নিউইয়র্ক: বিলুপ্তির হুমকিতে থাকা ভাষাসমূহ রক্ষায় সকলকে একযোগে কাজের আহ্বান জানিয়ে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সভাপতি কাসাবা কোরোসি বলেছেন, মাতৃভাষার ব্যবহার সবসময়ই সহনশীলতা এবং সামাজিক অন্তর্ভুক্তিকে উৎসাহিত করে। আজকের ইন্টারলকিং চ্যালেঞ্জসমূহ মোকাবেলার সাথে রুপান্তরমূলক সমাধানের পথও বাতলে দেয় মাতৃভাষার ব্যাপক প্রয়োগ সম্ভব হলে। 

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে ২১ ফেব্রুয়ারি মঙ্গলবার অপরাহ্নে নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দফতরে অনুষ্ঠিত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। 

চলতি ৭৭তম সাধারণ অধিবেশনের সভাপতি কোরোসি আরো বলেন, আমাদের মাতৃভাষা আমাদের শৈশবের সাউন্ডট্রেক। বিশ্ব সম্পর্কে জানার ক্ষেত্রে মাতৃভাষা হচ্ছে সকলের প্রাথমিক অবলম্বন। তা আমাদেরকে পরস্পরের সান্নিধ্যে আসার সুযোগ তৈরী করে। এবং জ্ঞান, স্মৃতি, ইতিহাসকে ভাগাভাগি করার ক্ষমতা দেয়। 

 

বাংলাদেশ, ভারত, ডেনমার্ক, গুয়েতেমালা, হাঙ্গেরী, মরক্কো এবং পূর্ব তিমোরের সম্মিলিত উদ্যোগে ৪ নম্বর কনফারেন্স কক্ষে এ অনুষ্ঠান হয়। সূচনা ঘটে বায়ান্নর ২১ ফেব্রুয়ারির ভাষা শহীদ, বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আত্মার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নিরবতা পালনের মধ্য দিয়ে। এরপরই শ্রীচিন্ময় সেন্টারের শিল্পীরা দিবসের থিমসং পরিবেশন করেন। ১৭ শিল্পীর একজন ছিলেন বাঙালি। ভিনদেশীদের কণ্ঠে একুশের অমর সঙ্গীত ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি-আমি কী ভুলিতে পারি’ পরিবেশনের সময় পুরো কনফারেন্স কক্ষে ভিন্ন এক আবহ তৈরী হয়। 

শ্রীচিন্ময় সেন্টারের শিল্পী দলের প্রধান এ সময় গানের রচয়িতা আব্দুল গাফ্ফার চৌধুরীর প্রতিও সম্মান জানিয়েছেন। এরপর অনুষ্ঠানের অতিথিগণ আসন গ্রহণ করলে স্বাগত বক্তব্য দেন বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ আব্দুল মুহিত। বাংলায় প্রদত্ত বক্তব্যে তিনি মায়ের ভাষার জন্যে বাঙালির রক্তদানের দিনটি কীভাবে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে পরিণত হয়েছে-তা বর্ণনা করেন। 

উল্লেখ্য, জাতিসংঘ সদর দপ্তরে এটি ছিল টানা সপ্তম বারের মত যথাযোগ্য মর্যাদায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপনের ঘটনা। বিগত বছরের ন্যায় এ বছরও জাতিসংঘের ছয়টি দাপ্তরিক ভাষায় গোটা অনুষ্ঠানটি অনুবাদের সুব্যবস্থা রাখা হয়। 

আলোচনা পর্বে ভারতের স্থায়ী প্রতিনিধি রুচিরা ক্যাম্বোজ, ডেনমার্কের স্থায়ী প্রতিনিধি মারটিন বিালি হারমেন, গুয়াতেমালার স্থায়ী প্রতিনিধি কার্লা মারিয়া রডরিগুয়েজ, মরক্কোর স্থায়ী প্রতিনিধি ওমর হিলালী, পূর্ব তিমোরের স্থায়ী প্রতিনিধি কার্লিটো নূনেস, হাঙ্গেরীর উপ-স্থায়ী প্রতিনিধি অনিতা কোকাই, জাতিসংঘের জেনারেল অ্যাসেম্বলি ও কনফারেন্স ব্যবস্থাপনা বিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল মোভসেস আবেলিয়ান, নীতি বিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল গাই রাইডার, নিউইয়র্ক সিটি মেয়রের প্রতিনিধি দিলীপ চৌহান, ইউনেস্কোর নিউইয়র্ক অফিসের প্রতিনিধি মাতৃভাষার জন্যে বাঙালিদের আত্মত্যাগের প্রশংসা করেন এবং সকল জাতিগোষ্ঠির মধ্যে একই চেতনা প্রবাহিত রাখার অভিপ্রায়েই ২১ ফেব্রুয়ারিকে জাতিসংঘ ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে বলে উল্লেখ করেন। বক্তাগণ জাতিসংঘে বহুভাষাবাদ ও মাতৃভাষার প্রচারে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য বাংলাদেশকে ধন্যবাদ জানান। 

স্প্যানিশ ভাষাভাষী ফ্রেন্ডস্ গ্রুপের পক্ষ থেকে জাতিসংঘে নিযুক্ত কিউবার উপ-স্থায়ী প্রতিনিধি এবং ভাষা বিষয়ক এনজিও কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ফ্রান্সেস এম হাল্ট-ও বক্তব্য রাখেন। আলোচনা শেষে একটি মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। জাতিসংঘ চেম্বার মিউজিক সোসাইটি, শ্রী চিন্ময় গ্রুপ এবং ভারতের স্নেহ্ আর্ট নামক একটি সাংস্কৃতিক সংগঠন এতে অংশগ্রহণ করে।