অতিবৃষ্টি এবং উজান থেকে আসা পাহাড়ি ঢলের কারণে দেশের উত্তর-পূর্ব, দক্ষিণ-পূর্ব ও পূর্বাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ২৪টি জেলার তিন লাখ ৩৮ হাজার ৯২২ হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যা এসব জেলার মোট আবাদি জমির প্রায় ২৩ শতাংশ। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে রোপা আমনের আবাদ। এসব জেলার প্রায় দুই লাখ ৩৪ হাজার ২৯৩ হেক্টর জমির রোপা আমনের আবাদ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

 

কৃষি মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

কৃষি মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, নরসিংদী, মানিকগঞ্জ, ময়মনসিংহ, শেরপুর, নেত্রকোনা, সিলেট, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি, পাবনা, খুলনা, কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও চাঁদপুর জেলায় কৃষিতে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এসব জেলায় আবাদ হয়েছে বা দণ্ডায়মান রয়েছে এমন ফসলের জমির পরিমাণ ১৪ লাখ ৭৩ হাজার ৯৫৬ হেক্টর। এর মধ্যে আক্রান্ত হয়েছে তিন লাখ ৩৮ হাজার ৯২২ হেক্টর জমির ফসল।

 

এর মধ্যে আউশের জমি ৬৮ হাজার ৫১১ হেক্টর, রোপা আমন দুই লাখ ৩৪ হাজার ২৯৩ হেক্টর, বোনা আমন এক হাজার ৬৩৭ হেক্টর, রোপা আমন বীজতলা ১৮ হাজার ৯৫২ হেক্টর, শাক-সবজি ১৪ হাজার ১১১ হেক্টর, আদা ১৪৭ হেক্টর, হলুদ ১৯৮ হেক্টর, আখ ৬১৮ হেক্টর, পান ৪৫৬ হেক্টর এবং কলা এক হাজার ৬৭৬ হেক্টর।

এ বিষয়ে কৃষিসচিব মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়ান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘অপ্রত্যাশিত এই বন্যা মোকাবেলায় কৃষকদের সব ধরনের সহযোগিতা দেওয়া হবে। পানি নেমে গেলেই পুরোপুরি ক্ষতি নির্ধারণ করে কৃষকের ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। এ ছাড়া উপকরণ সহায়তা দেওয়া হবে।

 

আমাদের মাঠ পর্যায়ের সব কৃষি কর্মকর্তা এই মুহূর্তে কৃষকদের সঙ্গে রয়েছেন। ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে বিকল্প সব ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হবে।’

প্রাণিসম্পদ খাতে ক্ষতি প্রায় ২১ কোটি টাকা

গতকাল সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত পাওয়া তথ্য মতে, বন্যায় প্রাণিসম্পদ খাতে এ পর্যন্ত ২০ কোটি ৮৪ লাখ ১৬ হাজার ৪০০ টাকার ক্ষতি হয়েছে। বন্যায় পশু মারা গেছে কিংবা ভেসে গেছে এমন তথ্যের ভিত্তিতে ক্ষতি নিরূপণ করেছে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর। এর মধ্যে মারা গেছে ১১৬টি গরু, ১৩২টি ছাগল, ২৯টি ভেড়া, এক লাখ ৯৪ হাজার ৬০০টি মুরগি এবং এক হাজার ৫৬৩টি হাঁস।

 

তবে এখনো বন্যাকবলিত সব উপজেলার তথ্য চূড়ান্ত করতে পারেনি তারা।

কৃষি মন্ত্রণালয়ের বন্যা-পরবর্তী উদ্যোগ

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কৃষকদের জন্য বন্যা-পরবর্তী সময়ে উঁচু এলাকায় আপৎকালীন নাবী জাতের রোপা আমন বীজতলা তৈরি, ভাসমান বীজতলা তৈরি, স্থানীয় জাতের পরিবর্তে উফশী জাত আবাদের উদ্যোগ নেবে। এ ছাড়া স্বল্পমেয়াদি রোপা আমন ধানের (ব্রি ধান-৫৬, ৫৭, ৭৫, ৮৭) আবাদ, বন্যা সহনশীল জাত ব্রি ধান-৫১, ৫২, ৭৯ জাতের আবাদ বৃদ্ধি, ভাসমান বেডে শাক-সবজি আবাদের ব্যবস্থা করা হবে। বস্তায় লতা ও মসলা (মরিচ, আদা) জাতীয় শস্যের আবাদ, নাবী জাতের রোপা আমন, বিআর-২২, ২৩ এবং স্থানীয় গাইঞ্জা, আবছায়া, ডাবল ট্রান্সপ্লান্টিং পদ্ধতিতে রোপা আমন চাষ বাড়ানো হবে।

ধানের অঙ্কুরিত বীজ সরাসরি বপন করার উদ্যোগ নেওয়া হবে। এ ছাড়া চলমান কৃষি প্রণোদনা ও পুনর্বাসন কর্মসূচি জোরদার করা হবে। আগাম জাতের শীতকালীন সবজি উৎপাদনের বিষয়ে কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে।