নিউইয়র্ক: গত প্রায় দেড় দশকে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বিশ্বের দ্রুত বর্ধনশীল অথনীতির দেশগুলোর অন্যতম এবং এই অগ্রগতি শুধু বাংলাদেশিদের কল্যাণেই ভূমিকা রাখছে না, বিশ্বশান্তি, প্রগতি এবং আঞ্চলিক সমৃদ্ধিতেও অবদান রাখছে। এমন মন্তব্য করা হয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জর্জিয়া স্টেট সিনেটে। ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫১তম বার্ষিকী’ উপলক্ষে গত ২৯ মার্চ গৃহীত এক রেজ্যুলেশনে (এসআর ৪২৬) এই মন্তব্য করা হয়।
স্টেট সিনেটর শেখ রহমানের (ডেমক্র্যাট) উত্থাপিত এ রেজ্যুলেশনে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, অর্থনীতি এবং সামাজিক উন্নয়নের সাফল্যজনক এ অভিযাত্রায় যুক্তরাষ্ট্র হচ্ছে দীর্ঘদিনের সক্রিয় অংশীদার। যুক্তরাষ্ট্র এবং বাংলাদেশের মধ্যকার বাণিজ্যিক সম্পর্ক সাম্প্রতিক সময়ে ৯ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়েছে। এটি ঘটেছে দেশ দুটির নাগরিকদের মধ্যকার সম্প্রীতির বন্ধন মধুর হওয়ায় এবং ট্রেড, অর্থনীতি, নিরাপত্তা, শান্তি-স্থিতি, সুশাসনের ক্ষেত্রে উন্নতিসহ বিভিন্ন গ্লোবাল ইস্যুতে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্র ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছে বলে।
রেজ্যুলেশনে বলা হয়েছে, জর্জিয়া স্টেটের ৩০ হাজারের বাংলাদেশিসহ গোটা আমেরিকায় লাখ লাখ বাংলাদেশি বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের পরিপ্রেক্ষিতে বেশ কিছু আন্তর্জাতিক ইস্যুতে বাংলাদেশের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের দৃষ্টিভঙ্গিও প্রায় অভিন্ন। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে- বিশ্বশান্তি ও নিরাপত্তা অটুট রাখা, সন্ত্রাস এবং চরমপন্থী দমনে চলমান পরিক্রমা। মানবাধিকার সুরক্ষাসহ ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য অর্জন, জলবায়ু ইস্যুতে যৌথভাবে কাজসহ আরও জনগুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্র একসাথে কাজ করছে। বলার অপেক্ষা রাখে না যে, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে আমেরিকার নাগরিকদের অকুণ্ঠ সমর্থনের কথা সবসময় বাংলাদেশ গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ করে। বিশেষ করে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে সিনেটর টেড কেনেডির অবিস্মরণীয় ভূমিকাকে বাংলাদেশ বিশেষভাবে সম্মানিত করেছে।
রেজ্যুলেশনে অকপটে স্বীকার করা হয়েছে, গত ৫১ বছরে খাদ্য উৎপাদন, দুর্যোগ-মোকাবিলা, দারিদ্র-বিমোচন, স্বাস্থ্য সেবা ও শিক্ষার হার বৃদ্ধির পাশাপাশি নারী ক্ষমতায়নে অবিশ্বাস্য রকমের সাফল্য দেখিয়েছে বাংলাদেশ। আরও উল্লেখ করা হয়েছে, ১০ লক্ষাধিক রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়ে বাংলাদেশ যে উদারতার স্বাক্ষর রেখেছে তার জন্য যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের মানবিকতার প্রশংসা করছে এবং এ যাবত শরণার্থীদের জন্য এক বিলিয়ন ডলারের অধিক প্রদান করা হয়েছে। এসব কারণে জর্জিয়া স্টেট বাংলাদেশের উন্নয়ন-অগ্রগতি ও মানবিকতার প্রতি অকুণ্ঠ সমর্থন ব্যক্ত করছে এবং বাংলাদেশের উত্তরোত্তর সাফল্য কামনা করছে।
রেজ্যুলেশনের অফিসিয়াল কপি বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে মোমেনের কাছে ২ মে হস্তান্তর করেন সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম-মুক্তিযুদ্ধ’৭১ এর যুক্তরাষ্ট্র শাখার সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা লাবলু আনসার।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে সেটি গত দু’বছর যাবত উত্থাপনের পর সর্বসম্মতভাবে পাস হচ্ছে জর্জিয়া স্টেট পার্লামেন্টে সিনেটর শেখ রহমানের উদ্যোগে। হোয়াইট হাউজে ঈদ উৎসবে অংশগ্রহণের জন্য সিনেটর শেখ রহমান ডিসিতে অবস্থান করলেও রেজ্যুলেশনের কপি হস্তান্তরের সময় মন্ত্রীর হোটেল সুইটে থাকতে না পারায় তার পক্ষ থেকে সেটি হ্যাম্ট্রমিক সিটির নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিকে পাসে নিয়ে হস্তান্তর করেন লাবলু আনসার। এটি গ্রহণ করে বাংলাদেশি আমেরিকান সিনেটর শেখ রহমানকে ধন্যবাদ জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে এ মোমেন। প্রধানমন্ত্রী ও বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে চলমান উন্নয়ন-অভিযাত্রা এবং শেখ হাসিনার মানবিকতার প্রশংসা করে এমন একটি রেজ্যুলেশন পাস করায় জর্জিয়ার সকল জনপ্রতিনিধিকেও ধন্যবাদ জানিয়েছেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন।
এসময় সেখানে নিউইয়র্কে বাংলাদেশের কন্সাল জেনারেল ড. মনিরুল ইসলামসহ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও ছিলেন। মিশিগানের হ্যামট্রমিক সিটি কাউন্সিলের ৩ মেম্বার নাঈম লিয়ন চৌধুরী, আবু মূসা এবং মিথুন মাহবুবও ছিলেন সেখানে।