আফগানিস্তানের রূপকথা থামিয়ে সবার আগে ফাইনালের মঞ্চে পা রাখে দক্ষিণ আফ্রিকা। আগামীকালকের ফাইনালে প্রোটিয়ারা প্রতিপক্ষও পেয়ে গেছে। দ্বিতীয় সেমিফাইনালে ইংল্যান্ডকে হারিয়ে তৃতীয়বারের মতো কুড়ি-বিশের আসরে ফাইনালে ভারত। গত আসরে অ্যাডিলেডের গল্পকথা এবার আর টেনে আনতে পারল না ইংলিশরা।

গায়ানায় অধিনায়ক রোহিত শর্মার হাফ সেঞ্চুরি ও সুর্যকুমার যাদবের ব্যাটে চড়ে ১৭১ রানের সংগ্রহ পায় ভারত। লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে অক্ষর প্যাটেল-কুলদিপ জাদবের স্পিন বিষে জস বাটলারের দলের ইনিংস থেমেছে ১০৩ রানে। তাতে ভারতের জয় ৬৮ রানে।

 

গায়ানায় আগের রাত থেকে হয়েছে বৃষ্টি।

ফলে ম্যাচ মাঠে গড়ানো নিয়েই ছিল শঙ্কা। সেই শঙ্কা অবশ্য কেটে যায় ধীরে ধীরে। তবে মাঠ ভেজা থাকায় নির্ধারিত সময়ে হয়নি টস। প্রায় সোয়া এক ঘণ্টা দেরিতে শুরু হয় ম্যাচ।
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে সেমিফাইনালে খেলা এর আগে চারবারের তিনবারই রান তাড়া করে জিতে ফাইনালের যাওয়ার কীর্তি আছে ইংল্যান্ডের। গত আসরেও অ্যাডিলেডে ভারতের বিপক্ষে ১৬৮ রান তাড়া করতে নেমে কোনো উইকেট না হারিয়েই জিতেছিল ইংলিশরা। এবার তাই টস জিতে বোলিং নিতে কোনো দ্বিধা ছিল না ইংল্যান্ড অধিনায়ক জস বাটলারের।

 

ভারতকে ব্যাটিংয়ে পাঠিয়ে বোলিংয়ে শুরুটা ভালোই করে ইংলিশরা। পাওয়ার প্লেতে বিরাট কোহলি (৯) ও ঋষভ পন্থকে (৪) ফিরিয়ে ভারতকে চাপে ফেলে দেয়।

আরও একবার ব্যর্থ কোহলি। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে অসাধারণ ইনিংস খেলা রোহিত এদিনও হাল ধরেন ভারতের। তাকে যোগ্য সঙ্গ দেন সুর্যকুমার যাদব। ৮ ওভার শেষে ভারতের রান যখন ২ উইকেটে ৬৫ তখন আবারও বৃষ্টির হানা। এই দফায় ফের সোয়া এক ঘণ্টা অপেক্ষার পর আবারও মাঠে গড়ায় খেলা। স্যাম কারানকে ছক্কা মেরে ৩৬ বলে ফিফটি পূর্ণ করেন রোহিত। টানা দুই ম্যাচে অর্ধশতক ভারতের অধিনায়কের ব্যাটে। সঙ্গে ১৩ ওভারেই একশ রান তুলে ফেলে ভারত। পরের ওভারে আদিল রাশিদের গুগলি বুঝতে না পেরে বড় শট খেলতে গিয়ে বোল্ড হন ৫৭ করা রোহিত। পঞ্চাশের দিকে এগোতে থাকা সুর্যকুমারকেও (৪৭) বেশিক্ষণ টিকতে দেননি জোফরা আর্চার। হার্দিক পাণ্ডে এসে দ্রুত রান তোলার চেষ্টা করেন। ক্রিস জর্ডানের বলে কারানের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরার আগে দুটি ছক্কা ও একটি চারে ১৩ বলে এই অলরাউন্ডারের ব্যাট থেকে আসে ২৩ রান। রানের খাতা খুলতে না পারা শিভাম দুবেকেও ফেরান জর্ডান। ফলে ভারতের রান তোলার গতি যায় কমে। তবে শেষ দিকে রবীন্দ্র জাদেজার ১৭* এবং অক্ষর প্যাটলের ১০ রানে বড় পুঁজি পায় ভারত।

 

লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে গায়ানার মন্থর ও অসম বাউন্সের উইকেটে সাবলীল ব্যাট চালাতে পারেনি ইংলিশরা। আর্শদিপ প্যাটেলকে তিন চার মেরে ভালো শুরুর আভাস দিয়েছিলেন জস বাটলার। কিন্তু নিজের ইনিংসকে টেনে নিতে পারেননি ইংলিশ অধিনায়ক (২৩)। তাকে ফিরিয়ে ভারত প্রথম সাফল্য এনে দেন অক্ষর প্যাটেল। পরের দুই ওভারে ফিল সল্টকে (৫) এবং জনি বেয়ারস্টোকে (০) হারিয়ে আরও চাপে পরে ইংল্যান্ড। সল্টকে বোল্ড করেন বুমরাহ আর বেয়ারস্টোকে ফেরান অক্ষর। ৪৯ রান তুলতেই পাঁচ উইকেট হারিয়ে বসে ইংলিশরা। তাতে জয়ের স্বপ্নে ফাটল ধরে। মঈন আলী (৮) ও স্যাম কারানের (২) উইকেট তুলে ফাইনালের পথে এগোতে থাকে ভারত। হ্যারি ব্রুক কিছুটা লড়াইয়ের চেষ্টা করলেও কুলদিপের বলে রিভার্স সুইপ করতে গিয়ে বোল্ড হয়ে ফেরার আগে তাঁর ব্যাট থেকে আসে ২৫ রান। এরপর লিয়াম লিভিংস্টন, ক্রিস জর্ডানরাও উইকেট বিলিয়ে এলে কোনোমতে একশ পার করতে পারে ইংল্যান্ড। ভারতের দুই স্পিনার অক্ষর প্যাটেল ও কুলদিপ নেন তিনটি করে উইকেট, বুমরাহর শিকার দুটি। এর আগে গতকাল প্রথম সেমিফাইনালে আফগানদের উড়িয়ে প্রথমবার ফাইনালে পা রাখে দক্ষিণ আফ্রিকা। আফগানরা প্রথম ব্যাট করে মাত্র ৫৬ রানে গুটিয়ে যায়। তাড়া করতে নেমে ৮.৬ ওভারে এক উইকেট হারিয়ে লক্ষ্যে পৌঁছে যায় প্রোটিয়ারা।