্থনায় মগ্ন হয়েছিলেন। বিভিন্ন ধর্মীয় উপাসনালয়ের পাশাপাশি দরগাহে বিশেষ দোয়ার আয়োজন ছিল। টাইমস অব ইন্ডিয়া জানায়, চন্দ্রযান-৩-এর সফল অবতরণের জন্য রাজস্থানের আজমির শরিফ দরগায় বিশেষ মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়। গত সপ্তাহে চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে অবতরণের জন্য লুনা-২৫ নামে মহাকাশযান পাঠিয়েছিল রাশিয়া। এটি গত শনিবার চাঁদে বিধ্বস্ত হয়। এর আগে ২০১৯ সালে ভারত চাঁদের দক্ষিণ মেরুর কাছে অবতরণের উদ্দেশ্যে চন্দ্রযান-২ পাঠিয়েছিল। কিন্তু তখন তারা সাফল্যের মুখ দেখেনি। এ কারণে চন্দ্রযান-৩-এর সাফল্যকে বড় করেই দেখছেন গবেষকরা। ইউরোপীয় স্পেস এজেন্সিতে কর্মরত নটিংহ্যাম ইউনিভার্সিটির গবেষক ম্যাগি লিউ বলেন, এটি অসাধারণ; বিশাল অর্জন। চাঁদের ওই অংশটিতে অবতরণ অনেক জটিল। এটি খুব কঠিন জায়গা।
গত ১৪ জুলাই ভারতের অন্ধ্রপ্রদেশের শ্রীহরিকোটার সতীশ ধাওয়ান মহাকাশকেন্দ্র থেকে চন্দ্রযান-৩ উৎক্ষেপণ করা হয়। চন্দ্রযান-৩-এর ল্যান্ডারের নাম ‘বিক্রম’ এবং রোভারের নাম ‘প্রজ্ঞান’। ল্যান্ডারটি উচ্চতায় প্রায় দুই মিটার; ওজন ১ হাজার ৭০০ কেজির বেশি। পুরো অভিযান পরিচালনায় ভারতের খরচ হয়েছে ৬১৫ কোটি রুপি, যা আগেরটি, অর্থাৎ চন্দ্রযান-২-এর বাজেট থেকে অনেকটা কম। সফল অবতরণের পর প্রত্যাশা থাকবে, চাঁদের দক্ষিণ মেরুর সব রহস্যের জট খুলে দেবে ল্যান্ডার ‘বিক্রম’।