ম. তামিম। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল অনুষদের ডিন, পেট্রোলিয়াম প্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক এবং সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টার জ্বালানিবিষয়ক বিশেষ সহকারী। প্রথম আলোর সঙ্গে তিনি কথা বলেছেন বৈশ্বিক জ্বালানি পরিস্থিতি, জ্বালানির দাম, জ্বালানির ক্ষেত্রে বাংলাদেশের আমদানিনির্ভরতা, গ্যাসের মজুত ও সমুদ্রে গ্যাস অনুসন্ধানে স্থবিরতা প্রসঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন এ কে এম জাকারিয়া
ম. তামিম: বাংলাদেশে আমরা যে জ্বালানি তেল ব্যবহার করি, এর পুরোটাই আমদানি করতে হয়। কিছু আমরা আমদানি করি ক্রুড অয়েল বা অপরিশোধিত তেল হিসেবে, যেগুলো আমরা রিফাইনারিতে রিফাইন করি। আর ফিনিশড প্রোডাক্ট হিসেবে আমরা মূলত ডিজেল আমদানি করি, প্রায় ৪৫ লাখ ব্যারেল। ফার্নেস অয়েল প্রায় ১৪ লাখ টনের মতো। আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম ওঠানামা করলে বাংলাদেশ ও এর অর্থনীতির ওপর বড় ধরনের প্রভাব পড়ে। অন্যদিকে প্রাকৃতিক গ্যাসের (যেটা আমরা এলএনজি হিসেবে আমদানি করি) দাম যুদ্ধের আগে থেকেই বাড়তির দিকে ছিল।
২০২০ সাল থেকে নানা কারণে জ্বালানি তেলের দাম বাড়তে শুরু করে। ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে দামটা আরও বেড়ে যায়। যুদ্ধের আগে যে তেল বিক্রি হতো ৮০ ডলারে, এখন তা ১১২ থেকে ১১৫ ডলারে গিয়ে ঠেকেছে। সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে কোভিডের সময় বিশ্বব্যাপী অনেক রিফাইনারি বন্ধ হয়ে গেছে। কোভিড কমে যাওয়ার পর যখন জ্বালানির চাহিদা স্বাভাবিক হতে থাকে, তখন কম রিফাইনিং ক্যাপাসিটির কারণে একটা সংকট তৈরি হয়েছে। অপরিশোধিত তেল শোধনের ক্ষেত্রে রিফাইনারিগুলো সাধারণত ব্যারেলপ্রতি ১০ ডলার নিয়ে থাকে। সেই হিসাবে ১১০ ডলারের অপরিশোধিত তেলের সঙ্গে ১০ ডলার যুক্ত করলে ব্যারেল প্রতি রিফাইনড তেলের দাম হওয়া উচিত ১২০ ডলার। কিন্তু রিফাইনারি সংকটের কারণে তা হয়ে গেছে ১৬০ থেকে ১৭০ ডলার। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ইউক্রেন সংকট। ইউরোপ এত দিন রাশিয়ার তেলের ওপর নির্ভরশীল ছিল। এখন তারা মধ্যপ্রাচ্যের দিকে ঝুঁকেছে। আমরা মূলত সেখান থেকেই জ্বালানি তেল ও এলএনজি কিনে থাকি। ফলে তেল ও গ্যাস দুই দিক থেকেই আমরা বেশ চাপের মুখে পড়েছি।ম. তামিম: কোনো যুক্তি ছাড়াই মন্ত্রণালয় থেকে এটা বাতিল করা হয়েছে। পেট্রোবাংলা থেকে একটা কমিটি করা হয়েছিল। তারা সবকিছু বিবেচনায় নিয়ে সমুদ্রে জরিপ করার অভিজ্ঞতা আছে, এমন একটি নামকরা মার্কিন প্রতিষ্ঠানকে বাছাই করেছিল। দুবারই মন্ত্রণালয় থেকে বাতিল করা হয়েছে। কেন তা আমরা জানি না। অথচ এই জরিপটা যদি হতো, তবে আমরা জানতে পারতাম যে সমুদ্রে আমাদের সম্ভাব্য গ্যাসের মজুত কতটুকু। আমি বলব যে সমুদ্র–গ্যাস অনুসন্ধানের বিষয়টি পুরোপুরি উপেক্ষা করা হচ্ছে। অন্যদিকে স্থলভাগেও যে বাপেক্সনির্ভর পরিকল্পনা করা হয়েছিল, সেটাও পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে। বাপেক্স বলি বা পেট্রোবাংলা বলি, তাদের ধারণা যে বাংলাদেশে আর কোনো গ্যাস নেই। এত দিন পেট্রোবাংলা বলেছে যে ২০২৫ সালের মধ্যে তাদের অধীন গ্যাসক্ষেত্রগুলো থেকে তারা অতিরিক্ত ৬০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উৎপাদন করবে নানা পদক্ষেপের মাধ্যমে। এটা আগেই করা গেলে আমরা এতটা সংকটে পরতাম না। আরেকটি কথা আমি বলতে চাই, পেট্রোবাংলা একটি খুবই টেকনিক্যাল প্রতিষ্ঠান। এখানে ধারাবাহিকতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সাত–আট বছর ধরে আমরা দেখতে পাচ্ছি যে এর নেতৃত্বে আমলাদের বসানো হচ্ছে। তিন থেকে ছয় মাস কাজ করে অনেকে চলে যাচ্ছেন আবার নতুন লোক আসছেন। নিজস্ব জ্বালানি যে গুরুত্বপূর্ণ সেটা তাঁরা বুঝছেন না।