অন্যদিকে জেনারেলরা হুঁশিয়ারি দিচ্ছেন, ইমরান দেশকে গৃহযুদ্ধের হুমকিতে ঠেলে দিচ্ছেন।
আর সরকার বলছে, ইমরান খান দুর্নীতির মামলার মুখোমুখি হয়ে এখন দেশটির বিচার এবং রাজনৈতিক ব্যবস্থাকেই উল্টে দিতে চাইছেন। পাকিস্তানে নতুন নির্বাচন হওয়ার কথা অক্টোবরে।
ইমরান খান তার লাহোরের বাড়ি থেকে বিবিসির মিশাল হোসেনকে এই সাক্ষাৎকার দেন। তার কাছে প্রশ্ন রাখা হয়েছিল, এই সংকটের সমাধান কীভাবে হবে? জবাবে ইমরান খান বলেন, এই সংকট সমাধানের উপায় একটাই।
একটি অবাধ এবং মুক্ত নির্বাচন। এই নির্বাচন পাকিস্তানে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নিয়ে আসবে। আর রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে পারলেই কেবল অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনা সম্ভব। আর এখন এই রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে কেউই আসলে জানে না যে দেশ এখন কোন দিকে যাচ্ছে।
ইমরান বলেন, ‘মানুষ আসলে মোটেই নিশ্চিত নয়, নির্বাচন অক্টোবরে হবে কি না। এখন তো আমার মনে হচ্ছে, তারা অক্টোবরেও নির্বাচন করবে না।’ তিনি অভিযোগ করেন, মে মাসের ৯ তারিখে তাকে যেভাবে আটক করা হয়, সেটি ছিল আসলে একটি ‘অবৈধ অপহরণ’।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাকে আসলে অবৈধভাবে অপহরণ করা হয়েছিল। পরে সুপ্রিম কোর্টও রায় দিয়েছেন, এটি অবৈধ ছিল। আমাকে সেনাবাহিনী অপহরণ করেছিল। আমার সঙ্গে এমন আচরণ করা হয়েছে, যেন আমি একজন সন্ত্রাসবাদী। যখন মানুষ এসব ছবি দেখেছে, তখন তার একটা প্রতিক্রিয়া হয়েছে।’
তিনি বলেন, তার দলের ১০ হাজার সমর্থক এখন জেলখানায়। সন্ত্রাসের মিথ্যে অজুহাতে তাদের জেলে ভরা হয়েছে। ইমরান খান আশঙ্কা প্রকাশ করেন, সামনের সপ্তাহে তাকে আবার গ্রেপ্তার করা হতে পারে।
ইমরান বলেন, ‘আমি আগামীকাল মঙ্গলবার ইসলামাবাদে যাচ্ছি। আমার আশঙ্কা হচ্ছে তারা আমাকে গ্রেপ্তার করবে। ৮০ শতাংশ সম্ভাবনা আছে যে তারা আমাকে আবার গ্রেপ্তার করবে। তারা এখন আমার সমর্থকদের সামরিক আদালতে বিচার করার কথা বলছে। এটা তো পাকিস্তানের সংবিধানেরও বিরোধী।’
পাকিস্তানে প্রায় তিন দশক সরাসরি সেনাশাসন জারি ছিল। ১৯৫০ সালের পর থেকে দেশটিতে এমন নজির আজ পর্যন্ত নেই যে সেনাবাহিনীর সমর্থন ছাড়া কেউ ক্ষমতায় থাকতে পেরেছে।
বিবিসির মিশাল হোসেন প্রশ্ন রেখেছিলেন, ‘এখন তো মনে হচ্ছে আপনার সঙ্গে সেনাবাহিনী প্রধানের রীতিমত ব্যক্তিগত লড়াই শুরু হয়ে গেছে। এখন কী ধরণের মীমাংসা হতে পারে ? আপনি কি আসলে সেনাবাহিনীর ক্ষমতা খর্ব করতে চাইছেন?’
জবাবে ইমরান খান বলেন, ‘আমি পাকিস্তানকে বুঝি। এই দেশে সেনাবাহিনীর ভূমিকা বাদ দেওয়ার কোনো উপায় নেই। কারণ এটি পাকিস্তানের সঙ্গে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে আছে। আমি যে সাড়ে তিন বছর ক্ষমতায় ছিলাম, আমি তো সেনাবাহিনীর সঙ্গে কাজ করেছি, আমরা ভালোভাবেই কাজ করেছি। আমাদের ভালোই বোঝাপড়া ছিল, কেবল শেষ ছয় মাস ছাড়া। হঠাৎ সেনাপ্রধানের মনে হয়েছিল, আমি দেশের জন্য কল্যাণকর নই। অথচ আমাদের অর্থনীতি ভালো করছিল। তা সত্ত্বেও আমাদের সরকারকে সরিয়ে দেওয়া হলো।’
ইমরান খান বলেন, ‘আমাদের দেশের বর্তমান শাসন পদ্ধতি ব্যর্থ হয়েছে। দেশ পরিচালনার দায়িত্ব নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রীর হাতে। অথচ সেনাবাহিনীর হাতে রয়ে গেছে গুরুত্বপূর্ণ সব ক্ষমতা। কাজেই আমি বলেছিলাম, এখানে একটা নতুন ভারসাম্য আনতে হবে। কিন্তু এর মানে এই নয় যে আমি সেনাবাহিনীর ক্ষমতাকে চ্যালেঞ্জ করেছি।’
ক্ষমতায় ফিরে যাওয়ার জন্য তার কি বর্তমান সেনাপ্রধানের সঙ্গে একটা সমঝোতায় আসা দরকার নয়?—এ প্রশ্নের উত্তরে ইমরান খান বলেন, ‘আমি বারবার বলেছি আমি আলোচনায় রাজী। আলোচনার জন্য তো দুজন মানুষ লাগে। এখন পর্যন্ত তো সামরিক বাহিনী বা সেনাপ্রধানের দিকে থেকে সে রকম সাড়া আমি পাইনি। কোনো সেনাপ্রধানের বিরুদ্ধে আমার কোনো ক্ষোভ নেই।’
নিজের জীবন নিয়ে তিনি আশঙ্কায় আছেন কি না, এ প্রশ্নের উত্তরে ইমরান খান বলেন, ‘হ্যাঁ, এ রকম আশঙ্কা আমার আছে। ওরা ভয় পায় যে আমি যদি জেলেও থাকি, তার পরও আমার দলই নির্বাচনে জিতবে। এ জন্যই আসলে আমার জীবন এখন ঝুঁকিতে। দুবার আমাকে হত্যার চেষ্টা হয়েছে। কিন্তু তার চেয়েও বড় বিপদ এখন আমাদের গণতন্ত্রের জন্য।’