NYC Sightseeing Pass
ঢাকা, বুধবার, এপ্রিল ৩০, ২০২৫ | ১৭ বৈশাখ ১৪৩২
ব্রেকিং নিউজ
সেই কনস্টেবল পেলেন পিপিএম পদক, দেখা করলেন প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে আজারবাইজানকে বিনিয়োগের পাশাপাশি মানবসম্পদ কাজে লাগানোর আহ্বান ‘তারা এখন আমাকে সম্মান করেন’—বেজোস ও জাকারবার্গ সম্পর্কে ট্রাম্প বাংলাদেশে ১০ বছরের লাইসেন্স পেল স্টারলিংক ‘কিং’ শাহরুখের রানি দীপিকা, জমবে কি পুরনো ম্যাজিক মানুষ ভালো সমাধান মনে করছে অন্তর্বর্তী সরকারকেই-ড. মুহাম্মদ ইউনূস আমরা জটিল সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি : শিক্ষা উপদেষ্টা পাকিস্তানের ১৬ ইউটিউব চ্যানেল ভারতে নিষিদ্ধ, বিবিসিকেও সতর্কতা কানাডার নির্বাচনে ফের জয় পেয়েছে লিবারেল পার্টি ইরেশের বিরুদ্ধে মামলা হওয়ায় বাঁধনসহ তারকাদের প্রতিবাদ
Logo
logo

মার্কিন আদালতের নথিতেও বিএনপির সন্ত্রাসী তৎপরতার অভিযোগ


খবর   প্রকাশিত:  ০৫ ডিসেম্বর, ২০২৩, ০১:৪৯ এএম

মার্কিন আদালতের নথিতেও বিএনপির সন্ত্রাসী তৎপরতার অভিযোগ

ঢাকা: শুধু কানাডার আদালত নয়, যুক্তরাষ্ট্রের আদালতের বিভিন্ন মামলার নথিতেও বিএনপির সন্ত্রাসী তৎপরতার তথ্য রয়েছে। মামলাগুলোর বেশ কয়েকটি ক্ষেত্রেই আশ্রয়প্রার্থী ব্যক্তি নিজেদের বিএনপির সদস্য বা এর সঙ্গে সম্পৃক্ততার তথ্য দিয়েছেন। সে সময় রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপির ভূমিকা এবং তা সন্ত্রাসী সংগঠনের ভূমিকার সঙ্গে সাদৃশ্য কি না সেসব বিষয় উঠে এসেছে। এমনকি কোনো কোনো ক্ষেত্রে আবেদন প্রত্যাখানের কারণ হিসেবে বিএনপিকে ‘আনডেসিগনেটেড’/‘টায়ার থ্রি’ সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে তালিকাভুক্ত থাকার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

 

‘টায়ার থ্রি’ সন্ত্রাসী সংগঠন বলতে এমন সংগঠনকে বোঝায় যা নিষিদ্ধ নয় এবং যাদের গঠনতন্ত্র প্রকাশ্যে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বা মানবাধিকারবিরোধী কর্মকাণ্ড সমর্থন করে না। কিন্তু তারা সন্ত্রাসীদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দেয় ও সহিংস কর্মসূচিতে ইন্ধন জোগায়। একে ‘আনডেসিগনেটেড টেরর গ্রুপ’ও বলা হয়।

যুক্তরাষ্ট্রের ল ফেয়ার ইনস্টিটিউটের প্রকাশনা ল ফেয়ারে প্রকাশিত নিবন্ধে বলা হয়েছে, ২০০১ সালের যুক্তরাষ্ট্রের প্যাট্রিয়ট অ্যাক্টে সন্ত্রাসের অভিযোগে বিদেশি কোনো গোষ্ঠীকে ‘আনডেসিগনেটেড’/ ‘টায়ার থ্রি’ সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে অভিহিত করার ক্ষমতা অভিবাসন কর্মকর্তা ও অভিবাসনবিষয়ক বিচারকদের দেওয়া হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত কোনো বিদেশি এ সিদ্ধান্তের শিকার হলে তিনি এর বিরুদ্ধে আপিল করতে পারেন।

 

কেসটেক্সট ডট কমে ২০২২ সালের ২৪ মার্চ প্রকাশিত খলিলুর রহমান বনাম ‘ইউএস ডিপার্টমেন্ট অব হোমল্যান্ড সিকিউরিটি’ (যুক্তরাষ্ট্রের স্বরাষ্ট্র দপ্তর) মামলায় বলা হয়েছে, ২০১৩ সালে বিএনপির ছাত্র শাখা জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সদস্য খলিলুর রহমান যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন করেন। তার যুক্তি ছিল, বাংলাদেশে তিনি বিরূপ পরিস্থিতির শিকার হয়েছেন। সে সময় অভিবাসনবিষয়ক বিচারক তাকে প্রশ্ন করেছিলেন, তিনি বা তার দল প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে সংঘাতে জড়িয়েছিলেন কি না।

খলিলুর রহমান বলেছেন, তিনি ছাত্রদলের জন্য সদস্য সংগ্রহ করেছেন। তিনি কোনো সংঘাতের কথা নাকচ করার পর তার আবেদন মঞ্জুর হয়।

 

২০১৬ সালে আশ্রয়ের স্ট্যাটাস হালনাগাদের জন্য আবেদন করেন খলিলুর। সেটি নিষ্পত্তি হওয়ার আগে ২০১৯ সালে তিনি তার স্ত্রী ও সন্তানকে যুক্তরাষ্ট্রে নেওয়ার আবেদন করেন। 

ইউএস সিটিজেনশিপ অ্যান্ড ইমিগ্রেশন সার্ভিসেস (ইউএসসিআইএস) ২০২০ সালে খলিলুর রহমানদের আবেদন প্রত্যাখ্যান করে।

এর কারণ হিসেবে বিএনপি ও জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সঙ্গে তাদের সম্পৃক্ততার কথা উল্লেখ করা হয়।

 

ইউএসসিআইএস এ ক্ষেত্রে তিনটি বিষয়ে মত প্রকাশ করে। এগুলো হলো- যুক্তরাষ্ট্রের আইন অনুযায়ী [ইউএসকোড ১১৮২(এ)(৩)(বি) এর উপধারা (৬)(৩)] আনুযায়ী বিএনপি ও জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের ভূমিকা ‘টায়ার থ্রি’ সন্ত্রাসী সংগঠনের সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ। দ্বিতীয়ত, বিএনপি ও জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলে খলিলুর রহমানের ভূমিকা ‘উপধারা (৪)(৫)(গগ)’-এর সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ। তৃতীয়ত, খলিলুর রহমানের অন্যান্য কর্মকাণ্ড ‘উপধারা (৪)(৬)(ঘঘ)’র আওতায় সন্ত্রাসী সংগঠনকে সহযোগিতা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ। এগুলোর ভিত্তিতে ইউএসসিআইএস সিদ্ধান্ত নেয়, খলিলুর রহমান যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের জন্য আইনগতভাবে অযোগ্য। তার সঙ্গে সম্পৃক্ততার কারণে তার পরিবারের সদস্যরাও যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে অযোগ্য। 

জানা যায়, ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া ও সেটন হল ইউনিভার্সিটিসহ যুক্তরাষ্ট্রের বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে অভিবাসনসংক্রান্ত আইন পড়ানোর সময় এসব মামলা এবং ‘টায়ার থ্রি’ সন্ত্রাসী সংগঠন সম্পর্কে পড়ানো হয়। 

নিউ ইয়র্ক, ক্যালিফোর্নিয়া, টেক্সাস ও নিউ জার্সির অভিবাসন সম্পর্কিত আদালতের রায়ে দেখা যায়, হোমল্যান্ড সিকিউরিটি কর্তৃপক্ষ বিএনপিকে ‘টায়ার থ্রি’ বা তৃতীয় ক্যাটাগরির সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছে- এমন যুক্তিতে রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থীদের আবেদন প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে। শুধু টেক্সাসের এলপাসো ডিটেনশন সেন্টারে বিএনপি পরিচয়ে আশ্রয় প্রার্থনাকারী ৮০ জনের বেশি বাংলাদেশি আটক রয়েছেন বলে জানা গেছে। 

আইনিসেবা প্রতিষ্ঠান লেক্সিসনেক্সিসের ওয়েবসাইটে ২০১৫ সালের ৭ আগস্ট যুক্তরাষ্ট্রের নিউজার্সির এলিজাবেথ ইমিগ্রেশন কোর্টের একটি মামলার রায়ের অনুলিপির সঙ্গে নিজস্ব বিশ্লেষণ প্রকাশ করা হয়েছে। সেখানে বিএনপির একজন সদস্যের আশ্রয়ের পক্ষে উদাহরণ দিয়ে দাবি করা হয়েছে, বিএনপি সন্ত্রাসী সংগঠন নয়। 

অথচ লেক্সিসনেক্সিসের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত ২০১৫ সালের ওই বিশ্লেষণেই বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের স্বরাষ্ট্র দপ্তর বিএনপিকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে মনে করার পেছনে দুটি যুক্তি দেয়। এর একটি হলো, সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোর সঙ্গে অতীত ও বর্তমান সম্পর্কের কারণে বিএনপি একটি সন্ত্রাসী সংগঠন। দ্বিতীয়ত, বিএনপির সদস্যরা সহিংসতায় জড়িত। এই কারণেও বিএনপি সন্ত্রাসী সংগঠন।

আদালত তখন বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের স্বরাষ্ট্র দপ্তরের ওই দাবি তাদের কাছে অভিনব মনে হয়েছে। কারণ ওই সময় পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনো আদালতের সিদ্ধান্ত প্রকাশিত হয়নি। তা ছাড়া সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত গোষ্ঠীগুলোর চেয়ে বিএনপি আলাদা। যুক্তরাষ্ট্র সরকার বিএনপিকে সন্ত্রাসী সংগঠন মনে করছে এমন কোনো বিবৃতি ওই আদালতে উপস্থাপন করা হয়নি। 

ওই আদালত বিএনপির সদস্যদের সহিংসতা নিয়ে উদ্বিগ্ন হলেও বিএনপি সন্ত্রাসী সংগঠনে পরিণত হয়েছে এমন সিদ্ধান্ত দেননি। বরং আশ্রয় আবেদনকারীর পক্ষে রায় দিয়ে আদালত বলেছিলেন, বিএনপি ‘টায়ার থ্রি’ সন্ত্রাসী সংগঠনে পরিণত হয়ে থাকলেও আশ্রয় আবেদনকারী প্রমাণ করেছেন যে তিনি বিএনপির সন্ত্রাসী ভূমিকার কথা জানতেন না। 

ওদিকে কানাডার আদালতের রায়ে বিএনপিকে নিষিদ্ধ ঘোষিত সন্ত্রাসী সংগঠন না বললেও বিএনপির নেতাকর্মীরা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ও সহিংসতায় জড়িত ও নৈরাজ্য সৃষ্টিকারী এবং গণতান্ত্রিক সরকার উৎখাতের অপচেষ্টার সঙ্গে জড়িত বলে মন্তব্য করা হয়েছে।