এই কর্মকর্তা বলেন, গত সোমবার পর্যন্ত অধিদপ্তরে নিবন্ধিত লাইলেন্সধারী বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ব্লাড ব্যাংকের সংখ্যা ১৫ হাজার ১৪৩। এর মধ্যে ব্লাড ব্যাংক ১৯৪টি, ডায়াগনস্টিক সেন্টার ৯ হাজার ৯৫৬টি এবং চার হাজার ৯৯৩টি হাসপাতাল রয়েছে। এর বাইরে যারা আছে, তাদের কারো লাইসেন্স প্রক্রিয়াধীন, কারো লাইসেন্স সাসপেন্ড (স্থগিত) রয়েছে। তবে স্বাস্থ্য বিভাগের সব বিভাগীয় পরিচালক ও সিভিল সার্জনকে আগামী সাত কর্মদিবসের মধ্যে দেশের সব বেসরকারি হাসপাতাল বা ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ব্লাড ব্যাংকের তথ্য দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ১৯৮২ সালের মেডিক্যাল অ্যান্ড প্রাইভেট ক্লিনিকস অ্যান্ড ল্যাবরেটরিস অর্ডিন্যান্স অনুযায়ী, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অনুমোদন ছাড়া কোনো হাসপাতাল, ক্লিনিক বা ডায়াগনস্টিক সেন্টার চালানোর সুযোগ নেই। কিন্তু বৈধ-অবৈধ অনেক হাসপাতালে প্রায়ই ভুল চিকিৎসায় রোগীর মৃত্যু হচ্ছে। চলতি জানুয়ারিতে রাজধানীর বাড্ডার ইউনাইটেড মেডিক্যাল হাসপাতালে খতনা করাতে গিয়ে আয়ান নামের এক শিশুর মৃত্যুর পর জানা যায়, হাসপাতালটি অনুমোদন ছাড়াই কার্যক্রম চালিয়ে আসছিল। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর পরিদর্শন করে জানতে পেরেছে, হাসপাতালটি কখনো নিবন্ধনের আবেদনই করেনি। নির্মীয়মাণ ভবনে চিকিৎসাসেবা পরিচালনা করছিল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। হাসপাতালের পরিবেশের ছাড়পত্র, মেডিক্যাল বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, হাসপাতালের অর্গানোগ্রাম বা জনবলের তালিকা পাওয়া যায়নি।
এদিকে ওই ঘটনার পর ব্যাপক সমালোচনার মধ্যে ইউনাইটেড মেডিক্যাল হাসপাতালের সব ধরনের কার্যক্রম বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এ ছাড়া গত সোমবার সারা দেশে লাইসেন্স ও অনুমোদনহীন হাসপাতালের তালিকা তৈরি করে তিন মাসের মধ্যে তা জমা দিতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
আয়ানের পরিবারের সদস্যরা গতকাল সচিবালয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেনের সঙ্গে দেখা করেন। তাঁরা আয়ানের মৃত্যুর ঘটনায় জড়িতদের শাস্তি দাবি করেন। স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, বিষয়টি তিনি জেনেছেন, আইন অনুযায়ী সব ধরনের ব্যবস্থা তিনি নেবেন।
এ সময় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ডা. সামন্ত লাল সেন বলেন, ‘আমি বলেছি, দুর্নীতির ব্যাপারে ছাড় দেব না। এই অননুমোদিত ও লাইসেন্স ছাড়া হাসপাতালগুলোকে চলতে দেওয়া যাবে না। বিষয়টি আমি এক দিনে পারব না; কিন্তু আমার মেসেজ হচ্ছে যে এই অননুমোদিত ক্লিনিক, হাসপাতাল বন্ধ করে দিতে হবে। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা অবশ্যই নেওয়া হবে। এগুলোর জন্য আমি নিজেও ভুক্তভোগী।’
এর আগে করোনা মহামারির মধ্যে ঢাকার রিজেন্ট হাসপাতালে চিকিৎসার নামে প্রতারণা ও জালিয়াতির ঘটনা সামনে আসে। ওই সময় জানা গিয়েছিল, অনুমোদন ছাড়াই চলছিল হাসপাতালটি। ২০২০ সালের নভেম্বরে ঢাকার আদাবরের মাইন্ড এইড হাসপাতালে এক সহকারী পুলিশ কমিশনারকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনার পর জানা যায়, ওই হাসপাতালও সেবা দেওয়ার অনুমোদন পায়নি।
এসব ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ২০২২ সালের ২৫ মে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে সারা দেশে অনুমোদিত এবং অনুমোদনহীন বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানের তালিকা পাঠাতে বিভাগীয় পরিচালকদের নির্দেশ দেয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। বিভাগীয় কার্যালয়গুলোর পাঠানো তথ্য নিয়ে লাইসেন্সবিহীন ক্লিনিক-ডায়াগনস্টিক সেন্টারের একটি তালিকা তৈরি করে অধিদপ্তর। ওই তালিকায় ১১ হাজার ৯৪০টি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের নাম আসে। যারা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অনুমোদন এবং যথাযথ সুযোগ-সুবিধা ছাড়াই চিকিৎসাসেবা দিয়ে যাচ্ছিল সে সময়।