NYC Sightseeing Pass
ঢাকা, শুক্রবার, এপ্রিল ২৫, ২০২৫ | ১২ বৈশাখ ১৪৩২
ব্রেকিং নিউজ
ভ্যাটিকানের উদ্দেশ্যে কাতার ত্যাগ করলেন প্রধান উপদেষ্টা সৌদির কাছে ১০০ বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র বেচবে যুক্তরাষ্ট্র, চুক্তি শিগগির হৃদয়কে দ্বিতীয়বার নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্তকে ‘হাস্যকর’ বললেন তামিম পুলিশের সামর্থ্য বৃদ্ধিতে সহযোগিতা করবে ইতালি : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জনগণমুখী সংসদের জন্য ই-পার্লামেন্ট অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ : আইন উপদেষ্টা প্রবাসীদের সহযোগিতায় দেশের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়িয়েছে : ড. ইউনূস শান্তি আলোচনা বাধাগ্রস্ত, জেলেনস্কিকে দায়ী করছেন ট্রাম্প কাশ্মীরে হামলা মোদী সরকারের পাশে দাঁড়ালো বিরোধীদলগুলো বিদেশের ৪০ শহরে মুক্তি পাচ্ছে ‘জংলি’ কাতারের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার বৈঠক
Logo
logo

রাঙামাটিতে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ৩৮০০ হেক্টর ফসলি জমি


খবর   প্রকাশিত:  ২৭ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫, ০৪:০৯ এএম

রাঙামাটিতে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ৩৮০০ হেক্টর ফসলি জমি

বেশ কিছুদিন ধরে চলমান টানা বৃষ্টিপাতের ফলে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের কারণে পার্বত্য জেলা রাঙামাটির বিভিন্ন উপজেলা বন্যা কবলিত হয়েছে। বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে হাজার হাজার হেক্টর ফসলি জমি। পানিবন্দি হয়ে আছেন কয়েক হাজার মানুষ।

রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পাহাড়ী অঞ্চল হলেও অতিবৃষ্টির ফলে উজানের ঢলে এখানকার নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে। জেলার বরকল, বাঘাইছড়ি, জুরাছড়ি, লংগদু, বিলাইছড়ি উপজেলা বন্যা কবলিত হয়েছে। এরমধ্যে বাঘাইছড়ি এবং জুরাছড়ি উপজেলার বন্যা পরিস্থিতি খুবই নাজুক। বাঘাইছড়ি উপজেলার বঙ্গলতলী, বাঘাইছড়ি, রুপকারী, মারিশ্যা, আমতলী ও খেদারমারা ইউনিয়নসহ বাঘাইছড়ি পৌরসভার ১, ২, ৪, ৬ ও ৭নং ওয়ার্ডের নিচু অঞ্চলের বসতবাড়ি, আবাদি জমি ও রাস্তাঘাট পানিতে তলিয়ে গেছে। পানি প্রবেশ করেছে উপজেলা পরিষদ কার্যালয়েও। 

এদিকে বন্যার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে হাজার হাজার হেক্টর ফসলি জমি। আউশ, আমনের ধানখেতসহ বেশকিছু সবজির জমি পানিতে তলিয়ে গেছে। রাঙামাটি জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, জেলার ১০টি উপজেলা মিলিয়ে ২০ হাজার ৭১৬ হেক্টর ফসলি জমির মধ্যে ৩৮৩৪ হেক্টর জমি বন্যায় আক্রান্ত হয়েছে। যার মধ্যে ২৩০৩ হেক্টর ফসলি জমি সম্পূর্ণ এবং ১৫৩১ হেক্টর জমি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

অন্যদিকে জুরাছড়ি উপজেলার মৈদং ইউনিয়ন, দুমদুম্যা ইউনিয়ন ও বনযোগী ছড়া ইউনিয়নের অনেক গ্রাম প্লাবিত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এসব গ্রামে ১০-১৫ হাজার মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে। পানির কারণে বেশিরভাগ এলাকায় ভেঙে পড়েছে বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা। ফলে দুর্গম অনেক পাহাড়ি এলাকায় মোবাইল নেটওয়ার্ক দূর্বল হয়ে পড়ায় যোগাযোগ করা যাচ্ছে না।

বাঘাইছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুমানা আক্তার বলেন, বাঘাইছড়ির নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়াতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে লোকজন। পাহাড়ি ঢলে উপজেলা পরিষদ কার্যালয়েও পানি ঢুকে গিয়েছিল। বাঘাইছড়ি পৌরসভা ও উপজেলা প্রশাসন সমন্বয় করে বন্যার্তদের সাহায্য সহযোগিতায় কাজ করছে। পাশাপাশি মারিশ্যা জোনও বন্যার্তদের সাহায্যে এগিয়ে এসেছে। এখনো পর্যন্ত আমরা ৪০ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ পেয়েছি।

এদিকে জুরাছড়ি ও বিলাইছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মিজানুর রহমানের সরকারি মোবাইল নাম্বারটি বন্ধ থাকায় যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

বাঘাইছড়ি, জুরাছড়ি উপজেলার পাশাপাশি বিলাইছড়ি ও বরকল উপজেলার অনেক এলাকা বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে। বরকল উপজেলার কলাবুনিয়া, ভূষণছড়া ও কুকিমারা ইউনিয়ন বন্যা কবলিত হয়েছে। উপজেলার সুবলং ইউনিয়নের মাইসছড়ি এলাকায় নৌকা পারাপার করতে গিয়ে পানিতে ডুবে নিখোঁজ রয়েছে সুমেন চাকমা নামে এক কিশোর। বিলাইছড়ি উপজেলার ফারুয়া ইউনিয়ন বন্যায় প্লাবিত হয়েছে।

বরকল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাজমা বিনতে আমীন বলেন, বরকল উপজেলার ৪টি ইউনিয়ন বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে। আমরা ১৭টি আশ্রয়কেন্দ্র খুলেছি যেখানে ৫৬২ জন ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। তাদের তিনবেলা খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। উপজেলার বিভিন্ন স্থানে চাল ও পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট বিতরণ করা হচ্ছে।

বন্যায় পানিবন্দী এলাকাসমূহে বিশুদ্ধ খাবার পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। টিউবওয়েল ডুবে যাওয়ায় খাবার পানি সংগ্রহে বেগ পেতে হচ্ছে বন্যা কবলিত এলাকার বাসিন্দাদের। এই বিষয়ে রাঙামাটি জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী পরাগ বড়–য়া বলেন, আমাদের উপজেলা অফিসগুলোর সঙ্গে আমরা সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছি। যেসব উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতি খুব খারাপ সেসব স্থানে উপজেলা প্রকৌশলীদের মাধ্যমে পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট, হাইজিন কিট বিতরণ করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে আমরা বাঘাইছড়ি, বরকল, কাপ্তাই, বিলাইছড়িসহ বেশকিছু উপজেলায় প্রায় দেড় লাখ পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট বিতরণ করেছি। আরও এক লাখ ট্যাবলেট প্রস্তুত আছে, চাহিদা সাপেক্ষে সেগুলোও বন্যা কবলিত উপজেলাগুলোতে বিতরণ করা হবে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মনিরুজ্জামান বলেন, বন্যার কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে জুরাছড়ি ও বাঘাইছড়ি এলাকার ফসলি জমিগুলো। যেসকল জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সেসব জমিতে আউশ, আমন ধান, আদা, হলুদ ও সবজি চাষ করা হয়। জুরাছড়ি উপজেলার ২২ হেক্টর আউশ ধানের জমি ও ৮৮ হেক্টর আমন ধানের জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং বাঘাইছড়ি উপজেলার ৬০০ হেক্টর আউশ ধানের জমি ও ১২০০ হেক্টর আমন ধানের জমি বন্যার পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

রাঙামাটি জেলা প্রশাসনের তথ্য মতে, প্রায় ৩৫ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে আছে। অনেক উপজেলা দুর্গম হওয়াতে ত্রাণ পৌঁছাতে ও যোগাযোগ করতে বেগ পেতে হচ্ছে। জেলায় মোট ২৪২টি আশ্রয়কেন্দ্রে ৪৫০০ এর মত মানুষ আশ্রয় নিয়েছে।