দুই মাস পর শনিবারও গাজাজুড়ে ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের মধ্যে যুদ্ধ চলছে। এ অবস্থায় যুদ্ধবিরতির জন্য জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের আহ্বানে যুক্তরাষ্ট্র ভেটো দিয়েছে।

গাজা উপত্যকা থেকে হামাস যোদ্ধারা ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হালায়। তেল আবিবের কর্মকর্তাদের মতে, সেই হামলায় প্রায় এক হাজার ২০০ মানুষ নিহত এবং প্রায় ২৪০ জন জিম্মি হয়েছে।

 
এখনো ১৩৮ জন গাজায় রয়েছে বলে তাদের দাবি। হামলার জবাবে ইসরায়েল হামাসকে ধ্বংস করার প্রতিশ্রুতি নিয়ে যুদ্ধ ঘোষণা করে এবং গাজায় সামরিক আক্রমণ শুরু করে। হামাসের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় অনুসারে, যুদ্ধে এখন পর্যন্ত কমপক্ষে ১৭ হাজার ৪৯০ জন নিহত হয়েছে, যাদের অধিকাংশই নারী ও শিশু।

 

এদিকে ১ ডিসেম্বরে মেয়াদ শেষ হওয়া সাত দিনের যুদ্ধবিরতি চলাকালীন হামাস ১০৫ জিম্মিকে মুক্তি দেয়, যার মধ্যে ৮০ জন ইসরায়েলি।

 
বিনিময় ইসরায়েলের হাতে বন্দি ২৪০ ফিলিস্তিনিও মুক্তি পায়।

 

যুদ্ধের গত ২৪ ঘন্টার পাঁচটি উল্লেখযোগ্য খবর :

যুদ্ধবিরতির আহ্বানে মার্কিন ভেটো
শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্র জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির আহ্বানের প্রস্তাবে ভেটো দিয়েছে। মার্কিন দূত রবার্ট উড যুদ্ধবিরতিকে ‘বাস্তবতা থেকে বিচ্ছিন্ন’ এবং অকার্যকর বলে অভিহিত করেছেন।

ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস শনিবার এক বিবৃতিতে বলেছেন, গাজা উপত্যকায় ফিলিস্তিনি শিশু, নারী ও বৃদ্ধদের রক্তপাতের জন্য ওয়াশিংটন দায়ী।

 

 

জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস ‘সম্ভাব্য অপরিবর্তনীয় প্রভাবসহ একটি বিপর্যয়’ সম্পর্কে জাতিসংঘ সনদের বিরলভাবে ব্যবহৃত অনুচ্ছেদ ৯৯ আহ্বান করার পর নিরাপত্তা পরিষদ বৈঠক করে।

তেহরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইরানের শীর্ষ কূটনীতিক হোসেইন আমির-আব্দুল্লাহিয়ান শনিবার ফোনে গুতেরেসকে ইসরায়েলের ‘অপরাধে’ মার্কিন সমর্থনের জন্য এই অঞ্চলে ‘অনিয়ন্ত্রিত বিস্ফোরণ’ সম্পর্কে সতর্ক করেছেন।

রাতভর প্রাণঘাতী হামলা
হামাসের সঙ্গে সম্পৃক্ত ফিলিস্তিনি গণমাধ্যম জানিয়েছে, মধ্য গাজার আল-জাওয়াইদা ও নুসিরাত, দক্ষিণে রাফাহ ও খান ইউনিস এবং উত্তরে গাজা শহরে রাতাভর ইসরায়েলি হামলায় ডজন খানেক মানুষ নিহত হয়েছে।

শনিবার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কেন্দ্রীয় শহর দেইর আল-বালাহের একটি হাসপাতালে ৭১ জনের মৃতদেহ এবং দক্ষিণে নাসের হাসপাতালে ৬২ জনের মৃতদেহ পৌঁছেছে।

শনিবার ভোরে ইসরায়েলি হামলায় খান ইউনিসে ছয়জন এবং রাফাহতে পাঁচজন নিহত হয়েছে বলেও মন্ত্রণালয় জানিয়েছে।

 

 

জিম্মি উদ্ধারে ব্যর্থ
এদিকে গতরাতে জিম্মি উদ্ধারের প্রচেষ্টার সময় দুই ইসরায়েলি সেনা ‘গুরুতরভাবে আহত’ হয়েছেন বলে সেনাবাহিনী শুক্রবার রাতে জানিয়েছে। অন্যদিকে হামাস দাবি করেছে, অভিযানে একজন ‘ইসরায়েলি বন্দি’ নিহত হয়েছে।

সেনাবাহিনীর এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘অনেক সন্ত্রাসীকে হত্যা করা হয়েছে, যারা অপহরণ ও জিম্মি করার কাজে অংশ নিয়েছিল’ এবং ‘কোনো জিম্মিকে উদ্ধার করা যায়নি।’

ডাব্লিউএইচওর রেজল্যুশন
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডাব্লিউএইচও) বোর্ড রবিবার ১৭টি সদস্য রাষ্ট্রের পেশ করা একটি খসড়া রেজল্যুশন পর্যালোচনা করবে। রেজল্যুশনে গাজায় মানবিক কর্মীদের সুরক্ষা দিতে ইসরায়েলকে আহ্বান জানানো হবে।

শুক্রবার জমা দেওয়া খসড়ায় ‘গাজা উপত্যকায় সামরিক অভিযানে’ সৃষ্ট ‘বিপর্যয়কর মানবিক পরিস্থিতি সম্পর্কে গুরুতর উদ্বেগ’ প্রকাশ করে চিকিৎসা ও মানবিক দলকে ‘সম্মান ও সুরক্ষা’ দিতে ইসরায়েলকে আহ্বান জানানো হয়েছে।

পশ্চিম তীরে সহিংসতা
অধিকৃত পশ্চিম তীরের দুরা গ্রামে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর অভিযানের সময় ২৫ বছর বয়সী ফিলিস্তিনি সারি আমর নিহত হয়েছেন। ফিলিস্তিনি বার্তা সংস্থা ওয়াফা এ তথ্য জানিয়েছে। গাজায় ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধের সঙ্গে এই অঞ্চলেও সহিংসতা বেড়েছে।

শুক্রবারও নাবলুসের কাছে আল-ফারা শরণার্থীশিবিরে এক ইসরায়েলি অভিযানে সাতজন নিহত হয়েছে৷ ফিলিস্তিনি কর্মকর্তাদের মতে, ৭ অক্টোবর থেকে ইসরায়েলি বাহিনী ও বসতি স্থাপনকারীদের আক্রমণে পশ্চিম তীরে ২৬০ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে।

সূত্র : এএফপি