নিজস্ব প্রতিবেদক:
রাজধানীর পল্লবী থানা এলাকায় শিশু সন্তানের সামনে জমি নিয়ে বিরোধের জেরে আলোচিত শাহিনুদ্দিন হত্যাকান্ডের পর পুলিশের সাথে সন্ত্রাসীদের যোগাযোগের প্রেক্ষিতে ওসি কাজী ওয়াজেদ আলী বদলী হলেও, মিরপুর বিভাগের ডিসি আসম মাহতার বদলী হয়নি। ফলে পল্লবী এলাকার দখল বাণিজ্যতো কমেই নেই বরং বেড়েই চলেছে। পুলিশের সহায়তায় ক্ষমতাবাদনের জায়গা দখল হলে, ২-১টা সংবাদ হলেও, অসংখ্য নিরীহ মানুষের জায়গা দখলের বিষয়ে কোন সংবাদই প্রকাশ হয় না। এই সকল দখল বাণিজ্যের নৈপথ্যে পুলিশের হাত থাকার অভিযোগ উঠলেও, অভিযুক্তরা থাকে ধরাছোয়ার বাইরে। বরং, ওসি বা কোন পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলেই থাকে শ্রেষ্ঠ ওসি বা সেরা এসআই পদক দেওয়া হয়। মেজর সিনহা হত্যাকান্ডের পূর্বে ওসি প্রদীপ অসংখ্য অপকর্ম করার পর যেভাবে তাকে সেরা ওসি নির্বাচিত করে অপকর্মকে আড়াল করা হয়েছে, পল্লবী থানার পুলিশদের ক্ষেত্রেও তেমনই দেখা যায়।
সর্বশেষ পল্লবীতে সাদ মুসা গ্রুপের প্রায় ১৫ শতক জমি দখলের অভিযোগ পাওয়া গেছে। দখল করা জমির অংশে স্থাপনা নির্মাণের কাজ চলছে। পল্লবী থানার ৪০০ গজের মধ্যে সাদ মুসা গ্রুপের জমির অবস্থান । স্থানীয় সন্ত্রাসীদের সহায়তা নিয়ে একেএম আব্দুস সালাম প্রায় ২০০ জন লোক নিয়ে শনিবার সকাল ৮ টায় সাদ মুসা গ্রুপের বাউন্ডারি ভেঙ্গে ভিতরে প্রবেশ করে আরেকটি সীমানা প্রাচীর দেয়াল নির্মাণ করে ।
এ ব্যাপারে পল্লবি থানায় অভিযোগ দায়ের করার পরও থানা পুলিশ কোন ব্যবস্থা নেয়নি বলে অভিযোগ করেন সাদ মুসা গ্রুপের প্রধান প্রশাসনিক কর্মকর্তা মেজর (অবঃ) মইনুল হাসান । অভিযোগ পত্রে জানা যায় , ২০০৮ সালে করিম উদ্দিন ভরসার নিকট থেকে ২০৮ শতক সম্পত্তি সা'দ মুছা গ্রুপ খরিদ করে ভোগ দখল করিয়া আসতেছিল এবং ২০১১ সালে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক টি বোর্ড শাখা চট্টগ্রাম এর নিকট দায়বদ্ধ রয়েছে । পরবর্তীতে মিরপুর ডিওএইচএস রাস্তার জন্য কিছু সম্পত্তি অধিভুক্ত হওয়ায় অবশিষ্ট্য সম্পত্তিতে বালু ভরাট করে চারদিকে সীমানা প্রাচীর নির্মান করে সা'দ মুছা গ্রুপের কিছু ষ্টাফ থাকার জন্য একটি ঘর করে রাখা হয় । হঠাৎ গত বছর বরিশালের বাকেরগঞ্জ থানার বোয়ালিয়া গ্রামের মৃত এম এম আব্দুল হামিদের ছেলে একেএম আব্দুস সালাম উক্ত সম্পত্তির উপর হাইকোর্টের রিট পিটিশন নং- ১২৯৭২/২০২১ দায়ের করিলে উক্ত মামলাটির রায় আদেশের বিরুদ্ধে সুপ্রীম কোর্টের আপীল বিভাগের লিভ টু আপীল নং ১৬২০/২০২২ দায়ের করা হয় যা বর্তমানে বিচারাধীন রয়েছে। কিন্তু স্থানীয় ভূমি দস্যু একেএম সালাম,জামাল মাষ্টার চিহ্নিত সন্ত্রাসী কালা জুয়েল,সোহরাওয়ার্দি বাবু ,টিটু,নান্নান সহ অজ্ঞাত আরও ২০০ জন বহিরাগত লোকজন নিয়ে বেআইনিভাবে জমিতে প্রবেশ করে সা'দ মুছা গ্রুপের কর্মচারি সাব্বির,সাদী,আলামিনকে পিটিয়ে মারাত্নক আহত করে বের করে দেয় এবং জমিতে তাদের সাইনবোর্ড টানিয়ে স্থাপনা নির্মান করে ।
এ অবস্থায় সা'দ মুছা গ্রুপের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মেজর(অবঃ) মইনুল হাসান ঘটনাস্থলে গেলে তাকেও শারিরীক ভাবে লাঞ্ছিত করা হয় । স্থানীয় বাসিন্দা আকরাম হোসেন সরদার বলেন, এই ভূমিখেকো সালাম এরকম নিরীহ ভদ্র লোকদের ফাকা সম্পত্তি পেলেই তার অপকর্মের হোতা জালাল মাষ্টারকে নিয়ে ভুয়া কাগজপত্র বানিয়ে দখলের পায়তারা করে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেয়। এজন্য তাদের রয়েছে বিশাল ক্যাডার বাহিনি। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় প্রচুর লোকজনের সমাগম এর মধ্যে একজন ইট নিয়ে দেয়ালের কাজ করছে , তাকে বে-আইনি কাজের ব্যাপারে প্রশ্ন করতেই বলেন ওসি ডিসির লগে কথা বলেন! তারা জানে সকল কিছু!! বুজেন না কিছু ফিডার খান ?
এ ব্যাপারে পল্লবী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে ফোন দিলে তিনি থানায় যেয়ে দেখা করে কথা বলতে বলেন। কিন্তু তিনি আর থানায় আসেন নি এবং ফোনও ধরেন নি ।
পরে অভিযোগের তদন্ত কর্মকর্তা এস আই কাওসারের সাথে কথা বললে তিনি সালামের পক্ষ নিয়ে বলেন, তাদের রায় কাগজপত্র ঠিক আছে। তারা কাজ(দেয়াল নির্মান) করতেই পারে। পাল্টা উনাকে যখন প্রশ্ন করা হলো এত লোক নিয়ে একজনের সিমানা প্রাচীর ভেঙ্গে ভিতরে প্রবেশ করাকে কি বলে ? তখন তিনি চুপ ছিলেন ।
মিরপুর জোনের ডিসিকে কল দেওয়া হলে তিনি প্রথমে বলেন, সরেজমিনে গিয়ে আমাকে জানান। পরে আবার কল দিলে তিনি একেএম সালামের পক্ষ নিয়ে কথা বলেন এবং তিনি বলেন তারা জিডি করে কাজ করতেছে; এই বলে লাইন কেটে দেন ।
শুধু সাদ মুসা গ্রুপের এই সম্পত্তিই নয়, বরং, পল্লবী বিভিন্ন জায়গায় দখল হচ্ছে প্রতিনিয়ত। পলাশ নগরে পুলিশের সহায়তায় জায়গা দখলের সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে হামলার শিকার হয়েছিলেন সাংবাদিকরা। পরবর্তীতে উল্টো সাংবাদিকদের নামেই মামলা দেয়, ওসি পারভেজ ইসলাম। এই বিষয়ে বিভিন্ন দফতরে অভিযোগ দেওয়ার পর, উল্টো সাংবাদিক ওসি সহযোগী হিসেবে উল্লেখ করে কর্ণফুলী মাল্টিপারপাস কো-পারেটিভ সোসাইটি নামে এক বিতর্কিত এবং র্যাবের অভিযানে আটক প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীকে দিয়ে মিথ্যা মামলা দিয়ে কারাগারে পাঠায়।
এই যখন অবস্থা, স্থানীয় সাংবাদিকরা ভয়ে ওসির সাথে মিল দিয়ে চলে, নিজের সুযোগ সুবিধা গ্রহণ করলেও, ওসির বিরুদ্ধে সংবাদ করার সাহস পায় না।
পলাশ নগরে পুলিশের সহায়তায় জায়গা দখলের আরো অসংখ্য অভিযোগ জমা পড়েছে পুলিশের বিভিন্ন দফতরে। যদিও, কাজের কাজ কিছুই হয়নি। বরং, অভিযোগকারীরাই থাকের বিপাকে।
এই বিষয়ে পুলিশের নির্যাতনের শিকার ব্যবসায়ী মোঃ পারভেজ বলেন, আমি পুলিশের বিভিন্ন দফতরে অসংখ্য অভিযোগ জমা দিয়েছে। কিন্তু, এতে আমি নিজেই রয়েছি বিপদে। প্রতিনিয়ত আমাকে মিথ্যা মামলায় গ্রেফতার করার চেষ্টা করে যাচ্ছে পুলিশ। আমি আমার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানেও ঠিক মতো সবতে পারিনা। ফলে আজ আমি নিঃস্ব হওয়ার পথে। পুলিশের বিরুদ্ধে কেউ অভিযোগ দিলেই, পুলিশের কিছু দালাল রয়েছে যারা মাদক ব্যবসা, কিশোর গ্যাংসহ বিভিন্ন অপকর্মে লিপ্ত। তাদের দিয়ে মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসূচী পালন করে। বাউনিয়াবাধ এলাকায় রয়েছে বাংলা মদের স্পট। যে স্পট ওসি পূর্বে বাড্ডা থানায় থাকাকালীন সময় বাড্ডায় ছিল। বর্তমানে পল্লবীতে নিয়ে এসেছে। এই বিষয়ে মুখ খোলার বা সংবাদ করার সাহস পর্যন্ত কার নেই। কারণ, ওসির বিরুদ্ধে কিছু বললে মিথ্যা মামলা দিয়ে আটক করে থানায় নিয়ে অকথ্য নির্যাতন চালায়।
পল্লবীতে পুলিশের সহায়তায় একের পর এক দখল বাণিজ্যের অভিযোগ
প্রকাশিত: ২২ ডিসেম্বর, ২০২৩, ০২:৪৫ এএম



বাংলাদেশ রিলেটেড নিউজ

পাপনের দুর্নীতির অনুসন্ধানে দুদক, তথ্য চেয়ে বিসিবিতে চিঠি

মানুষ ভালো সমাধান মনে করছে অন্তর্বর্তী সরকারকেই-ড. মুহাম্মদ ইউনূস

আমরা জটিল সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি : শিক্ষা উপদেষ্টা

প্রশাসনে ওএসডির ছড়াছড়ি

জুলাই গণ-অভ্যুত্থান অধিদপ্তর গঠন করে গেজেট প্রকাশ

হাসিনাকে ‘চুপ’ রাখতে বলেন ড. ইউনূস, মোদী জানান পারবেন না

নির্বিঘ্নে ধর্ম পালনে ‘লাব্বাইক’ অ্যাপ বড় ভূমিকা রাখবে - প্রধান উপদেষ্টা

স্টারলিংককে লাইসেন্স দিতে সুপারিশ, মন্ত্রণালয়ে বিটিআরসির চিঠি