NYC Sightseeing Pass
ঢাকা, বৃহস্পতিবার, মে ১৫, ২০২৫ | ৩১ বৈশাখ ১৪৩২
ব্রেকিং নিউজ
পৃথিবীর ভবিষ্যৎ আমাদের প্রত্যেকের হাতে: প্রধান উপদেষ্টা সিরিয়ার ওপর থেকে সব নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার ঘোষণা ট্রাম্পের দিল্লি ক্যাপিটালসে ডাক পেলেন মোস্তাফিজ লন্ডনের মঞ্চে ‘ডিডিএলজে’, চমকে দিলেন শাহরুখ খান জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের বিষয়টি পুরোপুরি বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার -প্রেস সচিব শিগগিরই মিসরের সঙ্গে ভিসা অব্যাহতি চুক্তি : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা সৌদি আরবের সঙ্গে ১০০ বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র চুক্তি হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের ভারতের হামলায় ১১ সেনা নিহত, আহত ৭৮: পাকিস্তান আইএসপিআর কেন দাম কমে গেছে সুপারস্টার নয়নতারার পর্দা নামলো সেলিব্রিটি ক্রিকেট লিগের, বিজয়ী গিগাবাইট টাইটানস
Logo
logo

ফরেন পলিসির প্রতিবেদন যুক্তরাষ্ট্রের দিকে ঝুঁকছে বাংলাদেশ


খবর   প্রকাশিত:  ০৩ জানুয়ারী, ২০২৪, ১১:২২ এএম

ফরেন পলিসির প্রতিবেদন যুক্তরাষ্ট্রের দিকে ঝুঁকছে বাংলাদেশ

বাংলাদেশ দীর্ঘদিন ধরে জোট নিরপেক্ষ পররাষ্ট্রনীতি অনুসরণ করে আসছে। তবে দক্ষিণ এশিয়ার এই দেশটি এখন যুক্তরাষ্ট্র এবং এই অঞ্চলে মার্কিন অংশীদারদের অনুসৃত ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশল সম্পূর্ণভাবে গ্রহণ করার কাছাকাছি চলে যাচ্ছে বলে মনে হচ্ছে।

আর এই ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলের লক্ষ্য মূলত চীনকে ঠেকানো বা মোকাবিলা করা। বৃহস্পতিবার (৩০ মার্চ) এক প্রতিবেদনে এসব বিষয় সামনে এনেছে আন্তর্জাতিক সাময়িকী ফরেন পলিসি।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত মাসে বাংলাদেশ তার নিজস্ব ইন্দো-প্যাসিফিক আউটলুকের একটি খসড়া চূড়ান্ত করেছে। এই খসড়াতে এমন উদ্দেশ্যগুলোর ওপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করা হয়েছে যা যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলের প্রতিফলন করে। যেমন (ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে) একটি মুক্ত, নিরাপদ এবং শান্তিপূর্ণ অঞ্চলের প্রয়োজন বলে চূড়ান্ত খসড়ায় উল্লেখ করেছে বাংলাদেশ।

ফরেন পলিসি বলছে, ঢাকা এই পদক্ষেপটি এমন এক সময়ে নিয়েছে যখন যুক্তরাষ্ট্র এবং কয়েকটি মার্কিন প্রধান প্রধান মিত্র ইঙ্গিত দিয়েছে, বাংলাদেশেরও ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলের অংশ হওয়া উচিত। গত সপ্তাহে জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা নয়াদিল্লিতে একটি বক্তৃতা দেন।

তার বক্তৃতাকে এই অঞ্চলের জন্য একটি ‘নতুন পরিকল্পনা’ হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে এবং সেখানে তিনি নতুন অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব চুক্তিসহ বাংলাদেশের সাথে সহযোগিতার আহ্বান জানিয়েছেন। এছাড়া চলতি মাসেই যুক্তরাজ্যের ইন্দো-প্যাসিফিক মন্ত্রী অ্যান-মেরি ট্রেভেলিয়ান বাংলাদেশ সফর করেন।

ফরেন পলিসি বলছে, এই দেশগুলো কেন বাংলাদেশকে ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলে অংশ হতে বলছে তা বোঝা বেশ সহজ। বাংলাদেশ ভূ-রাজনৈতিক কৌশলগত অবস্থানে অবস্থিত, ভারতের সীমান্তবর্তী হওয়া ছাড়াও এই দেশটি দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া; উভয়ের প্রবেশদ্বার হিসেবেই কাজ করে।

যুক্তরাষ্ট্রের সাথে ঢাকার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে, চতুপক্ষীয় নিরাপত্তা সংলাপের অন্যান্য সদস্য (যেটি কোয়াড নামে পরিচিত) এবং অনেক ইউরোপীয় দেশের সঙ্গেও বাংলাদেশের সম্পর্ক বন্ধুত্বপূর্ণ। এই দুই বাস্তবতার কারণে বাংলাদেশ সবার কাছেই ভালো অংশীদার।

অন্যদিকে চীন অবকাঠামোগত ঋণের মাধ্যমে বাংলাদেশে তার নিজস্ব প্রভাব বাড়িয়েছে। যদিও চীনের এই ঋণকে মার্কিন কর্মকর্তারা ব্যক্তিগতভাবে ঢাকার জন্য খারাপ চুক্তি হিসেবে উল্লেখ করেছেন। এছাড়া চীনের প্রতিদ্বন্দ্বীরা ভারত মহাসাগর অঞ্চলের পশ্চিমাঞ্চলে জিবুতিতে অবস্থিত সামরিক ঘাঁটিসহ বেইজিংয়ের বর্ধিত নৌ উপস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন।

    মূলত এসবই বাংলাদেশের সামুদ্রিক এলাকায় অবস্থিত। এছাড়া চীন বাংলাদেশের অস্ত্রের বড় সরবরাহকারীও। তাই যুক্তরাষ্ট্রের ইন্দো-প্যাসিফিক ভিশনে বাংলাদেশের যোগদান হবে (যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমাদের) কৌশলগত বিজয়।

আরও একটি কৌতূহলী প্রশ্ন হলো- বাংলাদেশ কেন ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশল এবং চীনকে মোকাবিলার বিষয়ে পশ্চিমাদের লক্ষ্যের সাথে যুক্ত হতে চাইবে। বাংলাদেশের কর্মকর্তারা কখনোই পররাষ্ট্র নীতিতে নিরপেক্ষতার নীতি থেকে বিচ্যুত হননি। বাংলাদেশের লক্ষ্য প্রতিদ্বন্দ্বী রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে সম্পর্কের ভারসাম্য বজায় রাখা। ভারতের পররাষ্ট্রনীতিও জোট নিরপেক্ষ, তবে তারা চীনকে কৌশলগত প্রতিদ্বন্দ্বী বলে মনে করে।

যুক্তরাষ্ট্রের ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলে অংশগ্রহণ বাংলাদেশকে ওয়াশিংটনের প্রধান বাণিজ্য ও বিনিয়োগ অংশীদার হওয়ার কাছাকাছি নিয়ে যাবে। বাংলাদেশ ও ভারতের বর্তমান সরকার বেশ ঘনিষ্ঠ এবং নয়াদিল্লি সম্ভবত ঢাকাকে এই কৌশলটি গ্রহণ করতে উৎসাহিত করেছে।

দুই বছর আগে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপদেষ্টা গওহর রিজভী স্পষ্টভাবে বলেছিলেন, ‘আমরা ইন্দো-প্যাসিফিক সম্পর্কের অংশ হতে খুব ইচ্ছুক’ এবং ভারত ‘আমাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার।’

    এমনকি বাংলাদেশ ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলকে গ্রহণ করলেও একইসঙ্গে চীনকে শান্ত রাখার চেষ্টা করছে। ঢাকার নিজস্ব ইন্দো-প্যাসিফিক আউটলুক খসড়ায় বলা হয়েছে, বাংলাদেশ প্রতিদ্বন্দ্বিতা এড়াতে চায় এবং ঢাকার কোনও নিরাপত্তা লক্ষ্য নেই।

পর্যবেক্ষকরা বলছেন, নিজস্ব ইন্দো-প্যাসিফিক খসড়াকে ‘নীতি’ বা ‘কৌশল’ না বলে এটিকে একটি আউটলুক বা ‘দৃষ্টিভঙ্গি’ বলার একটি নরম অর্থ রয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশ এমন ইঙ্গিত এখনও দেয়নি যে, দেশটি চারদেশীয় জোট কোয়াডে যোগ দেবে।

ফরেন পলিসি বলছে, তবে এরপরও চীন উদ্বিগ্ন বলে মনে হচ্ছে। গত সপ্তাহে, বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত ওয়াশিংটনের বিরুদ্ধে ঢাকাকে মার্কিন শিবিরে টেনে নেওয়ার চেষ্টার অভিযোগ তোলেন। আর তাই চীনের সাথে সম্পর্ক গভীর করার জন্য বাংলাদেশ অবশ্যই যুক্তরাষ্ট্রের ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশল থেকে সরে আসতে পারে।

এছাড়া ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে নির্ধারিত বাংলাদেশের পরবর্তী নির্বাচন যদি অবাধ এবং সুষ্ঠু হয়নি বলে বিবেচিত হয়, তাহলে পশ্চিমা দেশগুলোও এই সম্পর্ক পিছিয়ে দিতে পারে।

আন্তর্জাতিক এই সাময়িকীটি বলছে, কয়েক মাস ধরে বাংলাদেশ সরকার জামাআতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বিয়া নামে একটি নতুন সন্ত্রাসী সংগঠনের উত্থানের বিষয়ে সতর্ক করেছে। এই মাসে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) একজন মুখপাত্র বলেছেন, এই দলটি বাংলাদেশে হামলার প্রশিক্ষণ নিচ্ছে। গত বছরের অক্টোবরে এই জঙ্গি সংগঠনের কথিত সাত সদস্যকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব।

    কয়েকটি পরিচিত ইসলামী জঙ্গি গোষ্ঠীকে একত্রিত করে জামাআতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বিয়া ২০১৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এটা ভালো কোনও খবর নয়: কারণ সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশে সন্ত্রাসী হামলা উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে।

এছাড়া র‌্যাবের বিরুদ্ধে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কারণে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়েছে। কারণ এই বাহিনী নতুন গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী প্রচেষ্টার নেতৃত্ব দিচ্ছে। ২০২১ সালের শেষের দিকে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসন গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে র‌্যাবের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা জারি করে।

বাংলাদেশে সন্ত্রাস দমনের প্রচেষ্টার সফলতা দেখতে যুক্তরাষ্ট্রের দৃঢ় আগ্রহ রয়েছে, তবে একইসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র শক্তিশালী এই বার্তাও পাঠাতে চায় যে, বাংলাদেশে মানবাধিকার ও গণতন্ত্রের বিষয়ে ওয়াশিংটন বেশ উদ্বিগ্ন।