খবর প্রকাশিত: ০৫ জানুয়ারী, ২০২৫, ০৫:৩৪ এএম
পাকিস্তানের বিতর্কিত ও আলোচিত সাবেক স্বৈরশাসক পারভেজ মোশাররফ ৭৯ বছর বয়সে মারা গেছেন। নানা ঘটনাবহুল এক জীবন কাটিয়ে শেষ পর্যন্ত নিবাসনে থাকা অবস্থায় মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাতে রোববার মারা গেছেন তিনি। কিন্তু পাকিস্তানের সাবেক এই প্রেসিডেন্ট ও সেনাপ্রধানের ব্যক্তিগত জীবন কেমন ছিল? কেমন ছিল তার প্রেমজীবন? তা হয়তো অনেকেই জানেন না।
তবে নিজের আত্মজীবনীমূলক বইয়ে লিখে গেছেন তার জীবনের নানা গল্প। সেখানেই বলেছেন, তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান তথা আজকের বাংলাদেশের এক বাঙালি কন্যার সঙ্গে তার প্রেমের গল্প। সেই প্রেমে ভাষার বাধা ছিল, কিন্তু তা কখনও মনের বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি সেটিও স্বীকার করেছেন অকপটে।
২০০১ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত পাকিস্তানের ক্ষমতায় ছিলেন পারভেজ মোশাররফ। ২০০৬ সালে তার আত্মজীবনীমূলক বই ‘ইন দ্য লাইন অব ফায়ার: আ মেমোয়ার’ প্রকাশিত হয়। এই বইয়ে জীবনের নানা কথা তুলে ধরার পাশাপাশি নিজের প্রেমিক সত্ত্বাও পাঠকদের সামনে তুলে ধরেন তিনি। বইয়ে পারভেজ মোশাররফ লিখেছেন, তার দ্বিতীয় প্রেমিকা ছিলেন এক বাঙালি মেয়ে। যদিও ব্যর্থ হয় সেই প্রেম। সেই প্রেমিকা এখন এক বাংলাদেশির সংসার করেন। থাকেনও বাংলাদেশেই।
আত্মজীবনীতে পারভেজ মোশাররফ লেখেন, ‘সে এখন সুখী দাম্পত্য জীবন কাটাচ্ছে। থাকে বাংলাদেশে।’ কিন্তু ওই বাঙালি প্রেমিকার নাম কখনও জনসমক্ষে প্রকাশ করেননি মোশাররফ। দ্বিতীয় প্রেমিকাকে নিয়ে আত্মজীবনীতে যে কয়েক লাইন লিখেছেন, সেখানে শুধু ‘বাঙালি’ শব্দের উল্লেখ করেছেন তিনি। কীভাবে এই প্রেম হয়েছিল, লিখেছেন তার বিস্তারিত।
সাবেক এই পাক প্রেসিডেন্ট লিখেছেন, বাঙালি কন্যার সঙ্গে প্রেমের আগে অন্য একজনের সঙ্গে সম্পর্কে ছিলেন তিনি। কিন্তু সেটি ছিল কিশোর বয়সের ভালোলাগা। ভালোবাসা কি না বুঝতে না বুঝতেই ‘প্রথম প্রেমিকা’ মোশাররফের জীবন থেকে হারিয়ে যান।
দ্বিতীয় প্রেম অর্থাৎ, বাঙালি তরুণীর সঙ্গে তার প্রেমকে প্রথমের চেয়ে অনেক বেশি গভীর বলে উল্লেখ করেন মোশাররফ। কিশোর প্রেমের আখ্যানে তিনি লিখেছেন, কীভাবে লুকিয়ে লুকিয়ে প্রেমিকাকে চিঠি পাঠাতেন। কীভাবে তার সঙ্গে দেখা করার জন্য অধীর আগ্রহে থাকতেন।
আত্মজীবনীতে মোশাররফ লিখেছেন, ওই বাঙালি প্রেমিকা তার প্রতিবেশী ছিলেন। করাচির গার্ডেন রোডে ছিল তাদের পাশাপাশি বাড়ি। যাতায়াতের পথেই পরিচয় এবং মন দেওয়া-নেওয়া।
তিনি বলেন, গার্ডেন রোডের বাড়ি ছিল তার কিশোর প্রেমের রাজধানী। প্রথম প্রেমিকার বাড়ি ছিল গার্ডেন রোডে। কিন্তু পরে তার পরিবার অন্যত্র চলে যায়। তারপর শুরু হয় দ্বিতীয় প্রেম।
দ্বিতীয় প্রেমিকাকে নিয়ে মোশাররফ লেখেন, ‘সে ছিল সুন্দরী এবং বাঙালি। পূর্ব পাকিস্তানে ছিল তাদের বাড়ি। আগের প্রেমের মতো এই প্রেম আমার কাছে ‘অতটা তুচ্ছ’ ছিল না।’ তিনি যে এই প্রেম নিয়ে ‘সিরিয়াস’ ছিলেন, তা পরোক্ষে বোঝাতে গিয়ে এই ‘অতটা তুচ্ছ’ শব্দ ব্যবহার করেন পাকিস্তানের সদ্যপ্রয়াত সাবেক প্রেসিডেন্ট।
সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়ার পরও মোশাররফের মন পড়ে থাকত পাড়ায়। আরও স্পষ্ট করে বললে বাঙালি প্রেমিকার জন্য। তিনি জানান, প্রথম ভাগে করাচিতে ৩৬তম ‘লাইট অ্যান্টি-এয়ারক্র্যাফ্ট রেজিমেন্টে’ প্রশিক্ষণ নিতে গিয়েছিলেন তিনি; যাতে প্রেমিকার কাছ থেকে খুব দূরে কোথাও না যেতে হয়।
মোশাররফ জানান, তার দ্বিতীয় প্রেমের সম্পর্ক বেশ কয়েক বছর টিকেছিল। তিনি পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়া পর্যন্ত নিয়মিত দেখা করতেন প্রেমিকার সঙ্গে। এমনকি পাক সেনাবাহিনীর দ্বিতীয় লেফটেন্যান্ট হওয়া পর্যন্ত সেই সম্পর্ক টিকেছিল।
বইয়ে মোশাররফ লেখেন, ‘কেন সেনা প্রশিক্ষণের জন্য করাচিকে বেছে নিয়েছিলাম আমি? না, তার কারণ আমার পরিবার নয়। এটা ছিল ওই বাঙালি কন্যার জন্য। সে ওখানে থাকত তাই...।’
কিন্তু ন্যূনতম অস্ত্র প্রশিক্ষণ ছাড়া তো সরাসরি ‘অ্যান্টি এয়ারক্র্যাফ্ট রেজিমেন্টে’ যাওয়া যায় না। তাই অনিচ্ছা সত্ত্বেও পরে অন্যত্র চলে যেতে হয় সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়া মোশাররফকে। প্রেমিকার জন্য মন কেমন করা অনুভূতি নিয়েই তার কাছ থেকে দূরে সরে যান তিনি।