আজ সন্ধ্যায় ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এস জয়শঙ্কর প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর হোটেলে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন।
এবারের সফরটি দ্বিপক্ষীয় ও রাষ্ট্রীয় হওয়ায় নয়াদিল্লিতে প্রধানমন্ত্রী বিশেষ মর্যাদা পাবেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে স্বাগত জানাতে আগামীকাল শনিবার সকালে রাষ্ট্রপতি ভবনের সামনে ফোরকোর্টে লাল গালিচা বিছানো হবে। এ সময় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আনুষ্ঠানিকভাবে তাঁকে অভ্যর্থনা জানাবেন। সেখানে দুই দেশের জাতীয় সংগীত বাজানো হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘গার্ড অব অনার’ পরিদর্শন করবেন। ভারতের রাষ্ট্রপতির সঙ্গে আনুষ্ঠানিক ছবিও তোলা হবে এই সংবর্ধনা পর্বে।
এরপর প্রধানমন্ত্রী রাজঘাটে ভারতের জাতির পিতা মহাত্মা গান্ধীর সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন। সেখানে তিনি পরিদর্শন বইয়ে স্বাক্ষর করবেন।
আগামীকাল নয়াদিল্লির হায়দরাবাদ হাউসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র প্রথমে একান্ত বৈঠক করবেন। এরপর দুই শীর্ষ নেতার নেতৃত্বে বৈঠকে বসবে বাংলাদেশ ও ভারতের প্রতিনিধিদল।
বৈঠক শেষে শেখ হাসিনা ও নরেন্দ্র মোদির উপস্থিতিতে দুই দেশের প্রতিনিধিরা কয়েকটি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করবেন। দুই নেতাও গণমাধ্যমের সামনে বক্তব্য দেবেন। এরপর তাঁরা হায়দরাবাদ হাউসে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সম্মানে ভারতের প্রধানমন্ত্রী আয়োজিত ভোজসভায় যোগ দেবেন।
প্রধানমন্ত্রীর প্রথম দ্বিপক্ষীয় সফর ভারত নাকি চীনে হবে, তা নিয়ে বিশেষ আগ্রহ ছিল বিভিন্ন মহলে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ গত মে মাসে সাংবাদিকদের বলেছিলেন, প্রধানমন্ত্রী তাঁর প্রথম দ্বিপক্ষীয় সফরে ভারতে যাবেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, এ মাসের প্রথমার্ধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের পরপরই দ্বিপক্ষীয় সফর চূড়ান্ত হয়। ভারত তার ‘প্রতিবেশীই প্রথম’ নীতিতে বাংলাদেশকে বিশেষ গুরুত্ব দেয়। তারই বহিঃপ্রকাশ ঘটতে যাচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর স্বল্প সময়ের ব্যবধানে দুটি সফরে। এ ছাড়া আগামী মাসের প্রথমার্ধে চীন সফরের কথা রয়েছে প্রধানমন্ত্রীর। চীনের সঙ্গে ক্রমবর্ধমান সম্পর্কের মধ্যেও ভারতের সঙ্গে বিশেষ সম্পর্ককে যে বাংলাদেশ গুরুত্ব দেয় তারই প্রতিফলন ঘটছে এবারের সফরে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেছেন, এই সফরে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে একটি সম্ভাব্য বাণিজ্য চুক্তি বিষয়ে আলোচনা হবে বলে আশা করা হচ্ছে। গত এক দশকে শক্তিশালী আঞ্চলিক অংশীদারির অংশ হিসেবে বেশ কিছু আন্তঃসীমান্ত উদ্যোগ চালু করা হয়েছে। আগামী দিনে আরো নতুন কিছু উদ্যোগ যোগ করার চেষ্টা চলছে।
বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে অমীমাংসিত ইস্যুগুলো যেমন সীমান্ত হত্যা, পানি বণ্টন সমস্যা বা বাণিজ্যের ক্ষেত্রে অশুল্ক বাধার মতো বিষয় কয়েক বছর ধরে আলোচনা চলছে। আগামীকালের বৈঠকেও এ বিষয়ে আলোচনা হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। মহাকাশ, প্রতিরক্ষা থেকে শুরু করে বিভিন্ন পর্যায়ে সহযোগিতা কানেক্টিভিটি বা যোগাযোগ, অর্থনৈতিক সহযোগিতা নিয়েও আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেন, মিয়ানমার সীমান্ত পরিস্থিতি, রোহিঙ্গা সংকটের মতো আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে আলোচনা হতে পারে। বাংলাদেশ, ভারত—দুই দেশই এ সফরকে গুরুত্ব দিচ্ছে। বিশেষ করে, চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান সম্পর্কের কারণে এ দেশের দিকে ভারতসহ বড় শক্তিগুলোর দৃষ্টি রয়েছে।
সফরসূচি অনুযায়ী, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামীকাল শনিবার বিকালে ভারতের উপরাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনখারের সঙ্গে তাঁর দপ্তরে সাক্ষাৎ করবেন। এরপর শেখ হাসিনা রাষ্ট্রপতি ভবনে ভারতের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন। সাক্ষাৎ শেষে সন্ধ্যা ৬টায় (দিল্লি সময়) প্রধানমন্ত্রী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ফ্লাইটে নয়াদিল্লির পালাম বিমানবন্দর থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হবেন। আগামীকাল রাত ৯টার দিকে প্রধানমন্ত্রীর ঢাকায় ফেরার কথা।