জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবদ্দশায় বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্যও তিনি কাতারের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্বে বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রশংসা করেন। একটি উদীয়মান বিনিয়োগ গন্তব্য হিসেবে বাংলাদেশের প্রশংসা করেন তিনি। কাতার ও বাংলাদেশের মধ্যে বিনিয়োগ উৎসাহিতকরণ ও সুরক্ষা সংক্রান্ত চুক্তি স্বাক্ষরের জন্য তিনি উভয় পক্ষকে ধন্যবাদ জানান।
কাতারের আমির বাংলাদেশে সম্ভাবনাময় খাতগুলোতে ব্যবসা অন্বেষণে তাঁর আগ্রহ প্রকাশ করেন। তিনি কাতারের উন্নয়নে বাংলাদেশের প্রবাসী সম্প্রদায়ের ভূমিকার কথা উল্লেখ করেন। কাতারপ্রবাসী বাংলাদেশিরা বাংলাদেশ ও কাতার—দুই দেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক অবদান রাখছেন বলে তিনি জানান।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশ থেকে আরো কর্মী, পেশাজীবী, নার্স, টেকনিশিয়ান, সেবা দানকারী ইত্যাদি নিয়োগের বিষয়টি বিবেচনা করার জন্য কাতার আমিরকে অনুরোধ করেছিলেন। কাতারের আমির এ ব্যাপারে ইতিবাচক সাড়া দিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশ ও কাতারের ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর মধ্যে একটি যৌথ ব্যবসা পরিষদ গঠনকে স্বাগত জানান। ব্যাবসায়িক সম্প্রদায়ের যোগাযোগের সুবিধার্থে তাদের ভিসা পদ্ধতি সহজ করতে প্রধানমন্ত্রী কাতারের প্রতি আহ্বান জানান। প্রধানমন্ত্রী কাতারের বিনিয়োগকারী ও ব্যবসায়ীদের কক্সবাজারে পর্যটন খাত উন্নয়ন এবং তাঁদের জন্য নিবেদিত বিশেষায়িত অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগের সুযোগ অন্বেষণ করার প্রস্তাব দেন।
কাতারের আমির অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং কক্সবাজারের পর্যটন স্পটগুলোতে বিনিয়োগের প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, তিনি কাতার বিনিয়োগ কর্তৃপক্ষ (কিউআইএ) এবং কাতারের ব্যাবসায়িক প্রতিনিধিদের বাংলাদেশ সফর করতে এবং প্রস্তাবিত খাতগুলোতে বিনিয়োগের সম্ভাবনা দেখতে বলবেন।
কাতারের আমির তাঁর দেশে মুক্ত অর্থনৈতিক অঞ্চল সম্পর্কে বৈঠককে অবহিত করেন। তিনি সেখানে সম্ভাব্য বিনিয়োগের সুযোগ অন্বেষণ করতে কাতারে ব্যাবসায়িক প্রতিনিধিদল পাঠাতে প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ করেন। উভয় নেতা জ্বালানি খাতে বিদ্যমান দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতার প্রতি সন্তোষ প্রকাশ করেন। তাঁরা এ সহযোগিতা আরো এগিয়ে নেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেন।
আমির ও তাঁর প্রতিনিধিদলের সদস্যরা দুপুরে বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। সেখানে তাঁরা দ্বিপক্ষীয় বিভিন্ন বিষয়ে মতবিনিময় করেন। রাষ্ট্রপতি কাতারে সাড়ে তিন লাখ বাংলাদেশি কর্মীর কর্মসংস্থানের জন্য আমিরকে ধন্যবাদ জানান। তিনি বাংলাদেশ থেকে আরো দক্ষ ও আধাদক্ষ কর্মী নিয়োগের অনুরোধ জানান।
পরে কাতারের আমির একটি আনুষ্ঠানিক মধ্যাহ্নভোজে যোগ দেন। কাতারের আমিরের সম্মানে বঙ্গভবনে একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। মধ্যাহ্নভোজে প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রিপরিষদের সদস্যরা ছাড়াও গণমান্য ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন। সফর শেষে গতকাল বিকেলে নেপালের উদ্দেশে ঢাকা ছাড়েন কাতারের আমির।
আমিরের ঢাকা সফরের প্রথম দিন সোমবার সন্ধ্যায় বাংলাদেশ ও কাতারের ব্যবসায়ীরা বৈঠক করেন। বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান সাংবাদিকদের বলেন, কাতার বাংলাদেশের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) করতে আগ্রহী।

রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের সঙ্গে গতকাল বঙ্গভবনে সাক্ষাৎ করেন কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানি। এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উপস্থিত ছিলেন।