ঢাকা: বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ ৯ আসামির বিরুদ্ধে নাইকো দুর্নীতি মামলায় তিন বিদেশিকে সাক্ষী করার অনুমতি দিয়েছেন আদালত। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আবেদনে শুনানির পর তা মঞ্জুর করে রবিবার এ আদেশ দেন ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৯-এর বিচারক শেখ হাফিজুর রহমান। এ আদেশের ফলে কানাডার রয়াল মাউন্টেড পুলিশ ও যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (এফবিআই) তিন কর্মকর্তাকে এ মামলায় সাক্ষী করার অনুমতি পেল দুদক।
এখন আদালত সমন জারি করলে তাদের আদালতে হাজির করা হবে বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা।
অন্য আসামিদের পক্ষে ছিলেন শেখ জাকির হোসেন, সৈয়দ জয়নাল আবেদীন মেজবাহ, জিয়া উদ্দিন জিয়া।
পরে অ্যাটর্নি জেনারেল সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমাদের দেশে নাইকো দুর্নীতি মামলার তদন্ত চলার সময় যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (এফবিআই) ও কানাডার রয়াল মাউন্টেড পুলিশও নাইকোর দুর্নীতি নিয়ে তদন্ত করে। পরে মিউচুয়াল লিগ্যাল আ্যাসিস্ট্যান্সের মাধ্যমে তাদের তদন্ত প্রতিবেদন দুটি চাইলে তা আমাদের কাছে পাঠায়। পরে ২০১৮ সালে একটি আবেদন করা হয় তদন্তকারীদের আমাদের মামলায় সাক্ষী হিসেবে হাজির করার জন্য।
দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান বলেন, ‘আবেদনে কানাডার রয়াল মাউন্টেড পুলিশের আন্তর্জাতিক দুর্নীতি দমন শাখার সদস্য কেভিন ডুগান, লয়েড স্কোইপ ও আমেরিকার বিচার বিভাগের অপরাধ শাখার অবসরপ্রাপ্ত বিশেষ তদারকি কর্মকর্তা ডেবরা লাপ্রেভোট গ্রিফিথকে সাক্ষী করা হয়েছে। এখন আদালত সমন জারি করলেই তাদের আনা হবে।’
খালেদা জিয়ার আইনজীবী আমিনুল ইসলাম বলেন, “কোনো মামলায় বিদেশি সাক্ষী আনতে হলে ‘অপরাধ সম্পর্কিত বিষয়ে পারস্পরিক সহায়তা আইন, ২০১২’-এর অধীনে আবেদন করতে হবে। আজকে যে আবেদনটা মঞ্জুর করা হয়েছে তা ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৪০ ধারায় করা হয়েছে। আমরা বলেছি, এই ধারায় বিদেশি সাক্ষীদের বিষয়ে কিছু বলা নাই। তার পরও আদালত আবেদনটি মঞ্জুর করেছেন। আমরা মনে করি, আদালত যথার্থ বিবেচনা করে আবেদন মঞ্জুরের আদেশ দেননি। এ আদেশের আইনগত কোনো ভিত্তি নাই। আমরা এ আদেশে সংক্ষুব্ধ। এ আদেশের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আবেদন করলে আমার মক্কেল (খালেদা জিয়া) প্রতিকার পাবেন। বিষয়টি জানানো হয়েছে। উচ্চ আদালতে আবেদন করা হবে।”
বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে করা নাইকো দুর্নীতি মামলার বাদী দুদকের সাবেক সহকারী পরিচালক মুহাম্মদ মাহবুবুল আলমের জবানবন্দি রেকর্ড শেষ হয়েছে। ১৭ সেপ্টেম্বর মামলার পরবর্তী শুনানির দিন ঠিক করেছেন ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৯-এর বিচারক শেখ হাফিজুর রহমান।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মামলাটি হয়েছিল সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে ২০০৭ সালের ৯ ডিসেম্বর। কানাডিয়ান প্রতিষ্ঠান নাইকোর সঙ্গে অস্বচ্ছ চুক্তির মাধ্যমে রাষ্ট্রের আর্থিক ক্ষতিসাধন ও দুর্নীতির অভিযোগে দুদকের সহকারী পরিচালক মুহাম্মদ মাহবুবুল আলম তেজগাঁও থানায় মোট পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলাটি করেন। ২০০৮ সালের ৫ মে খালেদা জিয়াসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেয় দুদক। এতে তাদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রের প্রায় ১৩ হাজার ৭৭৭ কোটি টাকা আর্থিক ক্ষতির অভিযোগ আনা হয়।
অন্য আসামিরা হলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সচিব খন্দকার শহীদুল ইসলাম, সাবেক সিনিয়র সহকারী সচিব সি এম ইউছুফ হোসাইন, বাপেক্সের সাবেক মহাব্যবস্থাপক মীর ময়নুল হক, বাপেক্সের সাবেক সচিব মো. শফিউর রহমান, ব্যবসায়ী গিয়াস উদ্দিন আল মামুন, বাগেরহাট-২-এর সাবেক সংসদ সদস্য এম এ এইচ সেলিম ও নাইকোর দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক ভাইস প্রেসিডেন্ট কাশেম শরীফ।
সাবেক আইনমন্ত্রী বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, সাবেক জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী এ কে এম মোশাররফ হোসেন এই মামলায় আসামি থাকলেও তারা মারা যাওয়ায় অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। গত বছরের ১৯ মার্চ এ মামলার অভিযোগ গঠন করেন আদালত। পরে গত ২৩ মে থেকে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। প্রথম সাক্ষী হিসেবে সেদিন সাক্ষ্য দেন মামলার বাদী মুহাম্মদ মাহবুবুল আলম। ১২ সেপ্টেম্বর তার জবানবন্দি দেওয়া শেষ হলে আসামিপক্ষ তাকে জেরা শুরু করে। কিন্তু রবিবার (১৭ সেপ্টেম্বর) আর জেরা হয়নি। পরে আসামিপক্ষের আবেদনের প্রেক্ষিতে আগামী ২৩ অক্টোবর পর্যন্ত জেরা মুলতবি করেন আদালত।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় দণ্ডিত হয়ে খালেদা জিয়া ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে প্রায় দুই বছর কারাগারে ছিলেন। সাবেক এ প্রধানমন্ত্রীর দণ্ড স্থগিত করে দুটি শর্তে সরকারের নির্বাহী আদেশে তাকে মুক্তি দেওয়া হয় ২০২০ সালের ২৫ মার্চ। তখন করোনা মহামারির মধ্যে তার পরিবারের আবেদনে তাকে ছয় মাসের জন্য মুক্তি দেওয়া হয়। এর পর থেকে পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ছয় মাস অন্তর তার মুক্তির মেয়াদ বাড়ানো হচ্ছে।