ঢাকা: বিএনপির আমলে রিজার্ভ ছিল চার বিলিয়ন। বিএনপি রিজার্ভও খেয়ে ফেলেছিল। তারা অর্থনীতি গিলে ফেলেছিল। এ দেশের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা-আদর্শ গিলে ফেলেছিল।
এবার যদি ক্ষমতায় যেতে পারে, বিএনপি দেশসহ গিলে খাবে।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের গতকাল শনিবার বিকেলে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের পাশের উন্মুক্ত স্থানে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে বক্তব্য দেওয়ার সময় এসব কথা বলেন। তিনি বিএনপি থেকে সাবধান থাকার জন্য দেশবাসীকে সতর্ক করেন।
গতকাল ছিল ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন। সেই অনুষ্ঠানকে আওয়ামী লীগ তার সাংগঠনিক শক্তি হিসেবে প্রদর্শনের জন্য সমাবেশের মতো করে আয়োজন করে। লক্ষ্য ছিল একই দিনে রংপুরে বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশের পাল্টা জবাব দেওয়া। বিএনপির আগের তিন সমাবেশে বিপুল লোকসমাগম আলোচনায় আসায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও গতকালের সমাবেশে বিপুল লোকসমাগম করা হবে বলে প্রচারণা চালায়। রংপুরের চেয়ে বেশি লোক জড়ো করার ঘোষণাও দিয়েছিলেন সমাবেশের আয়োজনের দায়িত্বে থাকা দলীয় নেতারা।
গতকালের সমাবেশে দলের কেন্দ্রীয় গুরুত্বপূর্ণ নেতারা উপস্থিত ছিলেন। দুপুর ২টায় নির্ধারিত সময় থাকলেও সকাল থেকেই নেতাকর্মীরা মিছিল নিয়ে সমাবেশস্থলে হাজির হন। ঢাকা জেলার সাত থানা থেকে নেতাকর্মীরা সমাবেশে যোগ দেন। দুপুর না হতেই সম্মেলনস্থল লোকে লোকারণ্য হয়ে যায়। সম্মেলনে উপস্থিত নেতাকর্মীদের মধ্যে তরুণ-যুবকরাই ছিলেন বেশি। বেশির ভাগের বয়স ছিল ২০ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে। তাঁরাই স্লোগানে স্লোগানে পুরো অনুষ্ঠান মাতিয়ে রাখেন। সম্মেলনে কয়েক হাজার নারী নেতাকর্মীও যোগ দেন। ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের মহিলাবিষয়ক সম্পাদক হালিমা আক্তারের নেতৃত্বে নারীদের একটি বড় মিছিল এসে সমাবেশে যোগ দেয়। এই নারীরা সবাই সবুজ শাড়ি পরে সম্মেলনে আসেন। মহিলা আওয়ামী লীগ ও যুব মহিলা লীগের অনেক নেতাকর্মীও সমাবেশস্থলে উপস্থিত ছিলেন। সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘সাবধান, বিএনপি থেকে সাবধান। দেখেন না কেমন মারমুখো! মনে হয় মরণকামড় দেবে। মরণকামড় আর জীবনকামড় যে কামড়ই দেন..., তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ভূত মাথা থেকে নামিয়ে ফেলুন। তত্ত্বাবধায়ক সরকার আর হবে না। ’
বিএনপির আন্দোলনের জন্য দুবাই থেকে অর্থের জোগান আসছে বলে অভিযোগ করেন ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, ‘দুবাই থেকে টাকা আসে। খোঁজ পেয়েছি। ব্যবস্থা হবে। ফখরুল সাহেবের খবর কী? ফখরুল শুয়ে আছেন টাকার বস্তার ওপর। টাকা রে টাকা, দুবাইয়ের টাকা!’
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘কত রঙ্গ দেখাইলা রে জাদু। তিন দিন আগে রংপুরে সবাইকে এনে শুইয়ে রেখেছে। বাড়ির ছাদে, গুদামঘরে শুইয়ে রেখেছে। ’ তিনি বলেন, ‘যতই নাচানি করেন, লাফালাফি করেন, লাভ নেই। আওয়ামী লীগ ঐক্যবদ্ধ থাকলে, তারা যত চেঁচামেচিই করুক, যত সমাবেশ করুক, ঐক্যবদ্ধ আওয়ামী লীগকে কেউ হারাতে পারবে না। ঐক্যবদ্ধ আওয়ামী লীগ বিজয়ী হবে। ’
বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশগুলোতে কাঙ্ক্ষিত লোকসমাগম হচ্ছে না দাবি করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘রংপুরে একটা সমাবেশ করেছে। ফখরুল সাহেব, কত লোক হলো? চট্টগ্রামে লাখের কাছাকাছি, ময়মনসিংহে ৩০ (হাজার), খুলনায় ৩০ (হাজার), রংপুরে কত করলেন? ৫০...৬০ (হাজার)? আর ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন হচ্ছে। খোঁজ নেন কত লোক হয়েছে। টিভিতে দেখেন। ঢাকার ছবিও দেখুন, রংপুরের ছবিও দেখুন। ’
বিএনপির উদ্দেশে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘চট্টগ্রামে দেখাব। আগামী ৪ ডিসেম্বর। পোলো গ্রাউন্ডে। আপনাদের তো মাঠের চার ভাগের দুই ভাগও পূরণ হয়নি। ৪ ডিসেম্বর শেখ হাসিনা যাবেন। ১০ লাখ লোক সেদিন দেখাব চট্টগ্রামে। আপনারা ১০ লাখ মুখে বলবেন, আমরা বাস্তবে দেখাব। ’
বিএনপির উদ্দেশে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘খেলা হবে। আন্দোলনে খেলা হবে, নির্বাচনে খেলা হবে, ভোট চুরির বিরুদ্ধে খেলা হবে, ভোট জালিয়াতির বিরুদ্ধে, দুর্নীতির বিরুদ্ধে খেলা হবে। ’ তিনি বলেন, ‘খেলা হবে জনগণের সঙ্গে আপনাদের। আপনাদের মতো সাম্প্রদায়িক, খুনিদের হাতে গণতন্ত্র নিরাপদ নয়, স্বাধীনতা, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নিরাপদ নয়। ’
ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপি যদি ক্ষমতায় আসে তাহলে আবারও মানুষ খুন করবে। ভোট চুরি করবে। গণতন্ত্র হরণ করবে। বিএনপির সঙ্গে জনগণ নেই।
সম্মেলনে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশের চেয়ে আমাদের একটি জেলার সম্মেলনও সারা দেশে বেশি আলোড়ন তুলেছে। ’ জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, ‘বিএনপি দেশকে জঙ্গিবাদী রাষ্ট্র বানাতে চায়। আমরা বেঁচে থাকতে সেটি হতে দেব না। জিয়াউর রহমান বেঁচে থাকলে বঙ্গবন্ধু, শেখ কামাল, শেখ রাসেলকে হত্যার দায়ে তাঁর ফাঁসি হতো। ’
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, ‘বিএনপি ১০ ডিসেম্বর ক্ষমতা দখল করে নেবে বলে শুনেছি। তারা নাকি মন্ত্রিপরিষদও গঠন করেছে। বিএনপি এটি কিভাবে করতে পারে, তা আমার জানা নেই। কিন্তু আওয়ামী লীগ জনগণের কাতারে থাকে, জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে চলে। এ সমাবেশে লাখো জনতার উপস্থিতি বলে দিচ্ছে, আমরা আবারও সরকার গঠন করব। আগামী দ্বাদশ নির্বাচনে শেখ হাসিনার নৌকার জয় নিশ্চিত করতে হবে, ভোটে জিতে প্রধানমন্ত্রী হবেন বঙ্গবন্ধুকন্যা। ’
প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান বলেছেন, ‘আমরা বলে দিতে চাই, সংবিধান অনুযায়ী আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে। কোনো তত্ত্বাবধায়ক সরকার হবে না। তারা নির্বাচনে এলে আসবে, না এলে নাই। ’
সম্মেলনে বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কামরুল ইসলাম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু প্রমুখ। সভাপতিত্ব করেন ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বেনজির আহমেদ ও সঞ্চালনা করেন ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুর রহমান।
সম্মেলনে মানুষের ঢল
প্রায় আট বছর পর ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন উপলক্ষে শেরেবাংলানগরে বাণিজ্য মেলার পুরনো মাঠে নেতাকর্মীদের ঢল নামে গতকাল। ঢাকা জেলার সাত থানা কমিটির নেতাকর্মীরা ব্যানার, ফেস্টুন, পোস্টারসহ মিছিল নিয়ে, ঢাকঢোল বাজিয়ে সম্মেলনস্থলে আসেন। দুপুরের আগেই পুরো মাঠ পূর্ণ হয়ে আশপাশের সড়কে অবস্থান নেন দলের নেতাকর্মীরা।
সম্মেলনস্থলে থানাওয়ারি ভাগ করে বসার ব্যবস্থা করা হয়। নেতাদের নাম ও সংসদীয় আসন অনুযায়ী টি-শার্ট ও ক্যাপ পরে অবস্থান নেন নেতাকর্মীরা। জেলার নেতাকর্মীদের নামে ব্যানার-ফেস্টুনে আশপাশের এলাকা ছেয়ে যায়। কেন্দ্রীয় নেতাদের শুভেচ্ছা জানিয়ে জেলাজুড়ে তৈরি করা হয় অসংখ্য তোরণ। সম্মেলনস্থলে নেতাদের বসার জন্য নৌকার আদলে মঞ্চ তৈরি করা হয়।
বেনজির সভাপতি, তরুণ সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত
সম্মেলনের মঞ্চ থেকে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের নবনির্বাচিত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নাম ঘোষণা করেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। বেনজির আহমেদ সভাপতি পদে পুনর্নির্বাচিত হন। তবে সাধারণ সম্পাদক পদে পরিবর্তন এসেছে। সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন পনিরুজ্জামান তরুণ। তিনি গত কমিটিতে সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন।