ঢাকা: মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, পাকিস্তান আমলে যে রাজনীতি ছিল সেখানে আন্দোলনে ছাত্ররা সবসময় ছিল পথিকৃৎ। কিন্তু আজকে দুঃখের সাথে বলতে হয়, বর্তমানে আদর্শভিত্তিক কোনো ছাত্ররাজনীতি নেই। অন্যান্য রাজনীতিও আজ ম্রিয়মাণ। সে সময় সাংস্কৃতিক আন্দোলন হতো। আজকে শুধু সাম্প্রদায়িক সভা সমাবেশ দেখি, সাংস্কৃতিক কোনো সভা-সমাবেশ দেখি না।
আজ শুক্রবার রাজধানীর ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স, বাংলাদেশ-এ প্রজন্ম ৭০ এর দ্বিতীয় প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত প্রজন্ম উৎসব ও আলোচনাসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব বলেন।
বর্তমান ছাত্ররাজনীতির দুরবস্থা তুলে ধরে আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, ‘আমরা যখন রাজনীতি করেছি উনসত্তর, সত্তর ও একাত্তর সালে, তখন আমাদের রাজনৈতিক লক্ষ্য ছিল মানুষের রাজনৈতিক মুক্তির পাশাপাশি অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জন করা। রাজনৈতিক স্বাধীনতা কখনোই মানুষের মুক্তি আনে না, যদি অর্থনৈতিক স্বাধীনতা না থাকে।'
তিনি বলেন, 'আজ সেই অর্থনৈতিক স্বাধীনতার কথা, বৈষম্যের কথা ছাত্রসমাজ বলে না। বৈষম্যের বিরুদ্ধে আমরা তখন আন্দোলন করেছি। পাকিস্তান আমলে আদমজী, সায়গলসহ ১৭ পরিবার কিভাবে সমস্ত অর্থসম্পদ কুক্ষিগত করেছে। এদের দুই থেকে তিন ভাগ মানুষের কাছে যে সম্পদ ছিল তা ছিল বাকি ৯৭ ভাগ মানুষের সম্পদের সমান। আমরা তখন এসব নিয়ে কথা বলেছি।'
‘স্বাধীনতার সুফল আমরা পাচ্ছি' উল্লেখ করে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী বলেন, 'মানুষের জীবনযাত্রার পরিবর্তন হচ্ছে দেশের উন্নতি হচ্ছে অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়ন হচ্ছে। কিন্তু বৈষম্য কতটুকু আছে বা সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয় কতটুকু হয়েছে সেগুলোর হিসাব কিন্তু আর এখন রাজনীতিবিদদের কাছেও নেই।'
তিনি আরো বলেন, 'আমার দল বলেন, অন্যান্য রাজনৈতিক দল বা মেনন ভাইয়ের দল বলেন সেই রাজনীতিটা যেটা আগে ছিল এখন আর কোনো দলের মধ্যে নেই। আদর্শের রাজনীতি এখন শুধু নামে আছে। তা বাস্তবায়নের জন্য যে ত্যাগ-তিতিক্ষা, চেতনা ও তার ভিত্তিতে পরবর্তী প্রজন্মকে গড়ে তোলার চেষ্টা সেটা নেই।'
‘আমরা চেতনার কথা বলি কিন্তু সেই চেতনাও যেন হারিয়ে ফেলেছি' উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, 'সেই আগের আন্দোলন বা চেতনা কেবল ম্রিয়মাণই না, আমার মনে হয় উধাও হয়ে গেছে। অর্থনৈতিক বৈষম্য যেটা দূর করা আমাদের মহান স্বাধীনতার অন্যতম অঙ্গীকার ছিল আমরা কিন্তু সেই পথে হাঁটি না। অসাম্প্রদায়িক রাজনীতিকে গ্রাস করে ফেলেছে সাম্প্রদায়িক রাজনীতি।'
এসব বক্তব্যকে ‘ব্যক্তিগত অভিমত’ উল্লেখ করে মোজাম্মেল হক বলেন, 'আমার এই বক্তব্য সরকারের বা আমার দলের বক্তব্য নয়।'
'জঙ্গিবাদকে মোকাবেলার জন্য যে চেতনা দরকার তা ছাত্রসমাজ ও সাধারণ মানুষের মধ্যে অনুপস্থিত' উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, 'এখন কিভাবে আর্থিক সুবিধা নেওয়া যাবে, কিভাবে দুর্নীতি, ঘুষ, কালোবাজারির মাধ্যমে রাতারাতি বড়লোক হওয়া যাবে সেদিকে মানুষের লক্ষ্য ও মনোযোগ।'
বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেন, ‘উনসত্তর, সত্তর ও একাত্তর ছিল এদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। উনসত্তর বঙ্গবন্ধুকে একক নেতায় পরিণত করেছিল। উনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান না হলে ৭০ এর নির্বাচনের প্রবল ঢেউ তৈরি হতো না এবং একই সাথে একটি নিরস্ত্র জাতিকে যোদ্ধা জাতিতে পরিণত করার মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধ হতো না। আজকে উনসত্তর, সত্তর ও একাত্তরের যে চেতনাবোধ সেটাকে আরো সংগঠিত করতে হবে।'
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন আগতলা ষড়যন্ত্র মামলার অভিযুক্ত ও বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আলী নওয়াজ, প্রজন্ম '৭০ বাংলাদেশের সভাপতি আশরাফুল করিম ভূঁইয়া সেলিম ও সংগঠনের অন্য সদস্যরা।