সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের দাতা সংস্থা ইউএসএআইডি’র তহবিল সংকোচনের ফলে বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশে হাজার হাজার পেশাজীবী চাকরি হারিয়েছেন। এ প্রেক্ষাপটে বৃহস্পতিবার (১৫ মে) ঢাকায় একটি পরামর্শমূলক সভার আয়োজন করা হয়েছে। এতে অংশ নেন প্রায় ১০০ ভুক্তভোগী, যারা ইউএসএআইডি’র প্রকল্প থেকে ছাঁটাই হয়েছেন বা পরোক্ষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।
সভায় অংশগ্রহণকারীরা তাদের বর্তমান আর্থিক সংকটের কথা তুলে ধরেন। চাকরি হারানোর পর চরম আর্থিক সংকটে পড়েছেন এবং কোনো সহায়তা পাচ্ছেন না বলে জানান তারা।
ইউএসএআইডির তহবিলভিত্তিক প্রকল্পের সাবেক এক কর্মী বলেন, সমস্যাটা শুরু হয় যখন আমার ব্যক্তিগত ঋণ সংক্রান্ত কল আসে। ফেব্রুয়ারিতে চাকরি হারানোর পর আমি কিছু টাকা পেয়েছিলাম, ভেবেছিলাম হয়তো চলতে পারব। কিন্তু এখন সেই টাকাও ধীরে ধীরে ফুরিয়ে যাচ্ছে। আমার মেয়ে এখনো কলেজ শেষ করেনি, আমি অন্তত ছেলেমেয়েদের পড়াশোনা সম্পূর্ণ করতে পারলে কিছুটা মানসিক শান্তি পেতাম। এত বড় সংকট আমি কীভাবে মোকাবিলা করব, তা জানি না।
চাকরি হারানো পেশাজীবী জিনাত আরা আফরোজ বলেন, গত ৪-৫ মাসে ব্যাপক কর্মী ছাঁটাই হয়েছে। তবে, কতজন সরাসরি বা পরোক্ষভাবে চাকরি হারিয়েছেন, সে সম্পর্কে আমাদের পরিষ্কার ধারণা নেই। আমরা অনুমান করছি যে এই সংখ্যা অনেক বেশি। তাই সরকারের উচিত অবিলম্বে একটি জরিপ পরিচালনা করে প্রকৃত সংখ্যা নির্ধারণ করা। কারণ চাকরি হারানো উন্নয়ন কর্মীদের প্রকৃত সংখ্যা না জানা থাকলে সরকারের পক্ষে আমাদের জন্য কোনো উদ্যোগ নেওয়া সম্ভব নয়।
আয়করের ক্ষেত্রে চলতি বছরের আয় সমান থাকবে ধরে নিয়ে উৎসে কর কেটে নেওয়া হয়েছে, যা বর্তমান বাস্তবতার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। সরকারের উচিত আয়কর আইন-২০২৩ হালনাগাদ বা সংশোধন করে ইউএসএইডির তহবিল সংকোচনের কারণে চাকরি হারানো উন্নয়ন পেশাজীবীদের জন্য জমাকৃত করের অর্থ ফেরত দেওয়ার ব্যবস্থা করা— বলেন তিনি।
সভা থেকে কয়েকটি দাবি তুলে ধরেন অংশগ্রহণকারীরা। দাবিগুলো হলো-
১. ইউএসএআইডি’র তহবিল সংকোচনের কারণে উন্নয়ন খাতে ব্যাপক বেকারত্বের সরকারি স্বীকৃতি।
২. ইউএসএআইডি’র তহবিল সংকোচনের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ কারণে ব্যাপকভাবে ছাঁটাইকৃত কর্মীর প্রকৃত সংখ্যা নির্ধারণের জন্য সরকারি জরিপ।
৩. অর্থনৈতিক ও সামাজিক প্রভাব বিশ্লেষণের জন্য দ্রুত সরকারি মূল্যায়ন।
৪. চাকরি হারানো পেশাজীবীদের উৎসে কেটে রাখা আয়করের ক্ষেত্রে করনীতি পর্যালোচনা এবং কর ফেরতের সুস্পষ্ট ব্যবস্থা।
৫. উন্নয়ন খাতের কর্মীবাহিনীকে জাতীয় অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান।
বক্তারা বলেন, বাংলাদেশের উন্নয়ন যাত্রায় দক্ষ ও নিবেদিত কর্মীবাহিনীর অবমূল্যায়ন করা যাবে না। এখনই একটি কৌশলগত সরকারি উদ্যোগের মাধ্যমে দক্ষতা সংরক্ষণ এবং বাংলাদেশের উন্নয়ন খাতের ভবিষ্যত সুরক্ষিত করা সম্ভব।