ইউক্রেনে রুশ বাহিনীর সামরিক অভিযান সমর্থন না করায় রাশিয়া জ্বালানি গ্যাস ইস্যুতে ইউরোপীয় দেশগুলোর জোট ইউরোপীয় ইউনিয়নকে (ইইউ) ‘ব্ল্যাকমেইল’ করছে বলে অভিযোগ করেছেন জোটের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লেইন। এই ব্ল্যাকমেইলের ‘উপযুক্ত জবাব’ দিতে ইইউ ইসরায়েল থেকে গ্যাস কিনতে চায় বলেও উল্লেখ করেছেন তিনি।
সোমবার ইসরায়েল সফরে গিয়েছেন ইইউ প্রেসিডেন্ট। সেখানে দেশটির দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর বিরশেবায় বেন গুরিয়ন বিশ্ববিদ্যালয়ে দেওয়া এক ভাষণে ভন ডার লেইন বলেন, ‘যুদ্ধের শুরু থেকে এ পর্যন্ত পোল্যান্ড, বুলগেরিয়া ও নেদারল্যান্ডসে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে রাশিয়া। ইউক্রেনকে সমর্থন করার কারণে এভাবে আমাদের ওপর প্রতিশোধ নিচ্ছে দেশটি।’
‘কিন্তু রাশিয়ার ব্ল্যাকমেইলের দিন শেষ, আমরাও রুশ জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর নির্ভরতা কমাতে ইচ্ছুক; আর এ কারণেই ইসরায়েলের সঙ্গে জ্বালানি সহযোগিতা বাড়াতে চায় ইইউ।’
ইতোমধ্যে সোমবার ইসরায়েলের জ্বালানিমন্ত্রী ক্যারিন এলহারারের সঙ্গে বৈঠক করেছেন উরসুলা। সেখানে ইউরোপে গ্যাস রপ্তানি করতে ইসরায়েলকে প্রস্তাব দিয়েছেন তিনি। এক্ষেত্রে দু’টি সম্ভাব্য সরবরাহ রুটের বিষয়ে উল্লেখ করেছেন উরসুলা।
মিশরে গ্যাস রপ্তানি করে ইসরায়েল। ইইউ প্রেসিডেন্টের প্রস্তাব অনুযায়ী, যে পাইপলাইনে ইসরায়েল থেকে মিশরে গ্যাস সরবরাহ করা হয়, তা আরও বর্ধিত করে ভূমধ্যসাগরের তলদেশ দিয়ে ইউরোপে গ্যাস সরবরাহ করা সম্ভব।
দ্বিতীয় প্রস্তাব অনুযায়ী, পাইপলাইনের মাধ্যমে তুরস্কে গ্যাস পাঠাতে পারে ইসরায়েল। সেখান থেকে ইইউয়ের সদস্যদেশগুলোতে গ্যাস সরবরাহ করা হবে।
এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যদি তুরস্ক থেকে পাইপলাইনের মাধ্যমে ইসরায়েলের গ্যাস নিতে হয়, সেক্ষেত্রে পাইপলাইন নির্মাণ বাবদ ব্যায় হবে ১৫০ কোটি ডলার; এতে এই প্রকল্প নির্মাণে সময় লাগবে দুই থেকে তিন বছর।
জ্বালানি জন্য ইউরোপ রাশিয়ার ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল ইউরোপ। দেশটিতে মোট জ্বালানি গ্যাসের চাহিদার ৩০ শতাংশের যোগান আসে রাশিয়া থেকে।
ইউরোপের দীর্ঘ শীতকালে বাসাবাড়ি, কর্মস্থল উষ্ণ রাখতে দিয়ে রুম হিটারের ব্যবহার হয়, তার জন্য ব্যবহৃত গ্যাসের ৩০ শতাংশের বেশি যোগান এতদিন আসত রাশিয়া থেকে। তবে সম্প্রতি ইউক্রেন যুদ্ধের জেরে রাশিয়ার জ্বালানির ওপর নির্ভরতা কমাতে চাইছে ইউরোপ।
ইইউ প্রেসিডেন্টে প্রস্তাবে যদিও এখন পর্যন্ত সায় দেয়নি ইসরায়েল, তবে দেশটি চাইলেই এক্ষেত্রে অন্তত কয়েক দশকের জন্য রাশিয়ার বিকল্প হয়ে উঠতে পারে।
কারণ, ইসরায়েলের অন্তত ১ লাখ কোটি (১ ট্রিলিয়ন) ঘণমিটার জ্বালানি গ্যাসের মজুত রয়েছে; এবং দেশটির সরকারি হিসেব অনুযায়ী, অভ্যন্তরীণ প্রয়োজনে আগামী তিন দশকে বড়জোর ৩ হাজার কোটি ঘণমিটার গ্যাস ব্যাবহৃত হবে ইসরায়েলে।