অভিশংসন পাশ করতে হলে দুই-তৃতীয়াংশ সংসদ সদস্যকে এ প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিতে হবে। শাসক দলের আটজন এমপিকে বিরোধীদের সঙ্গে যোগ দিতে হবে। কিছু এমপি সেই ইচ্ছাও প্রকাশ করেছেন। এই দলে আছেন এমপি কিম সাং-উক।
তিনি বিবিসিকে বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট আর দেশ চালানোর যোগ্য নন। তিনি সম্পূর্ণ অযোগ্য।’ তবে কিম জানান, সব এমপি তার পথে হাঁটবে না, ইউনের প্রতি অনুগত থেকেই যাবে একটি দলের।
নিজের অতি-রক্ষণশীল নির্বাচনি এলাকায় পক্ষ বদলানোর জন্য খুনের হুমকিও পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন কিম। তিনি বলেন, ‘আমার দল এবং সমর্থকরা আমাকে ‘বিশ্বাসঘাতক’ বলছে।’
নানা নাটকীয়তার পরে কিছু সময়ের জন্য মনে হয়েছিল, ইওল তার দলের সঙ্গে সমঝোতায় আসতে পেরেছেন। তিনি মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই পদত্যাগ করবেন এবং এর বিনিময়ে গত শনিবারের ভোটে তাকে ক্ষমতাচ্যুত করা হবে না। কিন্তু ক্রমেই স্পষ্ট হচ্ছে তার পদত্যাগের ইচ্ছা নেই। গতকাল বৃহস্পতিবার তিনি তার জায়গায় অনড় হয়ে ওঠেন। তিনি বলেন, ‘আমি শেষ অবধি লড়াই করব।’
তার বক্তৃতা ছিল অসংলগ্ন এবং ভিত্তিহীন ষড়যন্ত্র তত্ত্বে ভরা। এর মধ্যে তার একটি অসংলগ্ন যুক্তি ছিল, যেসব নির্বাচনে তিনি পার্লামেন্ট নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেননি, সেগুলোতে উত্তর কোরিয়া আগের কারচুপি করে থাকতে পারে। তিনি বলেন, পার্লামেন্ট একটি ‘দানব’, বিরোধী দল 'বিপজ্জনক' এবং তিনি সামরিক আইন ঘোষণা করে জনগণ ও গণতন্ত্রকে রক্ষার চেষ্টা করছিলেন।
ইওল এই সপ্তাহের বেশিরভাগ সময় আত্মগোপনে কাটিয়েছেন। অন্যদিকে পুলিশ প্রমাণ সংগ্রহের জন্য তার অফিসেও অভিযান চালানোর চেষ্টা করেছে। জনগণের ক্ষোভের মুখে তার দল ঘোষণা করেছিল, ইওলকে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার অনুমতি দেওয়া হবে না। যদিও আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সংবিধানে এমন পদক্ষেপ নেওয়ার কোনো বিধান নেই।
এখন প্রায় সবার প্রশ্ন হলো, এই মুহূর্তে কে দেশ পরিচালনা করছে? প্রেসিডেন্ট ইউনের সেনাবাহিনীর শীর্ষ কমান্ডাররা বলেছেন, তিনি যদি আবার সামরিক আইন জারির চেষ্টা করেন, তাহলে তারা সেই আদেশ অমান্য করবে।
এই মুহূর্তে দেশে এমন একটি ক্ষমতাশূন্য পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, যে দেশটি সারাবছরই উত্তর কোরিয়ার ক্রমাগর হামলার হুমকির মাঝে থাকে। ‘এই অবস্থার আইনি কোনও বন্দোবস্ত নেই। আমরা একটি বিপজ্জনক ও বিশৃঙ্খল পরিস্থিতিতে রয়েছি’, বলেন সোগাং বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অধ্যাপক লিম জি-বং।
বাইরে থেকে যারা দেখছেন, তাদের সবার কাছে এটি স্পষ্ট যে এই ধরনের অস্থিতিশীল ও অদ্ভুত পরিস্থিতি আর বেশি দিন চলতে দেওয়া যাবে না। তবে প্রেসিডেন্টের দল পিপল পাওয়ার পার্টি'র (পিপিপি) এটা বুঝতে কিছুটা সময় লেগে গিয়েছিলো যে প্রেসিডেন্ট ইউনের অভিশংসন অনিবার্য।
শুরুর দিকে নিজেদের রাজনৈতিক স্বার্থ সুরক্ষিত রাখতে দলের সবাই তাকে রক্ষা করেছিলেন। কারণ পিপিপি মনে করেছিলো যে প্রেসিডেন্ট ইউনকে যদি ক্ষমতাচ্যুত করা হয়, তাহলে দক্ষিণ কোরিয়ার বিরোধী নেতা লি জে-মিয়ং প্রেসিডেন্ট হয়ে যাবেন।
কিন্তু দেরিতে হলেও গতকাল বৃহস্পতিবার পিপিপি নেতা হান ডং-হুন প্রকাশ্যে এসে সকল সংসদ সদস্যকে ইউনের অভিশংসনের পক্ষে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘প্রেসিডেন্টকে অবিলম্বে পদ থেকে স্থগিত করা উচিত।’
দক্ষিণ কোরিয়ায় ঘটনাপ্রবাহ নাটকীয়ভাবে দ্রুত বদলে যাচ্ছে, ফলে সংবাদপত্রগুলো আর তাল মিলিয়ে চলতে পারছে না।
সূত্র : বিবিসি