সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ বলেছেন, সংস্কৃতি টেকসই উন্নয়নের চালিকাশক্তি। সরকার জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এজেন্ডা ২০৩০) যথাসময়ে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে আমাদের সাংস্কৃতিক নিয়ামকগুলোকে শক্তিশালী করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনের যাত্রাকে ত্বরান্বিত করতে ‘হোল অব সোসাইটি অ্যাপ্রোচ’ গ্রহণ করেছে। সুখী, সমৃদ্ধ, অগ্রসর ও সমতা-ভিত্তিক রাষ্ট্র গঠনের এই চেষ্টায় কেউ পিছিয়ে থাকবে না।

রোববার (২৮ আগস্ট) স্কটল্যান্ডের রাজধানী এডিনবার্গের স্কটিশ পার্লামেন্টের ডিবেটিং চেম্বারে ৬ষ্ঠ এডিনবার্গ আন্তর্জাতিক কালচারাল সামিটের তৃতীয় ও শেষ দিনে ‌‘সংস্কৃতি ও টেকসই স্থায়িত্ব’ শীর্ষক প্লেনারি সেশনে বক্তৃতাকালে তিনি এসব কথা বলেন।

কে এম খালিদ বলেন, এসডিজি অর্জনের লক্ষ্যে কাজ করার মাধ্যমে আমরা আদর্শ জাতি ও আদর্শ বিশ্ব গড়ার স্বপ্ন পূরণ করতে পারব। আমাদের মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে দৃঢ়ভাবে লিঙ্গ সমতা, বৈষম্য হ্রাস, সম্মানজনক কর্মপরিবেশ সৃষ্টি ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় পদক্ষেপ গ্রহণ এবং শান্তি, ন্যায়বিচার ও শক্তিশালী প্রতিষ্ঠানের মতো এসডিজির বিষয়সমূহের ওপর জোর দিয়েছি।

তিনি বলেন, বাংলাদেশে সাংস্কৃতিক টেকসই স্থায়িত্ব নিশ্চিতকরণে আমাদের একটি সংস্কৃতি নীতি রয়েছে। সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় আইনি কাঠামো, লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নির্ধারণ, আর্থিক জোগান ও ব্যবস্থাপনা এবং সাংগঠনিক কাঠামো নির্ধারণ করে যা বাংলাদেশের সংস্কৃতি নীতির মূল ভিত্তি। সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন ১৮টি সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা এবং সংশ্লিষ্ট অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়ে বাংলাদেশের সংস্কৃতি নীতি বাস্তবায়িত হচ্ছে। এটি জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে দেশের প্রতিটি নাগরিকের জন্য সমানভাবে প্রযোজ্য।

সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী বলেন, রাষ্ট্রীয় নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বাংলাদেশ ইতোমধ্যে ইউনেস্কোর বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক কনভেনশন, প্রটোকল, চার্টার ও নির্দেশিকা অনুমোদন করেছে। এই মুহূর্তে বিশ্বের ৪৪টি দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক বিনিময় চুক্তি (সিইএ) ও সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) রয়েছে। দেশের সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে টেকসই পারিপার্শ্বিকতা অর্জনে আমরা ব্রিটিশ কাউন্সিল এবং ইউনেস্কোর মতো উন্নয়ন সহযোগীদের সঙ্গে একযোগে কাজ করছি। সাংস্কৃতিকভাবে ভারসাম্যপূর্ণ টেকসই বাংলাদেশ বিনির্মাণে এই সহযোগিতা আমাদের সহায়তা করবে।

সেশনটিতে চেয়ারপারসনের দায়িত্ব পালন করেন স্কটিশ পার্লামেন্টের স্পিকার আলিসন জন্সটোন। কি-নোট স্পিকার হিসাবে বক্তৃতা করেন যুক্তরাষ্ট্রের নৃতত্ত্ববিদ স্টিভেন ফেল্ড ও মিসরের দি নাইল প্রজেক্টের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও প্রযোজক মিনা গির্গিস। বিশেষ বার্তা প্রদান ও পারফর্ম করেন এডিনবার্গের গ্রিড আয়রন থিয়েটার কোম্পানি, দ্য জঙ্গল বুক রি-ইমাজিন্ড খ্যাত যুক্তরাজ্যের আকরাম খান ও যুক্তরাষ্ট্রের টেকসই ফ্যাশন কনটেন্ট নির্মাতা, ফটোসাংবাদিক ও শ্রমিক অধিকারকর্মী অদিতি মায়ার।

উল্লেখ্য, ‘ফেস্টিভাল সিটি’ হিসেবে এডিনবার্গের ৭৫ বছর পূর্তি উদযাপন উপলক্ষে তিন দিনব্যাপী (২৬-২৮ আগস্ট) কালচালার অ্যান্ড এ সাসটাইনেবল ফিউচার শীর্ষক বিশ্ব-সংস্কৃতি বিনিময়ের অন্যতম বড় মঞ্চে সম্মেলনে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। আরও রয়েছেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সংস্কৃতি বিনিময় শাখার উপসচিব কাজী নুরুল ইসলাম ও ব্রিটিশ কাউন্সিলের হেড অব আর্টস নাহিন ইদ্রিস।

সাংস্কৃতিক নীতি ও বিনিয়োগের মাধ্যমে ইতিবাচক পরিবর্তন ও দীর্ঘস্থায়ী প্রভাবকে উৎসাহিত করতে অনন্য বৈশ্বিক সুযোগ হিসেবে এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সম্মেলনে অংশীদার হিসেবে রয়েছে ব্রিটিশ কাউন্সিল, এডিনবার্গ ইন্টারন্যাশনাল ফেস্টিভাল, স্কটল্যান্ডের পার্লামেন্ট এবং স্কটল্যান্ড ও যুক্তরাজ্য সরকার। সম্মেলনে বিশ্ববরেণ্য শিল্পীসহ বিভিন্ন দেশের সংস্কৃতিমন্ত্রীরা অংশগ্রহণ করেছেন।