ওয়েস্ট অরেঞ্জ , অবস্থান নিউজার্সির পশ্চিমে ।
আকাঁবাকা পাহাড়ের পথ ধরে মেয়েদের নিয়ে আমাদের যাত্রা শুরু। ঠিক হল বড় মেয়ে গাড়ি চালাবে আর পাশে ছোটজন বসবে। পাহাড়ী রাস্তা জেনে মেয়ের বাপ সামনের সিটে বসতে গেলে তাকে পেছনে পাঠিয়ে দেয়া হয়। বলা হয় তুমি তোমার বউ এর পাশে যেয়ে বসো আর হলিডে মুডে থাকো। মেয়ে গাড়ি টান দিলে বেচারা দেখলাম চুপচাপ সীটের হাতল ও জানালার হাতল শক্ত করে ধরে বসে সামনে অনিশ্চিত দৃষ্টি দিয়ে তাকিয়ে আছে। আমি মনে মনে বলছিলাম উপায় নেই গোলাম হোসেন এখন থেকে মেয়েদের পেছনে বসা শেখো। গাড়ির স্পিড কত হবে সবই তাদের মুডের উপর। গাড়ি ছুটছে । একেবারেই পাহাড়ের চূড়ায় উঠতে শুরু করেছে ।কান বন্ধ হয়ে আসবে ।মাটিতে থেকেই আকাশের ফ্লেবার পাবেন। পুরাই কানের ভেতরে কট কট শব্দ শুনতে পেলাম। সামনে থেকে সাবধানতার বানী আসে , আম্মু ভয় পাইয়ো না আমরা পাহাড়ের চূড়ায় উঠতেছি। চেয়ে দেখলাম পাশের ভদ্রলোক আরো শক্ত করে হাতল ধরে বসেছে ।
দি হাইলন এটি একটি ঐতিহাসিক রেস্তোরাঁ ।বিশেষ করে সামারে এর সৌন্দর্য দ্বিগুন হয় । ঘর থেকে বের হওয়ার আগে অবশ্যই আবহাওয়া দেখে বের হবেন। গরম হলে এর ভেতর ও বাইরের ভিউ চমৎকার লাগবে। কাজেই যেতে হলে সেই এলাকার তাপমাত্রা অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। পোশাক কেমন হবে তা আপনার উপর । এর ভেতরে যেয়ে দেখেছি বেশীরভাগই আমেরিকার সিনিয়র সিটিজেন । কিছু আসছেন একেবারেই ছোট বাচ্চাদের সাথে নিয়ে। মানে আমার দুইটা ছাড়া টিনএজারদের দেখা মেলেনি। গম্ভীর প্রকৃতিক পরিবেশ এই প্রজন্মের ভালো লাগার কথা না। এত কথা বলবার কারন এর ভেতরের পরিবেশ বেশ গুরুগম্ভীর।
এটি ঐতিহাসিক রেস্তোরাঁ হবার পেছনে কারন অনেক। কোথা থেকে শুরু করব বুঝতে পারছি না। আচ্ছা ভেতর থেকেই বলি। পুরো রেস্টুরেন্টেই গ্লাস দিয়ে তৈরি । ভেতরে ও বাইরে বসে খাবার ব্যবস্থা আছে। দেখার মত ল্যান্ডমার্ক হল জানালা দিয়ে দেখতে পারেন নিউ ইয়র্ক সিটির স্কাইলাইন । শুধু তাই না ফ্রি তে দেখবেন ম্যানহাটনের সৌন্দর্য ও নিউজার্সির সাথে সংযুক্ত আশেপাশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের ল্যান্ডস্কেপ । অনেকখানিই আকাশ থেকে দেখছেন মনে হবে । অভূতপূর্ব সব প্রাকৃতিক দৃশ্যবলী যা দেখে ক্ষনিকের জন্য হলেও মনে প্রশান্তি আসবে।
দি হাইলন থেকে কিভাবে এত কিছু একসাথে দেখা যায় ?হাইলন প্যাভিলিয় একেবারে পাহাড়ের চূড়ার উপর দাঁড়িয়ে আছে । এটি এসেক্স কাউন্টির কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত । এখানে চারশ একরের ও বেশি জায়গা নিয়ে সুন্দর একটি পার্ক আছে ও একটি প্রকৃতিক বৃক্ষরাজী সংরক্ষণ কেন্দ্র আছে। এর নানান গাছগাছালি নিয়ে পুরো এলাকা ছবির মতো সাজানো।
আমার কাছে এই রেস্টুরেন্টে খুব বেশী গুরুত্বপূর্ণ লেগেছে এই কারনে যে এতে ঢুকবার মুখেই রয়েছে ৯/১১ শহীদদের স্মরণে তৈরী করা এসেক্স মেমোরিয়াল । নদীর আর পাহাড়ের গায়ে দেয়াল তুলে দেয়ালের গায়ে সব শহীদদের নাম খোদাই করা আছে। ফায়ার ডিপার্টমেন্টের তৈরী এই জায়াগার ৯/১১ সময় মানুষের জীবন বাজি রেখে মানুষের জীবন রক্ষায় শহীদ হওয়া তাদের সহকর্মীদের নাম নাম্বার সহ লোহা দিয়ে বানিয়ে হেলমেট সংরক্ষণ করেছে। যা দেখে মনে আপনার মন খারাপ হয়ে আসবে । তাদের প্রতি শ্রদ্ধায় মাথা নত হয়ে আসবে। আপনার মনের ভেতরে কথারা কলবলিয়ে উঠবে , এসব ঘটনা যেই ঘটাক না কেন মরেছে তো মানুষই। এখনো মানুষ মরছে । মোদ্দাকথা হলো আপনারা তখনো আমেরিকানদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছেন । এখনো হচ্ছেন ।
হাইলন-এ গ্রিল রুম হল আধুনিক স্টেকহাউসের ডাইনিং । কথিত আছে এখানের সেরা মানের মাংস (আধা কাচা মাংসের স্টেক ) আমেরিকানদের তাজা রাখে । আমি বরাবরের মতো লেবু আর লবন দেয়া দুইপিস স্যামন সাথে তাদের বিখ্যাত পানীয় প্রসেকো । অন্যরা কাচা মাংসের স্টেক খেয়েছে। কঠিন সব নাম । তাই মনে নেই। এদের La Marca Prosecco নিতে ভুলে যাবেন না । খাবার ও পানীয় মজার ছিল । দামও নাগালের মধ্যে। চারপাশে দর্শনীয় দৃশ্য ছাড়াও সিনেমার নায়ক নায়িকাদের মত সুন্দর ছেলে মেয়েদের অনবদ্য আন্তরিক পরিষেবা আপনাকে মুগ্ধ করবে । আউটডোর ইনডোর বার এবং ম্যানহাটনের পেছনের দৃশ্য সহ নতুন আমেরিকান নিত্য নতুন খাবারের সাথে নিজেকে সামান্য আপস্কেল করতে ওয়েস্ট অরেঞ্জ হোক আপনার আগামী হলিডের গন্তব্য । সবার জন্য শুভকামনা।