রোহিঙ্গা এবং হোস্ট কমিউনিটির শিশুদের বিকাশ ও শিক্ষাগ্রহণ নানান চ্যালেঞ্জে জর্জরিত। তাদের যথাযথ বিকাশ নিশ্চিতে প্রয়োজন সমন্বিত প্রচেষ্টা ও উদ্যোগ। তাই তাদের দক্ষ জনশক্তি হিসেবে গড়ে তুলতে প্রশিক্ষিত রোহিঙ্গা নারী শিক্ষক এই সংকট মোকাবিলায় হতে পারে শক্তিশালী হাতিয়ার।
মঙ্গলবার (১৩ ডিসেম্বর) ঢাকার প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে লার্নিং শেয়ারিং ওয়ার্কশপে বক্তারা এসব কথা বলেন।
বাংলাদেশে রোহিঙ্গা এবং হোস্ট কমিউনিটিতে সমন্বিত শিশু বিকাশ কেন্দ্র নিয়ে একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে ইউনিসেফ। ‘প্রোভাইডিং আর্লি চাইল্ডহুড অ্যান্ড বেসিক এডুকেশন ফর রোহিঙ্গা অ্যান্ড হোস্ট কমিউনিটি চিলড্রেন’ নামের ওই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের অতিরিক্ত সচিব সৈয়দ মামুনুল আলম বলেন, রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফিরে যাওয়ার ক্ষেত্রে ভাষাগত ও যোগাযোগ দক্ষতা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
কক্সবাজারের শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, এখনো রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর নানাবিধ চ্যালেঞ্জ রয়েছে। তাদের জীবনমান উন্নয়নে শিক্ষা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশ সরকার এক্ষেত্রে গুরুত্ব সহকারে নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছে। রোহিঙ্গা নারীদের শিক্ষক হিসেবে গড়ে তুলতে প্রশিক্ষণ প্রদানের উদ্যোগটিকেও গুরুত্বপূর্ণ বলে উল্লেখ করেন তিনি।
অতিরিক্ত শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (উপসচিব) মোহাম্মদ সামছু-দ্দৌজা বলেন, রোহিঙ্গা সংকটের শুরুতে আমাদের প্রথম লক্ষ্য ছিল তাদের জীবন রক্ষা করা। এখন আমরা তাদের শিক্ষার দিকে জোর দিচ্ছি। তাই শিশুদের প্রাক-প্রাথমিক স্কুলের জন্য প্রস্তুত করতে রোহিঙ্গা ক্যাম্প এবং হোস্ট কমিউনিটিতে মোট ৬০টি সমন্বিত শিশু বিকাশ কেন্দ্র পরিচালনা করছে প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ।
মোট পাঁচটি ক্যাম্পে এবং হোস্ট কমিউনিটির মধ্যে রাজাপালং ইউনিয়নে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হচ্ছে। ১৪৪০ জন পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের সুন্দর বিকাশ নিশ্চিতে কাজ করছে এই কেন্দ্রগুলো। ৬০ জন ফ্যাসিলিটেটরের মাধ্যমে কেন্দ্রগুলো পরিচালিত হয়।
রোহিঙ্গা ও হোস্ট কমিউনিটি মিলিয়ে ৬-১৪ বছর বয়সী শিশুদের মধ্যে ইংরেজি বলতে, পড়তে ও লিখতে পারার হার ১১ শতাংশ থেকে ৩৫.৫১ শতাংশে উন্নীত হয়েছে।
পাশাপাশি ২০২২ সালে ৫০০ জন মেয়ে শিক্ষার্থীদের মিয়ানমারের কারিকুলামের মাধ্যমে শিক্ষক হয়ে উঠতে সহায়তা করছে প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ। এর মধ্য দিয়ে ৯৭ জন প্রশিক্ষিত নারী শিক্ষকের পুল তৈরি করা হয়েছে। যেন যারা পরবর্তীতে শিখন বিষয়ক চাকরির ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পেতে পারেন।
প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের টেকনিক্যাল স্পেশালিস্ট ইসরাত জাহান সুমি জানান, ২০২৪ সালের মধ্যে আরও ১০০ জন রোহিঙ্গা নারীকে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে শিক্ষক হিসেবে গড়ে তোলার জন্য কাজ করা হবে।
ইউনিসেফের এডুকেশন স্পেশালিস্ট ফ্রেডরিক লিংকনেক্ত বলেন, এডুকেশন সাপোর্ট সেক্টরের সহায়তায় দক্ষ শিক্ষক, বিশেষ করে রোহিঙ্গা নারী শিক্ষক গড়ে তুলকে প্ল্যান ইন্টারন্যাশনালকে নিয়ে কাজ করছে ইউনিসেফ।