জ্যৈষ্ঠ মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে দিনাজপুরের বাজারে লিচু বিক্রি শুরু হয়। এখন চলছে শেষ সময়ের বেচাকেনা। শেষ সময়ে দিনাজপুরে লিচুর বাজার জমে উঠলেও দামে হতাশ ক্রেতারা। তবে দাম বেশি পাওয়ায় খুশি চাষি ও ব্যবসায়ীরা। 

সরেজমিনে জেলার লিচুবাগানগুলো ঘুরে দেখা যায়, গাছের সবুজ পাতার ফাঁকে ঝুলছে টসটসে গোলাপি লিচু। বাগান মালিক ও ব্যবসায়ীরা ব্যস্ত সময় পার করছেন গাছ থেকে লিচু পাড়তে। 

Dhaka post

শহরের গোর-এ-শহীদ মাঠে লিচুর অস্থায়ী পাইকারি বাজার রয়েছে। এছাড়া শহরের বাহাদুর বাজার, হাসপাতাল মোড় ও থানা মোড়ে ঘুরে দেখা যায়, সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে চলছে বেছাকেনা। ভোর থেকে ভ্যান ও ইজিবাইকসহ বিভিন্ন যানবাহনে করে আড়তে লিচু নিয়ে আসছেন চাষিরা।

ব্যবসায়ীরা জানান, আর মাত্র ১০-১৫ দিন দিনাজপুরে লিচু পাওয়া যাবে। ধীরে ধীরে সরবরাহ কমছে। অন্যদিকে এ জেলার লিচুর সারা দেশে চাহিদা থাকায় বাজারে দাম তুলানামুলক অনেক বেশি। পাইকারি বাজারে প্রতি এক হাজার বোম্বাই লিচু বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার থেকে ২ হাজার ৫০০ টাকা পর্যন্ত। আর চায়না থ্রি ১৭ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকা। বেদানা লিচু বিক্রি হচ্ছে ৮ হাজার থেকে ১৩ হাজার টাকা দরে। এছাড়া হাঁড়িয়া লিচু ৭ হাজার থেকে ৮ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। লিচুর আকার ও মানভেদে দাম নির্ধারণ করে বিক্রি করছে ব্যবসায়ীরা।

Dhaka post

জেলার বিরল উপজেলার লিচুচাষি শরিফুর ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, এবার আমার বাগানে লিচুর ফলন ভলো হয়েছে। কয়েক বছর রমজান আর করোনার কারণে লিচুর বাজার খারাপ ছিল। সারা দেশে দিনাজপুরের লিচুর চাহিদা বেশি থাকায় লিচুর দাম বেশি। এবার লিচুর দাম ভালো পাচ্ছি। আশা করছি এবার লিচু বিক্রি করে লাভবান হব।

পাইকারি লিচু ব্যবসায়ী দুলাল রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, ঢাকা, চট্টগ্রাম, গোপালগঞ্জ, ভৈরবসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে লিচু সরবরাহ করি। সারা দেশে দিনাজপুরের লিচুর দাহিদা ব্যাপক। তাই প্রতি বছর দিনাজপুর থাকে পাইকারি লিচু কিনে বাইরের জেলায় পাঠায়। 

Dhaka post

বড়মাঠে লিচু কিনতে আসা শহরের রামনগর এলাকার বাসিন্দা হেলাল উদ্দিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, লিচুর শহর দিনাজপুর। কিন্তু এ বছর লিচুর দাম অবাক করার মতো। আগে কখনো লিচুর দাম এত বেশি দেখিনি। গত বছর চারশ টাকায় যে ১০০ পিস লিচু কিনেছি এবার সেটা এক হাজার থেকে ১২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আবার চায়না থ্রি গতবার ছয়শ থেকে আটশ টাকা ছিল, সেটা এবার ১৭০০ থেকে ১৮০০ টাকা দিয়ে কিনতে হচ্ছে। মানে একটা লিচুর দাম ১৭ থেকে ১৮ টাকা। বাগানমালিক আর ব্যবসায়ীরা বলছেন, লিচুর ফলন কম ও চাহিদা বেশি হওয়ায় দাম বেশি এবার।

দিনাজপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক (শস্য) মো. খালেদুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, সারা দেশে কম-বেশি লিচু উৎপাদন হলেও দিনাজপুরের লিচুর চাহিদা বেশি থাকে। এবারে হেক্টর প্রতি ৫ দশমিক ৩ মেট্রিক টন লিচু উৎপাদনের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এ বছর জেলায় ৭০০ থেকে ৮০০ কোটি টাকার লিচু বিক্রির সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানান তিনি।