ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর কাছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) প্রযুক্তি সরবরাহের প্রতিবাদ করায় দুই কর্মীকে বরখাস্ত করেছে আমেরিকান বহুজাতিক কোম্পানি মাইক্রোসফট। গত শুক্রবার ওয়াশিংটনের রেডমন্ড ক্যাম্পাসে কোম্পানিটির ৫০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন অনুষ্ঠান চলাকালে এই প্রতিবাতের ঘটনা ঘটে।
সোমবার (৮ এপ্রিল) চাকরিচ্যুতির একটি চিঠিতে একজন কর্মীর বিরুদ্ধে মাইক্রোসফট অভিযোগ করেছে, তার অসদাচরণের কারণে বাজে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে এবং এতে বহুল প্রত্যাশিত একটি অনুষ্ঠান সর্বোচ্চ বাধাগ্রস্ত হয়েছে।
আরেকজন কর্মী এরই মধ্যে তার পদত্যাগের ঘোষণা দিলেও পাঁচদিন আগেই তাকে চাকরি ছাড়তে নির্দেশ দেওয়া হয় বলে জানিয়েছে মাইক্রোসফট।
গত শুক্রবার মাইক্রোসফটের এআই প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মুস্তাফা সুলেমান যখন নতুন পণ্য বাজারে নিয়ে আসার ঘোষণা দিচ্ছিলেন, তখন ইবতিহাল আবুসাদ নামের একজন সফটওয়্যার প্রকৌশলী মঞ্চের দিকে গিয়ে প্রতিবাদ শুরু করেন।
এ সময় মুস্তাফাকে উদ্দেশ্য করে চিৎকার করে আবুসাদ বলতে থাকেন, মানুষের কল্যাণের জন্য আপনি এআই ব্যবহারের কথা বলে আসছিলেন। কিন্তু মাইক্রোসফট তার কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) অস্ত্র ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর কাছে বিক্রি করছে।
তিনি যখন প্রতিবাদ করছিলেন, তখন রেডমন্ডে মাইক্রোসফটের ক্যাম্পাস থেকে এই অনুষ্ঠান সরাসরি সম্প্রচার হচ্ছিল।
‘এখন পর্যন্ত ৫০ হাজারের বেশি মানুষকে হত্যা করা হচ্ছে। আমাদের অঞ্চলে গণহত্যায় মাইক্রোসফট মদত দিচ্ছে,’ বলেন ওই সফটওয়্যার প্রকৌশলী।
তার প্রতিবাদের মুখে নিজের বক্তব্য কিছুক্ষণের জন্য বন্ধ রাখেন মুস্তাফা সুলেমান। অনুষ্ঠানে অতিথিদের মধ্যে ছিলেন মাইক্রোসফটের সহ-প্রতিষ্ঠাতা বিল গেটস ও সাবেক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা স্টিফ বলমার।
মাইক্রোসফটের দাবি, খুবই শান্তভাবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেন সুলেমান। ওই নারীকর্মীকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, আপনার প্রতিবাদের জন্য ধন্যবাদ। আমি আপনার কথা শুনেছি।
এ সময়ে আবুসাদ তার প্রতিবাদ অব্যাহত রাখেন। তিনি বলেন, মাইক্রোসফটের সবার হাতে রক্ত লেগে আছে। এরপর মঞ্চের দিকে একটি কুফিয়া ছুড়ে মারেন। ফিলিস্তিনিদের সমর্থনের প্রতীক হিসেবে বিবেচনা করা হয় কুফিয়াকে। পরে আবুসাদকে টেনে অনুষ্ঠানস্থল থেকে বাইরে নিয়ে যাওয়া হয়।
অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় অংশে প্রতিবাদ করেন বন্যা আগরওয়াল নামের এক নারী। পরে সোমবার মাইক্রোসফটের মানবসম্পদ বিভাগ থেকে ফোন করে ডেকে নিয়ে তাকে তাৎক্ষণিক বরখাস্ত করা হয়।
টরোন্টোতে মাইক্রোসফটের কানাডীয় প্রধান কার্যালয়ে কাজ করতেন আবুসাদ। সোমবার কোম্পানির মানবসম্পদ বিভাগ থেকে তাকে তাৎক্ষণিক বরখাস্তের কথা জানানো হয়েছে।
নো অ্যাজুর ফর অ্যাপার্টহাইড নামের একটি অ্যাডভোকেসি গোষ্ঠী এমন তথ্য জানিয়েছে। মাইক্রোসফটের অ্যাজুর ক্লাউড কম্পিউটিং প্ল্যাটফর্ম ইসরায়েলের কাছে বিক্রির প্রতিবাদ জানিয়ে আসছে এই গোষ্ঠীটি।
বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের (এপি) অনুসন্ধানে জানা গেছে, গাজা ও লেবাননে সাম্প্রতিক যুদ্ধে নির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুতে বোমা হামলা চালাতে মাইক্রোসফট ও ওপেনএআইয়ের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) মডেল ব্যবহার করেছে আইডিএফ।
আবুসাদকে বরখাস্তের চিঠিতে মাইক্রোসফট জানিয়েছে, গোপনে ব্যবস্থাপকের কাছে নিজের উদ্বেগের বিষয়টি জানাতে পারতেন তিনি। কিন্তু তার বদলে সুলেমান ও মাইক্রোসফটের বিরুদ্ধে বৈরী ও খুবই অযাচিত অভিযোগ তুলেছেন তিনি। তার আচরণ এতটাই আগ্রাসী ও বিশৃঙ্খল ছিল যে তাকে জোর করে অনুষ্ঠান থেকে বাইরে নিয়ে যেতে হয়েছে।
এদিকে চাকরি ছাড়তে দুই সপ্তাহের নোটিশ দিয়েছিলেন বন্যা আগারওয়াল। আগামী ১১ এপ্রিল কোম্পানি থেকে তার বিদায় নেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সোমবার এক ই-মেইল বার্তায় মাইক্রোসফট তাকে জানিয়ে দিয়েছে, তাৎক্ষণিকভাবে তার পদত্যাগপত্র কার্যকর করা হয়েছে।
মাইক্রোসফটের সঙ্গে ইসরায়েলের সম্পর্ক নিয়ে এর আগেও কয়েকবার প্রতিবাদ করা হয়েছে। কিন্তু এটি ছিল খুবই প্রকাশ্য কোনো প্রতিবাদ, যা আগে কখনো হয়নি।
এর আগে, গত ফেব্রুয়ারিতে ইসরায়েলের সঙ্গে মাইক্রোসফটের চুক্তি নিয়ে প্রতিবাদ করা হলে তখনকার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সত্য নাদেলার সঙ্গে বৈঠক থেকে পাঁচকর্মীকে বের করে দেওয়া হয়েছিল।
শুক্রবার এই বহুজাতিক কোম্পানি থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়, আমরা সব ধরনের মতামত শুনতে অনেক পথ খোলা রেখেছি। কিন্তু সেগুলো এমনভাবে করতে বলা হয়েছে, যাতে কোনো ব্যবসায়িক বাধা তৈরি না হয়।
ইসরায়েল সরকারকে এআই প্রযুক্তি সরবরাহে ‘নিমবা প্রকল্প’ নামে ১২০ কোটি মার্কিন ডলারের একটি চুক্তির প্রতিবাদ করায় গেল বছরে কয়েক ডজন গুগলকর্মীকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছিল।
সূত্র: এপি, ইউএনবি