যুক্তরাষ্ট্র আর্মি ওয়ার কলেজের ২৬ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশন পরিদর্শন করেছে। নিউইয়র্কের স্থানীয় সময় শুক্রবার (২২ অক্টোবর) যুক্তরাষ্ট্র আর্মি ওয়ার কলেজের প্রতিনিধি দল স্থায়ী মিশন পরিদর্শন ক‌রে।

স্থায়ী মিশন জানায়, জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে বাংলাদেশের অব্যাহত অগ্রযাত্রা এবং বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীদের সুনামের পরিপ্রেক্ষিতে পারস্পরিক অভিজ্ঞতা বিনিময়ের অংশ হিসেবে প্রতি বছর ইউএস আর্মি ওয়ার কলেজের প্রতিনিধি দল বাংলাদেশ মিশন পরিদর্শন ক‌রে।

প্রতিনিধি দলকে মিশনে স্বাগত জানান জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত মুহাম্মদ আবদুল মুহিত।

স্বাগত বক্তব্যে তিনি শীর্ষ শান্তিরক্ষী প্রেরণকারী দেশ হিসেবে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে বাংলাদেশের ব্যাপক অবদান এবং জাতিসংঘের শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষা, টেকসই শান্তি ও পিস্‌বিল্ডিং কার্যক্রমে বাংলাদেশের নিবিড় অংশগ্রহণের কথা তুলে ধরেন।

 

এলডিসি থেকে বাংলাদেশের উত্তরণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বের কথা তুলে ধরেন স্থায়ী প্রতিনিধি। জাতিসংঘে ‘শান্তির সংস্কৃতি’ এবং ‘নারী, শান্তি ও নিরাপত্তা’ শীর্ষক রেজুলেশন দুটি গৃহীত হওয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের নেতৃত্বের কথাও উল্লেখ করেন তিনি। এছাড়া বাংলাদেশ উত্থাপিত অন্যান্য রেজুলেশন যেমন— অন্ধত্ব প্রতিরোধ, ডুবেমৃত্যু রোধ, প্রাকৃতিক তন্তু পাট এবং দোহা প্রোগ্রাম অব অ্যাকশন’র কথা উল্লেখ করেন তিনি।

স্থায়ী প্রতিনিধি জানান, বর্তমানে বাংলাদেশ পিস্‌বিল্ডিং কমিশনের চেয়ার এবং ইউএন উইমেন এক্সিকিউটিভ বোর্ডের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করছে। এশিয়া প্যাসিফিক গ্রুপ থেকে সর্বোচ্চ ভোট পেয়ে জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিলের সদস্য হিসেবে বাংলাদেশ নির্বাচিত হয়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

বাংলাদেশে করোনা মহামারি মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বের কথা তুলে ধরেন রাষ্ট্রদূত মুহিত। রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানে বাংলাদেশ জাতিসংঘে যেসব পদক্ষেপ গ্রহণ করে যাচ্ছে তা উল্লেখ করেন তিনি। বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীর মধ্যে বহুমুখী সহযোগিতা দিন দিন আরও বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে উল্লেখ করেন স্থায়ী প্রতিনিধি।

বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনের ডিফেন্স অ্যাডভাইজর ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. ছাদেকুজ্জামান জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীদের ভূমিকা ও বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে বাংলাদেশ সর্বোচ্চ শান্তিরক্ষী প্রেরণকারী দেশ। শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে বাংলাদেশ সেনা, নৌ, বিমান ও পুলিশ বাহিনীসহ সব বাহিনীর অংশগ্রহণ বিশ্বে প্রায় বিরল ঘটনা। এ পর্যন্ত বাংলাদেশের ১ লাখ ৮১ হাজার ৬৬১ জন শান্তিরক্ষী জাতিসংঘের ৫৬টি পিস কিপিং মিশনে অংশ নিয়েছেন। আর বর্তমানে ৯টি মিশনে নিয়োজিত রয়েছেন ৭ হাজার ১৪৪ জন বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী। দায়িত্ব পালনরত অবস্থায় এ পর্যন্ত শহীদ হয়েছেন ১৬৫ জন আর আহত হয়েছেন ২৫৮ জন।

তিনি জানান, শান্তিরক্ষী মিশনে বর্তমানে ৫৪২ জন নারী শান্তিরক্ষী রয়েছেন, যার মধ্যে বাংলাদেশ পুলিশের একটি নারী কন্টিনজেন্ট রয়েছে। বক্তব্যে বিগত তিন দশকেরও বেশি সময়ে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে বাংলাদেশের সাফল্যমণ্ডিত অগ্রযাত্রার বিভিন্ন দিকগুলোর কথা তুলে ধরেন ডিফেন্স অ্যাডভাইজর।