সে অনুসারে পাচারকৃত সম্পদ পুনরুদ্ধারের কাজ নতুন উদ্যমে শুরু করা হয়েছে। প্রথমে সাবেক ভূমিমন্ত্রীর পাচরকৃত সম্পদ দেশে ফেরতের বিষয়ে আদালতের আদেশের মাধ্যমে আইনি প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে। এরপর আরো অন্তত অর্ধশতাধিক মন্ত্রী-এমপি ও প্রভাবশালীর পাচারকৃত সম্পদ দেশে ফেরতের আইনি প্রক্রিয়া শুরু করা হবে।’
জানতে চাইলে দুদকের মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) মো. আক্তার হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বিদেশ থেকে পাচরকৃত অর্থ দেশে ফেরত আনার প্রক্রিয়া বেশ জটিল ও সময়সাপেক্ষ। বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিদল কমিশনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে এ বিষয়ে বৈঠক করেছে। দেশ থেকে পাচারকৃত সম্পদ পুনরুদ্ধারে তাঁদের সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে। তাঁরা সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন।’
তিনি আরো বলেন, ‘বিদেশে পাচারকৃত সম্পদ পুনরুদ্ধার কার্যক্রম দুদকের একটি চলমান কাজ। এটি নতুন করে শুরু হয়নি। তবে ৫ আগস্টের পর থেকে কমিশনের এই কার্যক্রম আরো গতি পেয়েছে। বাংলাদেশ থেকে পাচারকৃত অর্থ উদ্ধারসহ আইনগত সহায়তা চেয়ে অদ্যাবধি বিশ্বের ১২টি দেশে ৭১টি এমএলএআর পাঠানো হয়েছে। এর মধ্যে ২৭টির জবাব পাওয়া গেছে।’
সর্বাত্মক সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি চার সংস্থার
পাচারকৃত সম্পদ পুনরুদ্ধার কার্যক্রমে চারটি সংস্থা দুদককে সর্বাত্মক সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এগুলো হলো : ইউরোপীয় ইউনিয়ন, বিশ্বব্যাংক, ইউএনওডিসি ও এফবিআই। গত ১ অক্টোবর ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ২৪ সেপ্টেম্বর বিশ্বব্যাংক, ১০ সেপ্টেম্বর ইউনাইটেড ন্যাশনস অফিস ফর ড্রাগস অ্যান্ড ক্রাইম (ইউএনওডিসি) ও গত ৯ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (এফবিআই) প্রতিনিধিদলের সঙ্গে পাচারকৃত সম্পদ পুনরুদ্ধারে আইনি সহযোগিতার বিষয়ে বৈঠক হয়। বৈঠকে তারা দুদকের সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য, বিশেষ করে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ ও পাচারকৃত সম্পদ পুনরুদ্ধারের ক্ষেত্রে সর্বাত্মক সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করে।
সাবেক ভূমিমন্ত্রীর বিষয়ে আইনি প্রক্রিয়া শুরু
গত ১৬ অক্টোবর দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সাবেক ভূমিমন্ত্রী ও তাঁর পরিবারের নামে থাকা তিনটি দেশের ৫৮০ বাড়ি/অ্যাপার্টমেন্ট/জমিসহ স্থাবর সম্পদ জব্দের আদেশ দিয়েছেন আদালত। এর মধ্যে যুক্তরাজ্যে তাঁর ৩৪৩টি, সংযুক্ত আরব আমিরাতে ২২৮টি এবং যুক্তরাষ্ট্রে ৯টি বাড়ি ও অ্যাপার্টমেন্ট রয়েছে। এ ছাড়া সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুটি ব্যাংকের হিসাব এবং বাংলাদেশের একটি ব্যাংকের হিসাব অবরুদ্ধের আদেশ দেওয়া হয়েছে। আর এর মাধ্যমে সম্পদ জব্দের আইনি প্রক্রিয়া শুরু হলো বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা। পরবর্তী সময়ে আদালতের এই আদেশ এমএলএআরের মধ্যেমে সংশ্লিষ্ট দেশে ও সংস্থাগুলোতে পাঠানো হবে। এর আগে গত ৭ অক্টোবর সাইফুজ্জামান চৌধুরী ও তাঁর স্ত্রী রুকমীলা জামানের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞাও দেন আদালত।
পাইপলাইনে অর্ধশতাধিক মন্ত্রী-এমপি ও প্রভাবশালী
অর্ধশতাধিক মন্ত্রী-এমপি ও প্রভাবশালীর বিরুদ্ধে পাচারকৃত সম্পদ জব্দ ও পুনরুদ্ধারে আইনি কার্যক্রম শুরু করা হচ্ছে। তাঁরা হলেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, স্থানীয় সরকার মন্ত্রী তাজুল ইসলাম, সাবেক ধর্মবিষয়ক মন্ত্রী মো. ফরিদুল হক খান, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সাবেক প্রতিমন্ত্রী মো. জাহিদ আহসান রাসেল, সাবেক পানিসম্পদমন্ত্রী আনোয়ার হোসেন, সাবেক তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, সাবেক গৃহায়ণ ও গণপূর্ত এবং সাবেক মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম, সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক, সাবেক সমাজকল্যাণমন্ত্রী ডা. দীপু মনি, সাবেক শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, সাবেক খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার, সাবেক শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ, সাবেক শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ, সাবেক নৌমন্ত্রী শাজাহান খান, সাবেক খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম, সাবেক পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা, সাবেক বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ, সাবেক নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ, সাবেক আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, সাবেক প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন, সাবেক প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমেদ ও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ হাছান মাহমুদ।