চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তাদের সাম্প্রতিক কিছু মন্তব্যে দুই দেশের শুল্কযুদ্ধ ও বাণিজ্যযুদ্ধ অবসানের আভাস পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন বিশ্লেষকরা। গতকাল বুধবার এএফপির প্রতিবেদনে এ বিষয়টি উল্লেখ করা হয়।
চীন গতকাল জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য আলোচনার দুয়ার খোলা। এর এক দিন আগেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প চীনের পণ্য আমদানিতে আরোপিত শুল্ক ‘উল্লেখযোগ্য হারে’ কমানোর দিকে ইঙ্গিত দেন।
চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র গুয়ো জিয়াকুন বেইজিংয়ের এক দৈনিক সংবাদ সম্মেলনে গতকাল বলেন, ‘চীন আরো আগেই উল্লেখ করেছে যে শুল্কযুদ্ধ ও বাণিজ্যযুদ্ধে কেউ জয়ী হয় না। (যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে) আলোচনার দরজা খোলা আছে।’
এর আগে চীনের প্রেসিডেন্ট শি চিনপিং হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছিলেন, ‘শুল্ক আরোপের উদ্যোগ সব দেশের স্বার্থ পরিপন্থী। আজারবাইজানের প্রেসিডেন্ট ইলহাম আলিয়েভের সঙ্গে বৈঠকে শি মন্তব্য করেন, বাণিজ্যযুদ্ধ সব দেশের বৈধ অধিকার ও স্বার্থকে ক্ষুণ্ন করে, বহুপক্ষীয় বাণিজ্যিক ব্যবস্থার ক্ষতি করে এবং সার্বিকভাবে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করে।
এমন সময় শি এই মন্তব্য করলেন যখন বিশ্বের সবচেয়ে বড় দুই অর্থনৈতিক ক্ষমতাসম্পন্ন দেশের মধ্যে সব ধরনের সম্পর্ক কার্যত স্থবিরতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। বেইজিং-ওয়াশিংটন সাম্প্রতিক সময়ে একে অন্যের রপ্তানি পণ্যের ওপর শাস্তিমূলক ও অযৌক্তিক শুল্ক আরোপ করেছে।
চীন থেকে আসা বেশির ভাগ পণ্যের ওপর ১৪৫ শতাংশ শুল্ক চাপিয়েছেন ট্রাম্প। অন্যদিকে চীনও মার্কিন পণ্য আমদানিতে ১২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে।
এই পরিস্থিতিতে গত মঙ্গলবার আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ২০২৫ সালের বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস ৩.৩ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২.৮ শতাংশ করেছে। তবে গতকাল ট্রাম্প এবং তাঁর প্রশাসনের কর্মকর্তাদের ইতিবাচক বক্তব্যের পর বৈশ্বিক পুঁজিবাজারে খানিকটা স্বস্তি ফিরে এসেছে। ট্রাম্প এবং তাঁর কর্মকর্তাদের বক্তব্যে শিগগিরই বেইজিং-ওয়াশিংটন বাণিজ্যচুক্তির আভাস পেয়েছেন বিশ্লেষকরা।
গত মঙ্গলবার বিনিয়োগকারীদের উদ্দেশে দেওয়া বক্তব্যে মার্কিন অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট জানান, চীনের সঙ্গে বাণিজ্যযুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়।
বেসেন্টের মন্তব্যের পর ট্রাম্প স্বীকার করেন, চীনের আমদানি পণ্যে আরোপ করা শুল্ক ‘অনেক বেশি’ এবং শিগগিরই ‘এটা উল্লেখযোগ্য আকারে কমে আসবে’। তখন (শুল্ক) বর্তমান হারের ধারেকাছেও থাকবে না বলে যোগ করেন ট্রাম্প। ট্রাম্প আরো বলেন, ‘তবে এই শুল্ক একেবারে শূন্যতেও নেমে আসবে না। পরিশেষে তাদের চুক্তিতে আসতেই হবে, কারণ চুক্তি না করলে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তারা ব্যবসা করতে পারবে না।’
এদিকে সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প আরো জানান, ফেডারেল রিজার্ভের চেয়ারম্যান জেরোম পাওয়েলকে বরখাস্ত করারও কোনো পরিকল্পনা নেই তাঁর। তবে তিনি চান জেরোম পাওয়েল সুদ হার কমিয়ে দিক। গত সোমবার নিজের মালিকানাধীন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে জেরোম পাওয়েলকে ‘মিস্টার টু লেট’ অভিহিত করে পোস্ট দেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। সেখানে তিনি জানান, মার্কিন অর্থনীতি চাঙ্গা করতে এখনই সুদহার কমানো উচিত।
ট্রাম্পের এই মন্তব্যের পর ওয়াল স্ট্রিটের প্রধান সূচকগুলো বেড়ে যায়। একই সঙ্গে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল ও বিশ্বব্যাংকের বসন্তকালীন বৈঠকের সময় বেসেন্টের এই মন্তব্য নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার পর ওয়াল স্ট্রিটের প্রধান সূচকগুলো চাঙ্গা হয়। এ ছাড়া গতকাল এশিয়ার প্রধান স্টক এক্সচেঞ্জগুলোও ছিল ঊর্ধ্বমুখী।