কলম্বো: প্রথম অর্থনৈতিক কূটনৈতিক সপ্তাহ উপলক্ষে  ২৯ জুন ২০২২ তারিখে কলম্বোস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস, চট্টগ্রাম ও কলম্বো বন্দরের মধ্যে  নৌ যোগাযোগ বৃদ্ধি  সংক্রান্ত একটি  কন্সালটেশন  ফোরাম এর আয়োজন করে।  ফোরামের উদ্দেশ্য ছিল দুই সমুদ্র বন্দরের মধ্যে নৌ চলাচল সংক্রান্ত সার্বিক বিষয়ের উপর আলোকপাত করে এই সংক্রান্ত সমঝোতা বৃদ্ধি এবং দুই বন্দরের মধ্যকার অংশীদারিত্ব আরো সুসংহত করা।  বাংলাদেশ ও শ্রীলংকার  বন্দর কর্তৃপক্ষ, টার্মিনাল অপারেটর, মেইন লাইন অপারেটর, ফ্রেইট ফরোয়ার্ডার্স এবং অন্যান্য সংশ্লিষ্ট সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান  এবং বন্দর ব্যবহারকারী যেমন তৈরী পোশাক রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা উক্ত ফোরামে তাঁদের স্ব স্ব বক্তব্য উপস্থাপন করেন ।   

শ্রীলংকায় নিযুক্ত বালাদেশের রাষ্ট্রদূত তারেক মো: আরিফুল ইসলাম তাঁর স্বাগত বক্তব্যে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক  উল্লেখযোগ্য উন্নয়ন এবং কলম্বো বন্দরের  জন্য তা যে তৈরী করেছে তা ব্যাখ্যা করেন।  তিনি  আরো উল্লেখ করেন যে, করোনা মহামারী ও বর্তমানে যুদ্ধের প্রেক্ষিতে  বৈশ্বিক সামগ্ৰিক পণ্য বন্টন ব্যবস্থায় প্রতিবন্ধকতার কারণে নৌ পরিবহন ব্যবস্থাপনায় নতুন ধারার সৃষ্টি হচ্ছে । তিনি  সেই বাস্তবতায় কলম্বো বন্দরের পক্ষ থেকে আরো প্রনোদনার ব্যবস্থা করার উপর গুরুত্ব আরোপ করেন।   

শ্রীলংকা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান ডঃ প্রশান্থা জায়ামান্না কলম্বো বন্দরের বিদ্যমান সুযোগ সুবিধা ও চলমান উন্নয়ন এবং ভবিষৎ পরিকল্পনা ব্যাখ্যা করেন যা ২০২৫-২৬ সালের মধ্যে সম্পন্ন হলে কলম্বো সমুদ্র বন্দরটি বৎসরে  প্রায় ১৫ মিলিয়ন TEUs  container handling এর সক্ষমতা অর্জন করবে। তিনি  আরো উল্লেখ করেনা যে, শ্রীলংকা সরকারের মালিকানাধীন Jaya Container টার্মিনালে বাংলাদেশী ফিডার ভেসেলের জন্য অগ্রাধিকার মূলক নোঙ্গর এর সুবিধা প্রদান করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে।  এখানে উল্লেখ যে, এই অগ্রাধিকার মূলক নোঙ্গর এর জন্য বাংলাদেশ দূতাবাস দীর্ঘদিন যাবৎ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিলো। 

শ্রীলংকা বন্দর কর্তৃপক্ষ, বেসরকারি টার্মিনাল পরিচলনাকারীবৃন্দ  এবং সংশ্লিষ্ট সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান সমূহ বাংলাদেশকে ধারাবাহিক অগ্রাধিকার প্রদানের ব্যাপারে নিশ্চয়তা প্রদান করে।  সম্প্রতি গণমাধ্যমে  কলম্বো বন্দর সংক্রান্ত  নেতিবাচক প্রচারের বিষয় উল্লেখ করে তাঁরা জানান শ্রীলংকার সংকটাপন্ন অবস্থায়ও  কলম্বো বন্দর পরিচালনা  কোনো সমস্যার সম্মুখীন হয় নাই। এই ক্ষেত্রে উভয় পক্ষ শিপিং খাত সংশ্লিষ্ট  স্টেকহল্ডারদের  মধ্যে  সার্বক্ষণিক যোগাযোগের উপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করেন ।   

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের প্রতিনিধি উল্লেখ করেন যে গত বছরে কলম্বো বন্দরের মাধ্যমে বাংলাদেশের কনটেইনার পরিবহন উল্লেখযোগ্য পরিমান বৃদ্ধি পেয়েছে।  এই খাত সংশ্লিষ্ট বাংলাদেশের প্রতিনিধিগণ কলম্বো বন্দরের ব্যবহারের অভিজ্ঞতা, উদ্ভূত ধারা এবং শিপিং কার্যক্রমে ভবিষৎ নিয়ে বিশদ আলোচনা করেন।

সবশেষে একটি মতবিনিময় সেশন অনুষ্ঠিত হয় যেখানে উভয় পক্ষ থেকে প্যানেল আলোচকবৃন্দ অংশগ্রহণকারীদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন যা চট্টগ্রাম-কলম্বো নৌ যোগাযোগ সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়ে আরো সুস্পষ্ট ধারণা প্রদান করে ।  

অনুষ্ঠানটি দুই দেশের শিপিং খাতের মধ্যে পারস্পরিক যোগাযোগের ভালো একটি প্ল্যাটফর্মে হিসেবে প্রশংসিত হয়।

উক্ত ফোরামে শ্রীলংকান শিপিং খাতের উচ্চ পর্যায়ের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক প্রতিনিধিগণ অংশগ্রহণ করেন। শ্রীলংকান প্রতিনিধিসমূহের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন শ্রীলংকান এসোসিয়েশন অফ ভেসেল অপারেটরস এর প্রাক্তন চেয়ারম্যান অর্জুন হেট্টিয়ারাচ্চি, সিমাটেক থেকে রোহান জোসেফ, শ্রীলংকা লজিস্টিকস এবং ফ্রেইট ফরওয়ার্ডস এর চেয়ারম্যান দীনেশ শ্রী চন্দ্রসেকারা। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে কর্ণফুলী গ্রুপ এবং এইচ আর লাইনস এর সিনিয়র নির্বাহী পরিচালক আনিস উদ দৌলা, ডিএসভি লজিস্টিকস এর বাংলাদেশ প্রধান এবং মোহাম্মদী গ্রুপের পরিচালনা এবং বিক্রয় বিভাগের প্রধান ভার্চুয়ালি তাঁদের বক্তব্য উপস্থাপন করেন