নিউইয়র্ক: দক্ষিণ এবং মধ্য আমেরিকার দেশসমূহ থেকে দলে দলে অভিবাসীর আগমন ঘটায় নিউইয়র্ক সিটি মেয়র এরিক এডামস বিশ্বের রাজধানী খ্যাত এবং জাতিসংঘের শহর হিসেবে পরিচিত নিউইয়র্ক সিটিতে ‘জরুরি অবস্থা’ ঘোষণা করেছেন।

শুক্রবার সিটি হলে সহকর্মীগণকে পাশে নিয়ে এ ঘোষণা প্রদানকালে মেয়র বলেছেন, ইতিমধ্যেই ১৭ হাজার অভিবাসীকে টেক্সাস থেকে বাস ভরে পাঠানো হয়েছে। আরো লাখ খানেক পাঠানোর প্রক্রিয়ায় রয়েছে। হঠাৎ করে আসা এত মানুষকে আবাসন সুবিধা দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। গৃহহীনদের জন্য যে সব আশ্রয় কেন্দ্র ছিল সেগুলো আগে থেকেই পূর্ণ হয়ে আছে। 

মেয়র বলেন, আমরা ব্রঙ্কসে অর্চার্ড বীচ পার্কিং লটে অস্থায়ী একটি শিবির নির্মাণের পরিকল্পনা নিয়েছিলাম। সেটি নিয়েও বিতর্ক শুরু হয়েছে। বিশেষ করে বন্যার পানিতে তা ভেসে যাবার আশংকা থাকায় পরিকল্পনাটি স্থগিত রেখে র‌্যান্ডেল আইল্যান্ডে একটি শিবির নির্মাণের কথা ভাবছি। 

 

মেয়র বলেন, এতবেশী মানুষের আগমণ ঘটায় বিদ্যমান বাজেটে কুলাচ্ছে না। চলতি অর্থ বছর এসব অভিবাসীর আবাসন-খাবার-শিশুদের স্কুলে যাতায়াত ব্যবস্থায় কমপক্ষে এক বিলিযন ডলারের প্রয়োজন হবে। ফেডারেল এবং স্টেট থেকে অর্থ-সহায়তা ব্যতিত কোন কিছুই করা সম্ভব হবে না। এ জন্য মেয়র এডামস প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং স্টেট গভর্ণর ক্যাথি হোকুলের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন অবিলম্বে অর্থ বরাদ্দের জন্য। একইসাথে এসব অভিবাসীর মধ্যে যারা রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা করবেন, তাদেরকে দ্রুততম সময়ে ওয়ার্ক পারমিট প্রদানের একটি বিল কংগ্রেসে পাশের ব্যাপারেও সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি আহবান জানিয়েছেন এরিক এডামস। 

মেয়র বলেন, এ নিয়ে সময়ক্ষেপণের কোনই অবকাশ থাকতে পারে না। 

প্রসঙ্গত: উল্লেখ্য, প্রেসিডেন্ট হিসেবে বাইডেন দায়িত্ব গ্রহণের পরই হাজার হাজার মানুষ সাউথ ও সেন্ট্রাল আমেরিকার দেশসমূহ থেকে মেক্সিকো হয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সীমান্ত অতিক্রম করছে। এর সিংহভাগ আশ্রয় নিয়েছে টেক্সাসে। টেক্সাসের রিপাবলিকান গভর্নর গ্রেগ এ্যাবোট হিমসিম খাচ্ছেন বিরাটসংখ্যক অভিবাসীকে ভরন-পোষণ ও আশ্রয় প্রদানে। বাইডেনের প্রতি অনুরোধ জানিয়েও কোন ফায়দা না হওয়ায় গভর্নর এ্যাবোট বাইডেনের ডেমক্র্যাট অধ্যুষিত নিউইয়র্ক, ইলিনয়, মিশিগান, ম্যাসাচুসেট্‌স স্টেটে সে সব অবৈধ অভিবাসীদেরকে বাসে ভরে পাঠানো শুরু করেছেন। প্রতিদিনই বাসের বহর আসছে নিউইয়র্ক সিটিতেও। 

নভেম্বরের ৮ তারিখ মধ্যবর্তী নির্বাচনে অভিবাসনের এই ইস্যুটি ব্যাপক প্রভাব ফেলবে বলে মনে করা হচ্ছে। এ অবস্থায় নিউইয়র্কের ডেমক্র্যাট মেয়র এরিক এডামসের এই জরুরি অবস্থা ঘোষণা নিয়েও নানা কথা শুরু হয়েছে। কারণ, মধ্যবর্তী নির্বাচনের দিন নিউইয়র্কের গভর্নর ক্যাথি হোকুলেরও পুননির্বাচনের ভোট হবে। সামগ্রিক অবস্থার আলোকে মেয়র এডামস উল্লেখ করেন, বাইডেনকে পরিস্থিতির গুরুত্ব অনুধাবন করতে হবে। 

নিউইয়র্ক স্টেট গভর্নরের আওতায় অনেক খালি জায়গা রয়েছে,সেগুলোর অনুমতি পেলে জরুরি এই প্রয়োজনে আশ্রয়-শিবির নির্মাণ করা যেতে পারবে বলে উল্লেখ করেছেন সিটি মেয়র। তবে তিনি এসব পতিত জমি সম্পর্কে স্পষ্ট করে কিছু বলতে চাননি। মেয়র অবশ্য তার অফিসের মাধ্যমে ঐসব পতিত ভূমির ব্যপারে বিস্তারিত অনুসন্ধান শুরু করেছেন বলে গণমাধ্যমকে জানান। 

এর আগে বুধবার নিউইয়র্ক সিটি কাউন্সিলের স্পীকার আদ্রিয়েনে এডামস এবং কাউন্সিলের ইমিগ্রেশন বিষয়ক কমিটির চেয়ার শাহানা হানিফ-সহ কয়েকজন নির্বাচিত প্রতিনিধি আবাসন সমস্যার দ্রুত সমাধানের জন্যে সিটির হোটেল-মোটেলের কক্ষ ভাড়ার কথা বলেছেন। এমন প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়ে মেয়রও জানতে চেয়েছেন ঐসব হোটেল-মোটেলের নাম-ঠিকানা। 

এদিকে, সীমান্ত পুলিশ এবং কর্মরত মানবাধিকার সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, গত ৯ মাসে সেন্ট্রাল এবং সাউথ আমেরিকার দেশসমূহ থেকে বেআইনীভাবে যুক্তরাষ্ট্রের ঢুকে পড়া অভিবাসীর সংখ্যা ১০ লাখের বেশি। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এতবেশী মানুষের প্রবেশ ঘটেনি যুক্তরাষ্ট্রে। এ অবস্থায়ও কংগ্রেস দ্রুত কোন পদক্ষেপ গ্রহণে সীমাহীন উদাসিনতা প্রদর্শন করছে বলে অভিযোগ উঠেছে।