নিউইয়র্ক: নিউইয়র্কে জমজমাট আয়োজনে অনুষ্ঠিত হয়েছে শো’টাইম মিউজিক এর বর্ণিল বৈশাখী মেলা। কুইন্সে বাঙালীদের ব্যবসায়িক প্রাণকেন্দ্র জ্যাকসন হাইটসের ৩৭তম রোডে ১৪ মে রোববার উৎসবমুখর পরিবেশে এই মেলায় সঙ্গীত পরিবেশন করেন দেশ-প্রবাসের জনপ্রিয় শিল্পীরা। মেলার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের মাউন্টেন ব্যাটালিয়ন কমান্ডার, নিউইয়র্কে হোম কেয়ার সেবার পথিকৃৎ, বাংলা সিডিপ্যাপ ও অ্যালেগ্রা হোম কেয়ারের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান এন্ড সিইও বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু জাফর মাহমুদ। স্বাগত বক্তব্য রাখেন শো টাইম মিউজিকের সিইও আলমগীর খান আলম।
এদিন দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত আয়োজিত এ পথমেলায় নেমেছিলো মানুষের ঢল। নিউইয়র্ক, নিউজার্সী সহ যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে বসবাসকারী বাঙালিরা মেলায় অংশ নেন। ভিন দেশীদের উপস্থিতিও দেখা গেছে।
মেলায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে কুইন্স কমিউনিটি বোর্ড মেম্বার বীর মুুক্তিযোদ্ধা আবু জাফর মাহমুদ বলেন, আমেরিকান অন্যান্য সংস্কৃতির মধ্যে বাংলা সংস্কৃতি ও সঙ্গীত এখন অনন্য স্থানে পৌঁছেছে। এর পেছনে যারা কাজ করছেন তারা ধন্যবাদ পাবার দাবি রাখেন। আমি বিশ্বাস করি, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের উদ্যোক্তারা একেকটি আয়োজনের মধ্য দিয়ে দেশের পক্ষে একটি প্রবাহ তৈরি করেন। বাংলাদেশের সেই সাংস্কৃতিক প্রবাহ এখন সফল একটি উচ্চতায় পৌঁছেছে।
মেলার পরিবেশনা মঞ্চে বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু জাফর মাহমুদকে তার মানবসেবা, কমিউনিটি উন্নয়নসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদানের জন্য নিউইয়র্ক স্টেট অ্যাসেমব্লি থেকে বিশেষ সম্মাননা প্রদান করা হয়। ওই সম্মাননা হস্তান্তর করেন নিউইয়র্ক স্টেট অ্যাসেমব্লি ডিস্ট্রিক্ট ৩০ এর অ্যাসেমব্লিমেম্বার স্টিভেন বি রাগা।
উদ্বোধনী বক্তৃতায় আবু জাফর মাহমুদ বলেন, বৈশাখী মেলা আর অন্যান্য মেলার মধ্যে বিস্তর পার্থক্য রয়েছে। বাংলা সনের সঙ্গে চন্দ্র সন ও ফসলী সনের গভীর সম্পর্ক রয়েছে। এর সঙ্গে বাংলাদেশের জীবনপ্রবাহ জড়িত। আমরা যখন মোগল শাসিত ছিলাম, তখন কৃষিজীবী জনগোষ্ঠির ফসলি হিসাব, ব্যবসার হিসাব ঠিক রাখার জন্যই স¤্রাট আকবর যে সন গণনার প্রবর্তন করেন, সেটিই বাংলা সন। মানুষের জীবিকাকে সঠিক হিসেবের মধ্যে আনার জন্যই সাল গণনার সূত্রপাত। বাংলা পঞ্জিকার প্রথম মাস বৈশাখ। বৈশাখকে ঘিরেই আমরা হালখাতা করে আসছি। বছরের প্রথম দিনের ‘হাল’ দিনের হিসাব খোলাটিই হালখাতা। আমরা বাংলা অঞ্চল থেকে এসে এখন যেহেতু পৃথিবীময় ছড়িয়ে পড়েছি, তার নেতৃত্বটা দিচ্ছি আমেরিকা থেকে। বাংলা নতুন বছরে এসে, আমাদের জীবনধারা, ভাতৃত্ব ও আগামীর করণীয় নির্ধারণ করতে হবে।
মেলায় আবু জাফর মাহমুদের উদ্যোগে নির্মিত বাংলা বর্ষ ও তার ইতিহাস নিয়ে প্রামান্য চিত্র প্রদর্শিত হয়। তা দর্শকদের বেশ প্রসংশা কুড়িয়েছে।
কমিউনিটি এক্টিভিস্ট এডভোকেট কামরুজ্জামান বাবু ও মিয়া মোহাম্মদ দুলালের পরিচালনায় কমিউনিটির নেতৃবৃন্দ সংগীতের ফাঁকে ফাঁকে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন। তবে বক্তাদের অধিকাংশই ছিলেন মেলার পৃষ্ঠপোষক। অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ডা. চৌধুরী সারওয়ারুল হাসান, গিয়াস আহমেদ, এটর্নি মঈন চৌধুরী, মীর বাশার, ফাহাদ সোলায়মান, নুরুল আজিম, মাকসুদুল এইচ চৌধুরী, আদিত্য শাহিন, বিলাল চৌধুরী, আব্দুর রশীদ বাবু, আহসান হাবিব, কাজি আযম, ড. রফিকুল ইসলাম প্রমুখ।
মেলায় দেশি পণ্যসামগ্রীর পসরা সাজিয়ে বসে স্থানীয় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। মজাদার খাবার, দেশীয় পিঠা, শাড়ি, গহনা, সালোয়ার কামিজসহ বিভিন্ন রকমের প্রায় ৫০টি স্টল বসেছিল মেলায়। স্টলগুলোর মালিক ছিলেন বাংলাদেশিরা।
মেলা উপলক্ষে স্থাপিত বড় একটি মঞ্চে দেশ ও প্রবাসের জনপ্রিয় শিল্পীরা মনোজ্ঞ সঙ্গীত পরিবেশন করেন। হাজারো মানুষের উপস্থিতিতে শিল্পীরা নেচেগেয়ে মেলা জমিয়ে তোলেন।
সংগীতে অংশ নেন জনপ্রিয় সংগীত শিল্পী কনক চাপা, বিন্দু কনা, রেশমি মির্জা, শামীম হাসান, কামরুজ্জামান বকুল, কৃষ্ণা তিথি, শাহ মাহবুব, তৃণিয়া হাসান, তাহমিনা মিম, প্রেমা রহমান, আফতাব জনি, রায়ান তাজ, কামরুল ইসলাম, লাল্টু প্রমুখ।
সবশেষে অনুষ্ঠিত হয় মেলার অন্যতম প্রধান আর্কষণ র‌্যাফেল ড্র। এতে ছিলো আকর্ষণীয় পুরস্কার। লটারিতে প্রথম পুরষ্কার নিউইয়র্ক-ঢাকা-নিউইয়র্কের টিকিট বিজয়ী হন সাংবাদিক নিহার সিদ্দিকী।