NYC Sightseeing Pass
ঢাকা, বুধবার, মে ৭, ২০২৫ | ২৩ বৈশাখ ১৪৩২
ব্রেকিং নিউজ
ভবিষ্যতে এমন হামলার চেষ্টা করলে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না: উপদেষ্টা অর্ডিন্যান্স আকারে আইন করে বাংলাদেশ হেলথ সার্ভিস গঠনের সুপারিশ মালয়েশিয়া সফর স্থগিত করলেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হামজা-শামিত জুটি সম্ভাবনার আরেক ধাপ অগ্রগতি কোরবানির চামড়ার ন্যায্যমূল্য নিশ্চিতে কমিটি গঠনের নির্দেশ - প্রধান উপদেষ্টা মহসিন কলেজ ছাত্রলীগ নেত্রীকে পুলিশে দিলো শিক্ষার্থীরা ইসরায়েলে বিদেশি এয়ারলাইনসগুলোর ফ্লাইট বাতিলের হিড়িক তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতা চান না ট্রাম্প বাংলাদেশি হিসেবে রিশাদের রেকর্ডের দিনে লাহোরের হার ভারতীয় অনুরাগীদের মন্তব্যে হানিয়া বললেন ‘আমি কেঁদে ফেলব’
Logo
logo

ট্রাম্পের ১০০ দিন ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতিতে বদলে যাচ্ছে বিশ্বব্যবস্থা


খবর   প্রকাশিত:  ৩০ এপ্রিল, ২০২৫, ০৯:০৪ পিএম

ট্রাম্পের ১০০ দিন ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতিতে বদলে যাচ্ছে বিশ্বব্যবস্থা

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় ফিরে আসার পর প্রথম ১০০ দিনে বিশ্বব্যাপী শুল্ক যুদ্ধ শুরু করেছেন, বৈদেশিক সহায়তা কমিয়েছেন, ইউক্রেইনে রাশিয়ার আগ্রাসন নিয়ে নেটো মিত্রদের উপেক্ষা করে রাশিয়ার বয়ানকেই সমর্থন করেছেন।
গ্রিনল্যান্ড, পানামা খাল দখল এবং কানাডাকে যুক্তরাষ্ট্রের ৫১তম রাজ্যে পরিণত করার কথাও প্রকাশ্যে বলেছেন ট্রাম্প। প্রেসিডেন্সির প্রথম বিশৃঙ্খল ১০০ দিনে ট্রাম্পের অপ্রত্যাশিত ও অস্থিতিশীল কৌশল পরিচালনায় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ধ্বংসাবশেষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে গড়ে ওঠা নিয়মভিত্তিক বিশ্বব্যবস্থা আংশিক উল্টে গেছে।
রক্ষণশীল রাজনীতিবিদ এবং ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে ইরান ও ভেনেজুয়েলা বিষয়ক বিশেষ দূত এলিয়ট আব্রামস বলেন, ‘ট্রাম্প এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি উগ্র। আমি সত্যিই হতবাক।’

ট্রাম্পের 'আমেরিকা ফার্স্ট' নীতি মিত্রদের দূরে ঠেলে দিয়েছে এবং প্রতিপক্ষদেরকে সাহস জুগিয়েছে। তার কর্মকাণ্ড এবং সেইসঙ্গে তার অজানা পরবর্তী পরিকল্পনা বিশ্বজুড়ে উদ্বেগ বাড়াচ্ছে এবং বিভিন্ন দেশ এমনভাবে প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছে যে, পরে এর প্রভাব দূর করা কঠিন হবে, তা ২০২৮ সালে প্রথামাফিক কোনও নতুন প্রেসিডেন্ট আসার পরও।
বিচারকদের নিয়ে আক্রমণ করে কথা বলা, বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর চাপ এবং অভিবাসীদের ফেরত পাঠানোর মতো ঘটনাগুলোকে ট্রাম্পের সমালোচকরা ঘরোয়া রাজনীতিতে গণতান্ত্রিক চর্চার অবনতি এবং এতে আন্তর্জাতিক উদ্বেগ বেড়ে যাওয়ার লক্ষণ হিসাবেই দেখছেন।
সাবেক মার্কিন কূটনীতিক ডেনিস রস বলেছেন, বিশ্বজুড়ে একটি বিশাল বিশৃঙ্খলা দেখা যাচ্ছে। কী হচ্ছে, বা সামনে কী আসতে চলেছে সে বিষয়ে কেউই এখন নিশ্চিত নয়।

বিশ্বব্যাবস্থায় বদল
বার্তাসংস্থা রয়টার্স যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বর্তমান ও সাবেক সরকারি কর্মকর্তা, কূটনীতিক ও বিশ্লেষকদের সাক্ষাৎকার নিয়ে ট্রাম্পের বিশ্বব্যবস্থা নাড়িয়ে দেওয়ার বিষয়টি মূল্যায়ন করেছে।
অনেকেই বলেছেন, ট্রাম্পের পদক্ষেপে এরই মধ্যে যেসব ক্ষতি হয়েছে সেগুলোর কিছু দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে। তবে তিনি নমনীয় অবস্থান নিলে সেসব ক্ষতি কাটানো সম্ভবও হতে পারে।
কিছু বিষয়ে ট্রাম্প অবশ্য কঠোর অবস্থান থেকে কিছুটা সরে এসেছেন, যেমন শুল্ক আরোপের সময়সূচি ও মাত্রা। তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, ট্রাম্পের নাটকীয়ভাবে অবস্থান বদলানোর সম্ভাবনা কম। ফলে অনেক দেশ যুক্তরাষ্ট্রের ওপর নির্ভরতা কমিয়ে নিজেদের স্বার্থরক্ষার প্রস্তুতি নেবে তেমন সম্ভাবনাই দেখছেন তারা। এমন উদ্যোগ ইতোমধ্যে শুরুও হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের অনেক ইউরোপীয় মিত্র দেশই মার্কিন অস্ত্রের ওপর নির্ভরতা কমাতে নিজেদের প্রতিরক্ষা শিল্পে বিনিয়োগ বাড়ানোর কথা ভাবছে। দক্ষিণ কোরিয়ায় নিজস্ব পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি নিয়ে বিতর্ক শুরু করেছে। আবার যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতির কারণে তাদের অনেক মিত্রদেশই চীনের সঙ্গে অর্থনৈতিকভাবে ঘনিষ্ঠ হতে পারে, তেমন জল্পনাও বেড়েছে।

হোয়াইট হাউজ অবশ্য বিশ্বমঞ্চে যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্বাসযোগ্যতা ক্ষুন্ন করা নিয়ে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ওঠা সমালোচনা প্রত্যাখ্যান করেছে।
হোয়াইট হাউজের জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের মুখপাত্র ব্রায়ান হিউজেস এক বিবৃতিতে বলেছেন, "ট্রাম্প যুদ্ধ বন্ধে ইউক্রেইন ও রাশিয়াকে আলোচনার টেবিলে আনার চ্যালেঞ্জ হাতে নিয়ে দ্রুতই এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিচ্ছেন, ফেন্টানিল পাচার কমিয়েছেন।

চীনের বিরুদ্ধে কড়া অবস্থান নিয়ে মার্কিন শ্রমিকদের সুরক্ষা দিচ্ছেন, চরম চাপ দিয়ে ইরানকে আলোচনার টেবিলে এনেছেন। ইয়েমেনের হুতিদের সন্ত্রাসী হামলার জন্য তাদেরকে মূল্য দেওয়ানোর ব্যবস্থা করেছেন এবং যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণের সীমান্ত রক্ষা করছেন, যে সীমান্ত ৪ বছর ধরে আগ্রাসনের জন্য উন্মুক্ত ছিল।

ঝুঁকি বেড়েছে
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গত ৮ দশকে মূলত যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে মুক্তবাণিজ্য, আইনের শাসন এবং ভৌগোলিক অখণ্ডতায় পারষ্পরিক সম্মানের ভিত্তিতে গড়ে ওঠা বিশ্বব্যবস্থার ভবিষ্যত এখন ঝুঁকিতে পড়েছে।

বাণিজ্য অংশীদারদের বিরুদ্ধে দশকের পর দশক ধরে যুক্তরাষ্ট্রকে লুটে নেওয়ার অভিযোগ তুলে ট্রাম্প বিশ্বজুড়ে যে ঢালাও শুল্কনীতি নিয়েছেন, তাতে বিশ্ববাজারে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। ডলারের দাম পড়ে গেছে। বিশ্ব অর্থনীতিতে মন্দার আশঙ্কা বেড়েছে।

ট্রাম্প এই শুল্ককে প্রয়োজনীয় ওষুধ বলে অভিহিত করলেও তার উদ্দেশ্য এখনও স্পষ্ট নয়। যদিও তার প্রশাসন একাধিক দেশের সঙ্গে আলাদা আলাদাভাবে বাণিজ্য চুক্তি করার চেষ্টা করছে। একই সময়ে তিনবছর পুরোনো ইউক্রেইন যুদ্ধ নিয়েও যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘদিনের নীতি প্রায় পুরোপুরি উল্টে দিয়েছেন ট্রাম্প। তিনি রাশিয়ার সঙ্গে উষ্ণ এবং উন্নত সম্পর্ককে অগ্রাধিকার দিচ্ছেন। আর এই প্রচেষ্টায় তিনি নেটো-সমর্থিত ইউক্রেইনকে তাদের কিছু ভূখণ্ড রাশিয়ার কাছে ছেড়ে দিতে বাধ্য করতে পারেন বলেও আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে।

ইউরোপে উদ্বেগ: জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ মেৎর্স ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনে জয়ের পরই যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ইউরোপের সম্পর্ক নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি সতর্ক করে বলেছেন, ট্রাম্প যদি ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতিকে 'আমেরিকা একা' নীতিতে পরিণত করেন, তাহলে ইউরোপের জন্য সম্পর্ক বজায় রাখা কঠিন হবে। ইউরোপের জন্য অন্ধকার ঘনিয়ে আসতে আর সত্যিই কয়েক মুহূর্ত বাকি, বলেন তিনি।

ট্রাম্পের সম্প্রসারণবাদী বক্তব্যেও বিশ্বে ওয়াশিংটনের ভাবমূর্তি ধাক্কা খেয়েছে। গ্রিনল্যান্ড, কানাডা এবং পানামা খাল দখলে নিতে চাওয়ার কথা বলেছেন ট্রাম্প- যেমন কথা বলা আধুনিক যুগের মার্কিন প্রেনিডেন্টরা অনেক দিন থেকেই এড়িয়ে এসেছেন।

বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্পের সম্প্রসারণবাদী এইসব বক্তব্যকে ভবিষ্যতে চীনও স্বশাসিত তাইওয়ানে আগ্রাসন চালানোর সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে যুক্তি হিসাবে দাঁড় করাতে পারে।

ট্রাম্পের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ: ট্রাম্প কীভাবে ভূখন্ড দখল করবেন সে ব্যাপারে বিস্তারিত যদিও কিছু জানান নি কিন্তু কিছু দেশ তার এ ধরনের কথাবার্তাকে গুরুত্ব সহকারেই নিচ্ছে। অনেক দেশই ট্রাম্পের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়তে এরই মধ্যে সচেষ্ট হয়েছে। ডেনমার্ক গ্রিনল্যান্ডে পাহারা জোরদার করার পাশাপাশি সেখানকার প্রতিরক্ষা তহবিল বাড়ানোর চিন্তাভাবনা করছে।

ইউরোপীয় ইউনিয়নেও জার্মানি এবং ফ্রান্স প্রতিরক্ষা বাজেট বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে। কানাডাও ইউরোপের সঙ্গে অর্থনৈতিক ও নিরাপত্তা সম্পর্ক জোরদারের চেষ্টা করছে। আবার কোনও কোনও দেশ চীনের সঙ্গেও ঘনিষ্ঠ হওয়ার চেষ্টা করছে। যেমন: স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজ এরই মধ্যে চীন সফর করেছেন। চীনও বলেছে সম্প্রতি তারা ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সঙ্গে অর্থনৈতিক সহযোগিতা বাড়ানো নিয়ে মতবিনিময় করেছে।

ভবিষ্যৎ: বিশ্লেষক অ্যারন ডেভিড মিলার অবশ্য বলছেন, "এখনও খুব বেশি দেরি হয়ে যায়নি। ট্রাম্প চাইলে পররাষ্ট্রনীতি এখনও আবার বদলে ফেলতে পারেন।

কিন্তু যদি ট্রাম্প কঠোর অবস্থানেই অনড় থাকেন, তাহলে ভবিষ্যতের যে কোনও মার্কিন প্রেসিডেন্টের জন্য বিশ্বব্যবস্থায় একজন গ্যারেন্টর হিসাবে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্ব পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা কঠিন হবে।

মিলার বলেন, এখন যা যা ঘটছে তা এখনও এতদূরে যায়নি যে, যেখান থেকে আর ফিরে আসা যাবে না। তবে তিনি বলেন, মিত্রদের সঙ্গে আমাদের সম্পর্কের কতটা ক্ষতি হচ্ছে এবং প্রতিপক্ষরা কতটা সুবিধা ভোগ করবে সেটি হিসাব-নিকাশ করা হয়ত সম্ভব না।