বিভিন্ন দ্বিপাক্ষিক ও আন্তর্জাতিক ইস্যুতে ওয়াশিংটন ও বেইজিংয়ের মধ্যে চলমান উত্তেজনার মধ্যেই মার্কিন ধনকুবের এবং যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সফটওয়্যার প্রস্তুতকারী কোম্পানি মাইক্রোসফটের সহপ্রতিষ্ঠাতা বিল গেটসের সঙ্গে বৈঠক করেছেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং।
প্রঙ্গত, করোনা মহামারির পর গত তিন বছরে এই প্রথম বিদেশি কোনো উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ীর সঙ্গে বৈঠক করলেন চীনের প্রেসিডেন্ট। বিল গেটসকে অবশ্য কেবল উদ্যোক্তা-ব্যবাসায়ী বললে ভুল বলা হবে। কারণ বর্তমানে বিশ্বজুড়ে মানবসেবা ও কল্যাণমূলক বিভিন্ন খাতে অর্থায়ন এবং সক্রিয় সংশ্লিষ্টতার জন্য তিনি বেশি পরিচিত। নিজের অর্জিত সম্পদেরও সিংহভাগ অংশ তিনি ব্যয় করছেন বিভিন্ন মানুষের জন্য কল্যাণকর বিভিন্ন খাতে।
২০২০ সালে মাইক্রোসফটের নির্বাহী পদ ছেড়ে দিয়েছেন বিল গেটস। তারপর থেকে নিজের ও সাবেক স্ত্রী মেলিন্ডা গেটসের নামে গঠিত অলাভজনক ও সেবামুলক সংস্থা বিল-মেলিন্ডা ফাউন্ডেশনের নির্বাহী হিসেবে কাজ করছেন তিনি।
বিল গেটসের আগে চলতি বছর চীন সফর করেছেন অন্তত ৩ জন মার্কিন ব্যবসায়ী ও ধনকুবের চীন সফর করেছেন। এরা হলেন টেসলা, স্পেসএক্স এবং টুইটারের স্বত্বাধিকারী ইলন মাস্ক, যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বহুজাতিক ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান জেপি মর্গানের চেয়ারম্যান জেমি ডিমন এবং অ্যাপলের শীর্ষ নির্বাহী টিম কুক। চীনের সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করলেও শি জিনপিংয়ের সাক্ষাৎ পাননি এই তিনজনের কেউই।
বৃহস্পতিবার বেইজিংয়ে আন্তর্জাতিক ওষুধ সহায়তা সংস্থা গ্লোবাল হেলথ ড্রাগ ডিসকোভারির সম্মেলন ছিল। সেই সম্মেলনে যোগ দিতে বুধবার সেখানে গিয়েছিলেন বিল গেটস। সম্মেলন শেষে শি জিনপিংয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন তিনি।
শুক্রবার রাজধানী বেইজিংয়ের দিয়াইউতাই অতিথি ভবনে বিল গেটসকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানিয়ে শি জিনপিং বলেন, আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে আধিপত্য বিস্তার ঘিরে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চীনের যে দ্বন্দ্ব গত প্রায় ৬ দশক ধরে চলছে— সে পথে চলতে চীন আর আগ্রহী নয়, বরং চীন মনে করে—উভয় রাষ্ট্র যদি সদিচ্ছা পোষণ করে— সেক্ষেত্রে উত্তেজনার পরিবর্তে এমন কিছু যৌথ পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব, যা উভয় দেশের জনগণের পক্ষে কল্যাণকর।
বিল গেটসকে চীনা প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘আমি প্রায়েই বলি যে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের মূল ভিত্তি হলো দু’দেশের জনগণ। যুক্তরাষ্ট্রের জনগণকে নিয়ে আমি সবসময়ই আশাবাদী।’
‘এবং বর্তমান বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে,আমি মনে করি চীন ও যুক্তরাষ্ট্র যৌথভাবে এমন বহু পদক্ষেপ নিতে পারে, যা কেবল দুই দেশের জনগণই নয়— বিশ্বের জন্যও কল্যাণ বয়ে আনবে।’
বৈঠক শেষে উপস্থিত সাংবাদিকদের বিল গেটস বলেন, ‘চীনের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সাক্ষাৎ ও বৈঠকের সুযোগ পেয়ে নিজেকে সম্মানিত বোধ করছি। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বৈশ্বিক ইস্যুতে তার সঙ্গে চমৎকার আলোচনা হয়েছে। চার বছর পর আমি বেইজিংয়ে এলাম এবং এবারের সফরটি খুবই উত্তেজনাপূর্ণ ছিল আমার জন্য।’