গত বছর ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের হামলার পর থেকে মার্কিন প্রশাসন ইসরায়েলের প্রতি প্রায় সীমাহীন সংহতি ও সমর্থন দেখিয়ে এসেছে। নির্বাচনের এই বছরে সে কারণে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নিজের সমর্থকদের একাংশের রোষের মুখে পড়েছেন। কিন্তু ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু যুক্তরাষ্ট্রসহ সহযোগী দেশগুলোর সতর্কবার্তা উপেক্ষা করে যেভাবে গাজায় সামরিক অভিযান চালিয়ে আসছেন, তার ফলে মার্কিন প্রশাসনের মধ্যে ক্ষোভ বাড়ছে। বর্তমান সংকট কাটাতে কোনো রাজনৈতিক সমাধানসূত্রের তাগিদ না দেখানোর কারণেও নেপথ্যে ও প্রকাশ্যে নেতানিয়াহুর কড়া সমালোচনা শোনা যাচ্ছে।

 

মার্কিন সিনেটের শীর্ষ নেতা চাক শুমার বৃহস্পতিবার ইসরায়েলে নতুন নির্বাচনের আহ্বান জানিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সবচেয়ে উচ্চপদস্থ ইহুদি নেতা হিসেবে শুমারের ক্ষোভভরা বক্তব্য বিশেষভাবে নজর কেড়েছে। ক্ষমতাসীন ডেমোক্র্যাট দলের এই নেতা বলেন, গণতন্ত্র হিসেবে ইসরায়েলের নিজস্ব নেতৃত্ব নির্বাচনের অধিকার রয়েছে। ৭ অক্টোবরের পর ইসরায়েলের ভবিষ্যৎ কী হবে, তা নিয়ে নতুন করে বিতর্ক হওয়া উচিত।

ইসরায়েলের জনগণের জন্য বাছাইয়ের সেই সুযোগের পক্ষে যুক্তি দিয়েছেন শুমার। 
এ ছাড়া শুমার মধ্যপ্রাচ্যে শান্তির পথে চারটি প্রধান বাধার উল্লেখ করেন। এ ইহুদি নেতার মতে, নেতানিয়াহু, হামাস, ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের নেতা মাহমুদ আব্বাস ও র‍্যাডিকাল চরম দক্ষিণপন্থী ইসরায়েলিদের কারণেই শান্তির সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না।

 

চাক শুমার সরাসরি নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে চরমপন্থীদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার অভিযোগ করেন।

এ প্রসঙ্গে তিনি গাজায় সামরিক অভিযানে নিরীহ মানুষের মৃত্যুর বিষয়ে নেতানিয়াহুর মন্ত্রিসভার দুই মন্ত্রীর উদাসীনতার উল্লেখ করেন। শুমারের মতে, এমন মনোভাবের কারণে গোটা বিশ্বে ইসরায়েলের প্রতি সমর্থন ঐতিহাসিক মাত্রায় কমে গেছে। তিনি বলেন, এমন একঘরে হয়ে ইসরায়েল টিকে থাকতে পারবে না।

 

বলা বাহুল্য, নেতানিয়াহু ও তাঁর লিকুদ দল শুমারের এমন মন্তব্যের কড়া সমালোচনা করেছে। লিকুদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ‘গর্বিত গণতন্ত্র’ হিসেবে ইসরায়েল প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুকে নির্বাচিত করেছে।

ওয়াশিংটনে ইসরায়েলের রাষ্ট্রদূত মাইকেল হেরজগ এমন মন্তব্যের পরোক্ষ সমালোচনা করেছেন। এমনকি ইসরায়েলের সাবেক প্রধানমন্ত্রী নাফতালি বেনেটও ইসরায়েলের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে ‘চরম হস্তক্ষেপ’ সম্পর্কে সতর্ক করে দিয়েছেন। মার্কিন কংগ্রেসে বিরোধী রিপাবলিকান দলও শুমারের বক্তব্যের কড়া সমালোচনা করেছে।

 

মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনও গাজায় ইসরায়েলের সামরিক অভিযানে নেতানিয়াহু প্রশাসনের মনোভাব সম্পর্কে ক্ষোভ প্রকাশ করে আসছেন। হোয়াইট হাউস শুমারের বক্তব্য সম্পর্কে আগেভাগে জেনেও কোনো হস্তক্ষেপ না করায় বাইডেনের প্রচ্ছন্ন সমর্থন স্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এ ছাড়া মার্কিন প্রশাসন বৃহস্পতিবারই পশ্চিম তীরে ইসরায়েলের বসতি স্থাপনকারীদের ওপর বাড়তি নিষেধাজ্ঞা চাপিয়ে নেতানিয়াহুর জোট সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করেছে। ফিলিস্তিনিদের ওপর লাগাতার হামলা ও হয়রানির অভিযোগে বেশ কয়েকজন চরমপন্থী বসতিকারীকে নিষেধাজ্ঞার তালিকায় যোগ করা হয়েছে।