ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভোলোদিমির জেলেনস্কি শনিবার রাশিয়ার বিরুদ্ধে আরো নিষেধাজ্ঞা আরোপের আহ্বান জানিয়েছেন। এর আগে রাতভর রুশ হামলায় অন্তত ১৪ জন নিহত ও বহু মানুষ আহত হয়। এই হামলার মাত্র কয়েক দিন পর যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেনের আলোচকদের মধ্যে আসন্ন বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে, যেখানে যুদ্ধবিরতির বিষয়ে আলোচনা হবে।
ইউক্রেনের জরুরি সেবাদানকারী সংস্থা জানিয়েছে, শুক্রবার দিবাগত রাতে রুশ হামলায় ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় দোনেৎস্ক অঞ্চলের দোব্রোপিলিয়া শহরে ১১ জন নিহত ও ৩০ জন আহত হয়েছে।
জেলেনস্কি টেলিগ্রামে এক পোস্টে লিখেছেন, ‘এই হামলা প্রমাণ করে, রাশিয়ার লক্ষ্য অপরিবর্তিত রয়েছে। তাই জীবন রক্ষায়, আমাদের আকাশ প্রতিরক্ষা (ব্যবস্থা) জোরদার করতে ও রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরো বাড়াতে আমাদের সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে।’
দোব্রোপিলিয়ায় এএফপির এক সাংবাদিক ধ্বংসপ্রাপ্ত আবাসিক ভবন, বিধ্বস্ত বাজার ও গুচ্ছবোমার আঘাতের চিহ্ন দেখতে পেয়েছেন। ৫৯ বছর বয়সী ইরিনা কোস্তেঙ্কো ও তার স্বামী রাতটি তাদের হলঘরে লুকিয়ে কাটান।
শনিবার সকালে বাইরে বেরিয়ে তিনি দেখেন, এক প্রতিবেশীর মৃতদেহ একটি কম্বলে ঢাকা অবস্থায় পড়ে আছে। কোস্তেঙ্কো এএফপিকে বলেন, ‘এটি ছিল চরম ভীতিকর, আমি এটি প্রকাশ করার মতো ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না।’
জেলেনস্কি দাবি করেন, রাশিয়া প্রথমে দোব্রোপিলিয়ায় হামলা চালায়, এরপর উদ্ধারকর্মীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছলে ‘ইচ্ছাকৃতভাবে’ তাদের লক্ষ্য করে দ্বিতীয় দফায় হামলা চালানো হয়। তিনি বলেন, ‘এটি একটি জঘন্য ও অমানবিক ভীতি প্রদর্শনের কৌশল, যা রাশিয়া প্রায়ই ব্যবহার করে।’
ট্রাম্পের নিষেধাজ্ঞার হুমকি
এদিকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেনের আলোচকদের মধ্যে আগামী সপ্তাহে সৌদি আরবে বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে।
দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কে টানাপড়েনের মধ্যে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।
এ ছাড়া হোয়াইট হাউসে এক বৈঠকের সময় ট্রাম্প প্রকাশ্যে জেলেনস্কিকে তিরস্কার করেন ও কূটনৈতিক আলোচনায় উৎসাহিত করার লক্ষ্যে কিয়েভের জন্য মার্কিন সহায়তা স্থগিত করেন। শুক্রবার ট্রাম্প বলেন, ‘আমি এখন ইউক্রেনের সঙ্গে কাজ করতে গিয়ে বেশি সমস্যায় পড়ছি, কারণ তাদের হাতে দর-কষাকষির উপযুক্ত কার্ড নেই। রাশিয়ার সঙ্গে সমঝোতা করা সম্ভবত আরো সহজ হবে।’
পাশাপাশি রাশিয়া যখন ইউক্রেনে একের পর এক হামলা চালাচ্ছে, তখন ট্রাম্প শুক্রবার নতুন নিষেধাজ্ঞা ও শুল্ক আরোপের হুমকি দেন। তিনি বলেন, ‘রাশিয়া ও ইউক্রেন, দুই হয়ে যাওয়ার আগেই তোমরা এখনই আলোচনার টেবিলে বসো।’
সৌদি আরবে সোমবার যুবরাজ মুহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে বৈঠক করতে যাচ্ছেন জেলেনস্কি। এ বৈঠকের পরপরই মঙ্গলবার সৌদি আরবে ইউক্রেন ও যুক্তরাষ্ট্রের আলোচকদের মধ্যে নতুন দফা আলোচনা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।
কুরস্কে পুনর্দখল
এদিকে রাশিয়া শনিবার দাবি করেছে, তারা ইউক্রেনের দখলে থাকা কুরস্ক অঞ্চলের তিনটি গ্রাম পুনর্দখল করেছে। রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তারা ভিক্তরোভকা, নিকোলায়েভকা ও স্তারায়া সরোচিনা পুনর্দখল করেছে।
গত গ্রীষ্মে ইউক্রেন কুরস্কে আক্রমণ শুরু করেছিল, তবে রাশিয়া এখন পর্যন্ত কিয়েভের দখলে থাকা দুই-তৃতীয়াংশ এলাকা পুনরুদ্ধার করেছে।
এ ছাড়া রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় শনিবার জানিয়েছে, গত রাতে তাদের আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ৩১টি ইউক্রেনীয় ড্রোন ধ্বংস করেছে। ইউক্রেনের ড্রোন হামলার লক্ষ্য ছিল রাশিয়ার কিরিশি তেল শোধনাগার। রাশিয়ার লেনিনগ্রাদ অঞ্চলের গভর্নর আলেকজান্দর দ্রোজদেনকো জানান, এ হামলার সময় এক ড্রোন শোধনাগারের কাছে ও আরেকটি শোধনাগারের ওপর গুলি করে ভূপাতিত করা হয়। এতে ‘একটি সংরক্ষণাগারের বাইরের কাঠামো’ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
অন্যদিকে ইউক্রেন সীমান্তবর্তী বেলগোরোদ অঞ্চলে এক ড্রোন হামলায় একজন বেসামরিক নাগরিক আহত হয়েছে বলে স্থানীয় গভর্নর ভিয়াচেস্লাভ গ্লাদকভ টেলিগ্রামে লিখেছেন।
আলোচনা অব্যাহত
রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় শুক্রবার নিশ্চিত করেছে, তারা ‘নির্ভুল হামলা’ চালিয়ে ইউক্রেনের জ্বালানি অবকাঠামো লক্ষ্যবস্তু করেছে। ইউক্রেনের বিমানবাহিনী জানিয়েছে, গত মাসে ফ্রান্স থেকে পাওয়া মিরাজ যুদ্ধবিমান তারা প্রথমবারের মতো এই আক্রমণ প্রতিহত করতে ব্যবহার করেছে।
রাশিয়ার হামলায় ইউক্রেনের কৃষ্ণ সাগর উপকূলীয় ওডেসা ও কেন্দ্রীয় পোলতাভা অঞ্চলের জ্বালানি স্থাপনাগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
এই হামলার পর ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) নেতারা প্রতিরক্ষা জোরদার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। কারণ যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেন থেকে সরে আসতে পারে—এমন আশঙ্কা তাদের মধ্যে তৈরি হয়েছে।
সূত্র : এএফপি