বেইজিংয়ের আরোপ করা জাতীয় নিরাপত্তা আইনের বিরুদ্ধে মুখর হওয়া ১৬ গণতন্ত্রপন্থীর ১৪ জনকে দোষী সাব্যস্ত করেছেন হংকংয়ের আদালত। বাকি দুজনকে খালাস দেওয়া হয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
বৃহস্পতিবার (৩০ মে) হংকংয়ের উচ্চ আদালত ১৪ জনকে নাশকতার মামলায় দোষী সাব্যস্ত করেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২১ সালে ‘হংকং ৪৭’ নামে ৪৭ জন বিক্ষোভকারী ও গণতন্ত্রপন্থীকে জাতীয় নিরাপত্তা আইনের আওতায় ‘বিদ্রোহের চক্রান্ত’ বিষয়ক ধারায় অভিযুক্ত করা হয়। তাদের মধ্যে ১৬ জন মামলা চলাকালে নিজেদের নির্দোষ দাবি করে আসছিলেন।
দোষীদের তিন বছর থেকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডও হতে পারে। এ বছরের শেষে সাজা শোনানো হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বিচারক অ্যান্ড্রু চ্যান, অ্যালেক্স লি ও জনি চ্যান এক বিবৃতিতে নিজেদের রায়ের সারমর্ম তুলে ধরে বলেন, ১৪ জন অভিযুক্তের লক্ষ্য ছিল সরকারকে ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব থেকে পতন করা।
এই রায়ের পর এক বিবৃতিতে চীনের হিউম্যান রাইটস ওয়াচের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক মায়া ওয়াং বলেছেন, এই রায়কে হংকংয়ে গণতান্ত্রিক ও রাজনৈতিক প্রক্রিয়া এবং আইনের শাসনের জন্য ‘পুরোপুরি অবমাননা’ হিসেবে দেখা হচ্ছে। চীন সরকার এবং হংকং আদালত যা-ই বলুক না কেন, গণতন্ত্র কোনো অপরাধ নয়।
ওয়াং আরো বলেছেন, বেইজিং হংকংয়ের জনগণকে সর্বজনীন ভোটাধিকারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। প্রতিশ্রুতিগুলো ভঙ্গ করার জন্য এবং হংকংয়ের আইন ও কার্যকরী সংবিধানে নিশ্চিত করা মৌলিক মানবাধিকারগুলোকে নির্লজ্জভাবে মুছে ফেলার জন্য বেইজিংকেই জবাবদিহি করতে হবে।
এদিকে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের চীনের পরিচালক সারাহ ব্রুকস বলেছেন, এই সিদ্ধান্তটি এখনো পর্যন্ত সবচেয়ে নির্মম দৃষ্টান্ত, যা নিরাপত্তা আইন দিয়ে আন্দোলনকে নীরব করার অস্ত্র বানানো হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, এই মামলার দিকে তীক্ষ্ণ নজর রয়েছে আন্তর্জাতিক মহলের। অভিযোগ ওঠে যে এই মামলার কাজে রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারের ছোঁয়া রয়েছে। তা খতিয়ে দেখতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ইউরোপের কূটনীতিকরা শুনানির সময়ে সেখানে উপস্থিত ছিলেন। অবিলম্বে সকল অভিযুক্তকে মুক্তি দেওয়ার দাবি তোলেন তারা।
২০১৯ সালে বেইজিং জাতীয় নিরাপত্তা আইন চালু করার চেষ্টা করলে হংকংয়ে ব্যাপক আকারে গণ-আন্দোলন শুরু হয়। এই আইন ১৯৯৭ সালে ব্রিটিশ কর্তৃত্ব থেকে মুক্ত হওয়ার সময়ে নিশ্চিত করা স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করে বলে মনে করেন গণতন্ত্রপন্থীরা।
২০২০ সালের জুলাই মাসে নির্বাচনের আগে প্রাথমিকভাবে প্রার্থী বাছাইয়ের একটি প্রস্তাবকে ঘিরে এই আন্দোলন বাড়তে থাকে। সরকারপক্ষের মতে সরকারকে পঙ্গু করে দিতে চায় এই আন্দোলন। কিন্তু গণতন্ত্রপন্থীরা বলেন,এটি আসলে শহরের নির্বাচনে সবচেয়ে যোগ্য প্রার্থী বাছাইয়ের একটি প্রচেষ্টা ছিল মাত্র।