‘প্রিমিয়ারে খেলতে তো চাই। সে জন্যই তো দলটাকে চ্যাম্পিয়ন করিয়েছি। তবে বাস্তবতা হলো, প্রিমিয়ারের ক্লাবগুলোর সঙ্গে এখন আমাদের অনেক ব্যবধান। অর্থটাই মূল কারণ।

 জানি না কতটা কী করতে পারব বা টিকে থাকতে পারব কি না। পেশাদার লিগে তো আমাদের খেলার অভিজ্ঞতা নেই। একবার খেলি, স্বাদটা নিই, তবেই না বুঝতে পারব।’—বলছিলেন চ্যাম্পিয়নশিপ লিগের শিরোপাজয়ী ফকিরেরপুল ইয়াংমেন্স ক্লাবের সভাপতি আনোয়ার হোসেন।

 

এই চ্যাম্পিয়নশিপ লিগেই ২০১৭ সালে চ্যাম্পিয়ন হয়েও  প্রিমিয়ারে খেলেনি ক্লাবটি আর্থিক সংকট দেখিয়ে। এবার দলটাকে অন্তত দেশের শীর্ষ দলগুলোর সঙ্গে দেখতে চায় ক্লাব ম্যানেজমেন্ট। তবে পেশাদার লিগে নিজেদের সম্ভাবনা নিয়ে শঙ্কার কথা এরই মধ্যে স্পষ্ট ইয়াংমেন্স সভাপতির কথায়। সেই শঙ্কা বা টিকে থাকার চ্যালেঞ্জটা আছে চ্যাম্পিয়নশিপের এবারের আসরে রানার্সআপ হয়ে প্রিমিয়ারে ফেরা ঐতিহ্যবাহী ক্লাব ঢাকা ওয়ান্ডারার্সেরও।

দুটি ক্লাবই ২০০৬-০৭ মৌসুমে পেশাদার লিগ চালুর পর পথ হারিয়ে ফেলে। টিকে থাকার এই

 

পেশাদার লিগের এখন ১৬তম মৌসুম চলছে। এতগুলো বছর পর তারা আবার শীর্ষ ফুটবলের স্বাদ পেতে চলেছে। এই সময়টায় সাইফ স্পোর্টিং ও বসুন্ধরা কিংসের উদাহরণ বাদ দিলে নিচের স্তর থেকে প্রিমিয়ারে উঠে কোনো দলই সেভাবে টিকে থাকতে পারেনি। কিংস, সাইফ দলই গড়েছিল শীর্ষ স্তরে চোখ রেখে।

দ্বিতীয় বিভাগ, প্রথম বিভাগ, এরপর চ্যাম্পিয়নশিপের হার্ডল পার হয়েও অন্য দলগুলো দেখছে তারা প্রিমিয়ারের জন্য তৈরি হতে পারেনি। যেমন উত্তর বারিধারা, নোফেল স্পোর্টিং, স্বাধীনতা ক্রীড়া সংঘ, এএফসি উত্তরা এবং সর্বশেষ গোপালগঞ্জ স্পোর্টিং। গোপালগঞ্জের এবারের প্রিমিয়ার লিগে খেলার কথা। কিন্তু অর্থাভাবে তারা দল গড়তে অপারগতা দেখায়।

 

গোপালগঞ্জের কোচ হিসেবে কাজ করা সাইফুর রহমান মনির মতে, ‘পেশাদার লিগের দ্বিতীয় স্তর হিসেবে চ্যাম্পিয়নশিপ লিগটাকে আমরা যেখানে দেখতে চেয়েছিলাম, সেই প্রত্যাশিত পর্যায়ে আসলে নেই লিগটি। এখান থেকে খেলোয়াড়রা প্রিমিয়ারের ক্লাবগুলোতেও সেভাবে সুযোগ পায় না। ঘুরেফিরে তারা এখানেই খেলে বা আরো নিচের স্তরে। খেলোয়াড়দের মান খারাপ, তা আমি বলব না। কিন্তু সব কিছু মিলিয়েই এই লিগটা আছে অনাদরে। যেমন, দুপুরের রোদে কমলাপুরের টার্ফে এই লিগের খেলাগুলো হয়। এখানে তো ফুটবলাররা স্বাভাবিক পারফরম্যান্সটাই দেখাতে পারে না।’

চ্যাম্পিয়নশিপ লিগ থেকে প্রিমিয়ারে এসে ভালোভাবে জায়গা করে নিতে পেরেছেন—সর্বশেষ এমন উদাহরণ নাবিব নেওয়াজ জীবন। ২০১৩ সালে চ্যাম্পিয়নশিপ লিগের সর্বোচ্চ এই গোলদাতা পরে আবাহনী ও জাতীয় দলে নিয়মিত খেলেছেন। এবারের আসরে ১২ গোল করা ইয়াংমেন্সের রাফায়েল টুডু নজর কেড়েছেন। তাঁর ভবিষ্যৎ অবশ্য সময়ই বলবে। এই আসরের আরো একটি বড় ‘রোগ’ পাতানো ম্যাচ। এবার সে রকম অভিযোগ পাওয়া না গেলেও সর্বশেষ কারওয়ান বাজার প্রগতি সংঘ নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়েছে, একই অভিযোগ ছিল আজমপুর ফুটবল ক্লাবের বিরুদ্ধেও। এবারের আসরে আশঙ্কাজনকভাবে দলও কমেছে। ১১ দল নিয়ে গত লিগ হলেও এবার আট দল নিয়ে লিগ হয়েছে। প্রথম বিভাগ থেকে উন্নীত হয়েও এই আসরে খেলতে অপরাগতা জানায় মুগদা সমাজকল্যাণ সংঘ ও যাত্রাবাড়ী ক্রীড়া চক্র। দল গড়েনি প্রিমিয়ার থেকে নেমে যাওয়া মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়া চক্র।