চলতি বছরের এপ্রিলে পাকিস্তানের পার্লামেন্টে অনাস্থা ভোটে ক্ষমতা হারান দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। এরপর থেকে পাকিস্তান তেহরিক-ই ইনসাফের (পিটিআই) এই প্রধান তার সরকারের ক্ষমতাচ্যুতির পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের হাত রয়েছে বলে অভিযোগ করে আসছেন।

তবে এখন থেকে আর এই অভিযোগে যুক্তরাষ্ট্রকে অভিযুক্ত করবেন না বিশ্বকাপজয়ী সাবেক এই তারকা ক্রিকটার। ইমরান নিজেই এই তথ্য সামনে এনেছেন। সোমবার (১৪ নভেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম দ্য ডন।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পিটিআই চেয়ারম্যান ইমরান খান বলেছেন, গত এপ্রিলে তার সরকারকে ক্ষমতা থেকে অপসারণের জন্য মার্কিন প্রশাসনকে আর ‘দোষারোপ’ করেন না তিনি। ইমরানের রোববারের এই মন্তব্য অনেকের কাছেই বেশ আশ্চর্যজনক বলে মনে হয়েছে।

কারণ পাকিস্তানের পার্লামেন্টে অনাস্থা ভোটের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে অপসারিত হওয়ার পর থেকে ইমরান খান ধারাবাহিকভাবে এই প্রচারণা চালিয়েছেন যে, বিদেশী ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে তাকে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়েছে এবং এর পেছনে মার্কিন প্রশাসন সরাসরি জড়িত ছিল।

এদিকে পৃথক আরেক বক্তৃতায় সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী দাবি করেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফকে পাকিস্তানে স্বচ্ছ নির্বাচন আয়োজনের ‘অনুমতি না দিয়ে’ দেশকে বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দিচ্ছেন পিএমএল-এন সুপ্রিম নেতা নওয়াজ শরিফ।

লাহোরে নিজের বাসভবন থেকে ভিডিও লিঙ্কের মাধ্যমে দলীয় সমর্থকদের উদ্দেশে একাধিক ভাষণে নওয়াজ শরিফের তীব্র সমালোচনা করেন ইমরান। তিনি বলেন, পিটিআই-এর কাছে পরাজয়ের ভয়ে নওয়াজের ছোট ভাই শেহবাজ নির্বাচনে যাচ্ছেন না।

ইমরান খান বলেন, ‘সমগ্র পাকিস্তানি জাতির জন্য একটি গুরুতর উদ্বেগের বিষয় যে, সুপ্রিম কোর্টে দোষী সাব্যস্ত একজন ব্যক্তি পাকিস্তানের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। তিনি এমন সব সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন যার মধ্যে দেশের নতুন সেনাপ্রধানের নিয়োগও রয়েছে।’

পাকিস্তানের সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যারা ‘সরকার পরিবর্তনের ষড়যন্ত্রের’ মাধ্যমে ক্ষমতায় গেছে তারা নির্বাচন আয়োজন থেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। কারণ তারা জানে যে, তারা আমার বিরুদ্ধে (নির্বাচনে) হেরে যাবে এবং তাদের দুর্নীতি ও লুট করা অর্থ তারা বাঁচাতে পারবে না।’

ইমরান খানের মতে, ‘সরকার পরিবর্তনের পরীক্ষা’ ব্যর্থ হয়েছে কিন্তু এর পরিকল্পনাকারী এবং সুবিধাভোগীরা এখনও তাদের ভুল স্বীকার করছে না। তিনি অভিযোগ করেন, বর্তমান শাসকরা ‘কোনও শীর্ষ কর্মকর্তাকে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ করেননি যেন তাদের লুট করা অর্থ সর্বদা সুরক্ষিত থাকে’।

আন্তর্জাতিক স্তরে পাকিস্তানকে বিচ্ছিন্ন করার অভিযোগে শেহবাজ শরিফের নেতৃত্বাধীন পিডিএম সরকারকেও তিরস্কার করেন ইমরান খান। তিনি বলেন, শেহবাজ সরকার গত সাত মাসে এই ইস্যুতে ঠিক কী করেছে তা জাতির কাছে ব্যাখ্যা করা উচিত।

আলাদাভাবে এক সাক্ষাৎকারে ইমরান খান বলে, তার সরকারকে ক্ষমতা থেকে অপসারণের জন্য মার্কিন প্রশাসনকে তিনি আর দায়ী মনে করেন না। যদিও এই বছরের এপ্রিলে তার সরকারের ক্ষমতাচ্যুতির পেছনে মার্কিন-সমর্থিত ষড়যন্ত্রের কথা বারবারই বলে এসেছেন ইমরান।

পাকিস্তানের সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি ওয়াশিংটন এবং ইসলামাবাদের মধ্যে মর্যাদাপূর্ণ সম্পর্ক চান। ব্রিটিশ সংবাদপত্র ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে পিটিআই চেয়ারম্যান এসব কথা বলেন।

সরকার উৎখাতের কথিত ষড়যন্ত্রে মার্কিন ভূমিকা সম্পর্কে ইমরান খানের মন্তব্য উদ্ধৃত করে ফাইন্যান্সিয়াল টাইমস জানিয়েছে, ‘যতদূর আমি জানি, এটি শেষ হয়ে গেছে। এটি আমি পেছনে ফেলে এসেছি।’

পাকিস্তানের সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পাকিস্তানের সম্পর্কটি প্রভু-ভৃত্য সম্পর্কের মতো বা একটি প্রভু-দাস সম্পর্কের মতো ছিল এবং আমাদেরকে ভাড়া করা বন্দুকের মতো ব্যবহার করা হয়েছে। তবে এর জন্য আমি যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে আমার নিজের (পাকিস্তানের) সরকারকেই বেশি দায়ী করি।’

পিটিআই চেয়ারম্যান রাশিয়ার ইউক্রেন আক্রমণের প্রাক্কালে মস্কো সফরকে ‘বিব্রতকর’ বলেও অভিহিত করেছেন। তিনি বলেছেন, ফেব্রুয়ারির সেই সফরটি কয়েক মাস আগেই নির্ধারণ করা হয়েছিল।

সেনাবাহিনীর ভূমিকা সম্পর্কে ইমরান বলেন, পাকিস্তানের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার জন্য সেনাবাহিনী একটি ‘গঠনমূলক ভূমিকা’ পালন করতে পারে। সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী জোর দিয়ে বলেন, বেসামরিক-সামরিক সম্পর্কের মধ্যে ‘একটি ভারসাম্য’ থাকা উচিত।