ভারতে ধর্মীয় স্বাধীনতা ক্রমশ ‘খর্ব’ হচ্ছে, এমনটাই অভিযোগ তুলেছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থা কমিশন অন ইন্টারন্যাশনাল রিলিজিয়াস ফ্রিডম (ইউএসসিআইআরএফ)। সংস্থাটি ধর্মীয় স্বাধীনতা পর্যবেক্ষণ করে থাকে। গত বুধবার তাদের এই প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয়।
দ্য প্রিন্টের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশটিতে সংখ্যালঘুদের সঙ্গে ‘বৈষম্য’ করা হচ্ছে, ছড়ানো হচ্ছে ‘বিদ্বেষমূলক বক্তব্য’।
এতে আরো বলা হয়, ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) সরকার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি পূরণের দিকে মনোনিবেশ করে, যা অন্যায়ভাবে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের প্রভাবিত করে এবং তাদের ধর্মীয় বিশ্বাস চর্চার ক্ষমতা সীমিত করে দেয়।
ইউএসসিআইআরএফ বলছে, ভারতে ধর্মীয় স্বাধীনতার অবস্থা ক্রমাগত অবনতিশীল এবং এক উদ্বেগজনক গতিপথ অনুসরণ করছে।
এতে ২০২৪ সালের ওয়াকফ সংশোধনী বিলেরও উল্লেখ করা হয়েছে, যার লক্ষ্য ওয়াকফ বোর্ডে (ইসলামিক ট্রাস্ট বোর্ড) অ-মুসলিম সদস্যদের অন্তর্ভুক্ত করা।
প্রতিবেদনে ৭২ বছর বয়সী এক ব্যক্তি এবং ১৯ বছর বয়সী একজন শিক্ষার্থীর ওপর হামলাসহ গো-রক্ষকদের অনেক হামলার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে এবং জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত খ্রিস্টানদের বিরুদ্ধে সহিংসতার ১৬১টি ঘটনা উল্লেখ করা হয়েছে।
গত ফেব্রুয়ারিতে দিল্লির ৬০০ বছরের পুরনো আখুন্দজি মসজিদ ভাঙার কথাও উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনে।
এ ছাড়া প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, ভারতে ধর্মীয় সংখ্যালঘু নাগরিকদের ওপর এবং তাদের উপাসনালয়গুলোতে হিংসাত্মক হামলা চালানো হচ্ছে। এমনকি সেই হামলায় অনেক সময় সরকারি দলের নির্বাচিত প্রতিনিধিরাও মদদ দিচ্ছেন। সেই সঙ্গে বহু ভুল তথ্য ও বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচার করছেন তারা।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমস বাংলায় বলা হয়েছে, ইউএসসিআইআরএফ তাদের প্রকাশ করা বার্ষিক রিপোর্টে ভারত সম্পর্কে রীতিমতো উৎকণ্ঠা প্রকাশ করে আমেরিকার স্বরাষ্ট্র দপ্তরকে পরামর্শ দিয়েছে।
তাতে বলা হয়, লাগাতার ধর্মীয় হিংসা চালানোর জন্য ও ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান পালনের স্বাধীনতা খর্ব করার জন্য ভারতকে যেন ‘বিশেষ উদ্বেগের দেশ’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়। যদিও শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত, স্বরাষ্ট্র দপ্তর এখন পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট কমিশনের এই প্রস্তাবে সায় দেয়নি।
এদিকে এই প্রতিবেদন নিয়ে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে তীব্র প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। একে পক্ষপাতদুষ্ট ও রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে উল্লেখ করেছে ভারত।
এ ব্যাপারে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল বলেন, ‘আমেরিকার কমিশন অন ইন্টারন্যাশনাল রিলিজিয়াস ফ্রিডমের (ইউএসসিআইআরএফ) এই প্রতিবেদন সম্পর্কে আমাদের মতাদর্শ আগের মতোই। এই সংস্থাটি আসলে পক্ষপাতদুষ্ট ও রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। ভারতকে নিয়ে এটি ভুল উপস্থাপন করেই যাচ্ছে।’
অন্যদিকে ইউএসসিআইআরএফের রিপোর্টে বলা হয়েছে, ‘এই রিপোর্টে তুলে ধরা হয়েছে, কিভাবে ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে নিশানা করতে ভারতের আইনি ব্যবস্থাপনা পর্যন্ত বদলে ফেলা হচ্ছে। যার মধ্যে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) অন্যতম।’