ঢাকা: মন্ত্রিসভা জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন আইন, ২০২৩-এর খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে। নতুন এই আইন জাতীয় সংসদে পাস হলে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) দেবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের অধীন নিবন্ধকের অফিস নামের একটি সংস্থা। তবে নির্বাচন কমিশন (ইসি) ১৮ বছরের বেশি বয়সী নাগরিকদের নিয়ে ভোটার তালিকা করবে।

গতকাল সোমবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার বৈঠকে এই অনুমোদন দেওয়া হয়।

পরে সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে বৈঠকের সিদ্ধান্তের কথা জানান মন্ত্রিপরিষদসচিব মো. মাহবুব হোসেন।

 

এর আগে গত বছরের ১০ অক্টোবর জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন আইনের খসড়া নীতিগত অনুমোদন দিয়েছিল মন্ত্রিসভা। 

মাহবুব হোসেন বলেন, প্রস্তাবিত এই আইনের আওতায় এখন জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন কার্যক্রম স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের মাধ্যমে পরিচালিত হবে। এ জন্য নিবন্ধকের কার্যালয় থাকবে।

এই অফিসের প্রধান হবেন নিবন্ধক। তাঁর মাধ্যমে এই কাজটি হবে। এর একটি বৈশিষ্ট্য হলো, যেকোনো নাগরিক জন্মের পরপরই নাগরিক সনদ বা একটি নম্বর পাবে। এই নম্বর অপরিবর্তিত হবে।
যখন একজন নাগরিক এই নম্বর পাবে, তখন পরিচয়ের জন্য আর কোনো নম্বর লাগবে না।

 

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রিপরিষদসচিব বলেন, জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন সংক্রান্ত তথ্যাদি ইসি থেকে নতুন নিবন্ধকের দপ্তরে স্থানান্তর করা হবে।

মাহবুব হোসেন বলেন, এখন যাঁদের এনআইডি আছে সেগুলো কার্যকর বা চলমান থাকবে। বর্তমান নিয়মে শুধু ১৮ বছর বা তার বেশি বয়সীরা এনআইডি করতে পারেন। প্রস্তাবিত আইনে যেকোনো বয়সে এনআইডি করা যাবে।

 

ভোগান্তি দূর করার জন্যই এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, লক্ষ্য হলো ধীরে ধীরে এই একটি (ইউনিক) পরিচয়পত্র নম্বরেই সব তথ্য রাখা। 

আইন পাস হওয়ার পর সরকার নির্ধারিত তারিখ থেকে নতুন নিবন্ধকের অফিসের মাধ্যমে জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধকের কার্যক্রম পরিচালিত হবে বলে জানান মন্ত্রিপরিষদসচিব।

আরো দুটি বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে

মন্ত্রিপরিষদসচিব জানান, শরীয়তপুরে ও ঠাকুরগাঁওয়ে নতুন দুটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় হতে যাচ্ছে। এ জন্য দুটি আইনের খসড়া অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। এর মধ্যে শরীয়তপুরের বিশ্ববিদ্যালয়টির নাম হবে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, শরীয়তপুর’। আর ঠাকুরগাঁওয়ের বিশ্ববিদ্যালয়টির নাম হবে ‘ঠাকুরগাঁও বিশ্ববিদ্যালয়’।

শরীয়তপুরের বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রস্তাবিত নাম ছিল ‘শেখ হাসিনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়’। কিন্তু মন্ত্রিসভার বৈঠকে সেই প্রস্তাবে পরিবর্তন করে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়’ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এই দুটি বিশ্ববিদ্যালয় হলে দেশে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা দাঁড়াবে ৫৬তে। এ ছাড়া এখন পর্যন্ত মোট ১১২টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

এ ছাড়া বৈঠকে সিলেট উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ করার জন্য একটি আইনের খসড়া অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ম্যানেজমেন্ট আইন, বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল (দ্বিতীয় সংশোধন) আইন এবং জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশন আইনের খসড়া অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।

আইনি কাঠামোয় আসছে প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশন

মাহবুব হোসেন জানান, জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশন বর্তমানে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী পরিচালিত হচ্ছে। এটিকে আইনের কাঠামোর মধ্যে আনা হচ্ছে। নতুন আইন পাস হলে জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশনকে সেই আইনের অধীনে আনা হবে। এ ছাড়া প্রতিবন্ধীদের উন্নয়নের জন্য যতগুলো প্রতিষ্ঠান রয়েছে, সেগুলোর জনবল থেকে শুরু করে সব কিছু আইনি কাঠামোয় আনা হবে। প্রতিবন্ধীরাও এর সুফল পাবে। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় ১৯৯৯ সালের ১৬ নভেম্বর জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করে। আইন না থাকায় গঠনতন্ত্রের আলোকে প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম চলছে।