রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ছিনতাই ও হত্যাকাণ্ডের মতো ঘটনা কমছে না। সেনাবাহিনী মাঠে থাকার পরও এসব অপরাধ না কমার কারণ জানতে চাওয়া হয় সেনাবাহিনীর কাছে।
এর জবাবে সেনাসদর বলছে, সেনাবাহিনী দিন-রাত আইনশৃঙ্খলা উন্নয়নের জন্য কাজ করে যাচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা উন্নয়ন শুধু সেনাবাহিনীর একার দায়িত্ব নয়, অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীরও দায়িত্ব রয়েছে। সবাই মিলে সমন্বিতভাবে কাজ করলে আইনশৃঙ্খলা আরও উন্নত হবে।
সোমবার (২৬ মে) ঢাকা সেনানিবাসে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন মিলিটারি অপারেশনস ডিরেক্টরেটের কর্নেল স্টাফ কর্নেল মো. শফিকুল ইসলাম। এসময় তিনি সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন।
সেনাবাহিনী মাঠে থাকার পরেও কেন ছিনতাই ও হত্যাকাণ্ডের মতো ঘটনা কমছে না? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যেগুলো মিডিয়াতে আসছে সেগুলো আপনারা দেখতে পাচ্ছেন। আগের তুলনায় আইনশৃঙ্খলা ইন-ডিটেইল (বিস্তারিত) যদি বিশ্লেষণ করেন তাহলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আইনশৃঙ্খলা স্থিতিশীল অবস্থায় আছে বা কিছুটা ভালো হয়েছে। সেনাবাহিনী দিন-রাত আইনশৃঙ্খলা উন্নয়নের জন্য কাজ করে যাচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা উন্নয়ন শুধু সেনাবাহিনীর একার দায়িত্ব নয়, অন্যান্য বাহিনীরও দায়িত্ব রয়েছে। সবাই মিলে সমন্বিতভাবে কাজ করলে আইনশৃঙ্খলা আরও উন্নত হবে বলে আশা করছি।
তিনি বলেন, গত ৪০ দিনে সেনাবাহিনী ২৪১টি অবৈধ অস্ত্র ও ৭০৯ রাউন্ড গোলাবারুদ এবং আগস্ট থেকে থেকে এ পর্যন্ত মোট ৯ হাজার ৬১১টি অবৈধ অস্ত্র ও ২ লাখ ৮৫ হাজার ৭৬১ রাউন্ড গোলাবারুদ উদ্ধার করেছে। এছাড়া গত এক মাসে বিভিন্ন ধরনের অপরাধে সম্পৃক্ত মোট ১ হাজার ৯৬৯ জনকে এবং এ পর্যন্ত মোট ১৪ হাজার ২৬৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
যাদের মধ্যে কিশোর গ্যাং, তালিকাভুক্ত অপরাধী, অপহরণকারী, চোরাচালানকারী, প্রতারক ও দালাল চক্র, চাঁদাবাজ, ডাকাত, ছিনতাইকারী উল্লেখযোগ্য।
এছাড়া গত ৪০ দিনে যৌথ অভিযানে ৪৮৭ জন মাদক কারবারি এবং আগস্ট থেকে এ পর্যন্ত মাদকের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ৪ হাজার ৪০০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। উল্লেখযোগ্য পরিমাণ অবৈধ মাদকদ্রব্য, যেমন ইয়াবা, ফেনসিডিল, গাঁজা, অবৈধ মদ ইত্যাদি উদ্ধার করা হয়েছে যার মাধ্যমে এলাকাবাসীর মধ্যে স্বস্তি ও নিরাপত্তা বিরাজ করছে।
৫ আগস্ট পরবর্তী সময় থেকে শুরু করে অদ্যাবধি শিল্পাঞ্চল এলাকার সার্বিক নিরাপত্তার জন্য বাংলাদেশ সেনাবাহিনী নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
কর্নেল মো. শফিকুল ইসলাম আরও বলেন, আইনশৃংখলা রক্ষার পাশাপাশি জুলাই অভ্যুথ্যানে ছাত্র আন্দোলনের বিভিন্ন সময়ে যারা আহত হয়েছেন, তাদের সুচিকিৎসার জন্য সেনাবাহিনী এখন পর্যন্ত ৪ হাজার ৫৯৬ জনকে দেশের বিভিন্ন সিএমএইচে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছে, যার মধ্যে ৩৬ জন এখনো চিকিৎসাধীন।
বাংলাদেশ-মিয়ানমারের করিডোর নিয়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী কী ভাবছে এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, করিডোর একটি স্পর্শকাতর বিষয়। দেশের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হয় এমন কোনো কাজে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সম্পৃক্ত হবে না।
আরাকান আর্মি বাংলাদেশে ঢুকে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশ নিচ্ছে বলে গণমাধ্যমে এসেছে। পার্বত্য অঞ্চলে যেহেতু সেনাবাহিনী রয়েছে সেক্ষেত্রে এ বিষয়ে কী পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে? এমন প্রশ্নে সেনাবাহিনীর এ কর্মকর্তা বলেন, আরাকান আর্মির সঙ্গে আমাদের সরাসরি কোনো যোগাযোগ নেই। গণমাধ্যমে যা দেখেছেন সেটির সঠিকতা ও বস্তুনিষ্ঠটা নিয়ে যথেষ্ট বিবেচনার দাবি রাখে।
করিডোর, চট্রগ্রাম বন্দর ও স্টারলিংক নিয়ে দেশের সার্বভৌমত্বের চ্যালেঞ্জ তৈরি হতে পারে। সেই চ্যালেঞ্জ সেনাবাহিনী আমলে নিচ্ছে কি না এবং চ্যালেঞ্জ নিলে কী ধরনের পদক্ষেপ নিচ্ছেন? এমন প্রশ্নের জবাবে কর্নেল মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, জাতীয় নিরাপত্তা বিঘ্নিত হয় এমন কোনো বিষয়ে সেনাবাহিনী সম্পৃক্ত হবে না।
সেনাপ্রধানের অফিসার্স এড্রেসের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে কর্নেল মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, যেকোনো সময় কিংবা সময়ে সময়ে অফিসারদের সঙ্গে সেনাপ্রধান কথা বলেন, দিক-নির্দেশনা দিয়ে থাকেন। অফিসার্স এড্রেস তারই একটি ধারাবাহিকতা মাত্র। এখানে কোনো সাংবাদিককেও ডাকিনি কিংবা আইএসপিআরও সরকারিভাবে কোনো বিবৃতি দেয়নি। গণমাধ্যম বা স্যোশাল মিডিয়াতে যা দেখছেন এটার সঠিকতা বা বস্তুনিষ্ঠটা নিয়ে যথেষ্ট বিবেচনার দাবি রাখে।