নিউইয়র্ক: আগামী ৮ অক্টোবর ১২ রবিউল আউয়াল। এ দিন মানব জাতির শিরোমণি মহানবী হজরত মুহম্মদ (সা.) এর জন্ম ও ওফাতের দিন। এ দিনটি মুসলিম উম্মাহর কাছে পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) নামে পরিচিত। এই দিনে আরবের মরু প্রান্তরে মা আমিনার কোল আলো করে জন্ম নিয়েছিলেন বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)। আবার এই দিনে তিনি পৃথিবী ছেড়ে চলে যান।
এক সময় গোটা আরব অন্ধকারে নিমজ্জিত ছিল। তারা আল্লাহকে ভুলে গিয়ে নানা অপকর্মে লিপ্ত হয়ে পড়েছিল। আরবের সর্বত্র দেখা দিয়েছিল অরাজকতা ও বিশৃঙ্খলা। এ যুগকে বলা হতো আইয়্যামে জাহেলিয়াত। তখন মানুষ হানাহানি ও কাটাকাটিতে লিপ্ত ছিল এবং মূর্তিপূজা করত। এই অন্ধকার যুগ থেকে মানবকুলের মুক্তিসহ তাদের আলোর পথ দেখাতে মহান আল্লাহ তায়ালা রাসূলুল্লাহকে (সা.) প্রেরণ করেন এই ধরাধমে। মহানবী অতি অল্প বয়সেই আল্লাহর প্রেম অনুরক্ত হয়ে পড়েন এবং প্রায়ই তিনি হেরা পর্বতের গুহায় ধ্যানমগ্ন থাকতেন। ২৫ বছর বয়সে মহানবী বিবি খাদিজা নামের এক ধর্ণাঢ্য মহিলার সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। মাত্র ৪০ বছর বয়সে তিনি নব্যুয়ত প্রাপ্ত হন। আল্লাহ তায়ালার নৈকট্য লাভ করেন। পবিত্র কুরআন শরীফে বর্ণিত আছে, ‘মহানবীকে সৃষ্টি না করলে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন পৃথিবীই সৃষ্টি করতেন না’। এসব কারণে এবং তৎকালীন আরব জাহানের বাস্তবতায় এ দিনের গুরুত্ব ও তাৎপর্য অনেক বেশি। বিশ্ব মুসলিম সম্প্রদায় এ দিনটি ঈদে মিলাদুন্নবী হিসেবে পালন করে থাকে।
প্রবাসে বাংলাদেশি অধ্যুষিত এলাকাগুলোর মসজিদ ও বিভিন্ন সংগঠনের উদ্যোগে পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উপলক্ষে নানা কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে।
সিরাত কনভেনশনে বক্তারা : নবী করীম (সা.) জীবন চরিত্রের আলোকে নিজেদের গড়ে তুলতে হবে
‘মহাম্মদ (সা.) বিশ্ব শান্তি ও সামাজিক ন্যায় বিচারের প্রতীক’ শীর্ষক- ইন্টারন্যাশনাল ইউনাইটেড সীরাত কনভেনশন গত ২ অক্টোবর রোববার সন্ধ্যায় জ্যামাইকার একটি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয়েছে। বক্তারা বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর জীবন চরিত্রের আলোকে নিজেদের গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, তিনি শুধু মুসলমানদের জন্য নন, সমগ্র মানবজাতির আলোকবর্তিকা হিসেবে পৃথিবীতে এসেছিলেন। ছিলেন সমগ্র মানবের জন্য ন্যায়ের প্রতীক। তাঁর আলোকে আমাদের আলোকিত করতে পারলেই ইহকাল ও পরকাল উভয় জগতেই সুখ নিশ্চিত করা যাবে। কনভেনশনে বক্তারা নবী করীম (সা.) এর জীবনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন। বিশেষ করে পিতা-মাতার সাথে সন্তান আর সন্তানের সাথে পিতা-মাতার সম্পর্কের পাশাপাশি খাঁটি মুসলিম হওয়ার বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে তুলে ধরেন।
আলোচনায় অংশ নেন প্রধান অতিথি ফার্মাসিস্ট আমীর খান ও কনভেনশনের চেয়ারম্যান ইমাম মির্জা আবু জাফর বেগ ও ফাদার জিম সহ আমন্ত্রিত অতিথি আব্দুল হাদী আফসারী, মোয়াজ্জেম হোসেন ফারুকী, ড. আবুল কালাম আজাদ, ড. জহিরুল আলম, ইমাম শামসে আরী, মওলানা ফায়েক উদ্দিন, মওলানা সাঈদুর রহমান, ইমাম আনসারুল করীম, মওলানা লুৎফর রহমান কাশিমী, ইমাম আকিমুজ্জামান, মুফতি ইসমাইল, মওলানা নোমান কাসিমী, মওলানা আহমদ, হাফেজ আব্দুল্লাহ কাফি, মওলানা আবু সাইদ মাহফুজ, সাপ্তাহিক বাংলাদেশ সম্পাদক ডা. ওয়াজেদ এ খান, জেবিবিএ’র সভাপতি গিয়াস আহমেদ, বিশিষ্ট রিয়েল এস্টেট ইনভেস্টর আনোয়ার হোসেন, এস্টোরিয়ার আল আমীন মসজিদের সভাপতি জয়নাল আবেদীন এবং এনওয়াইপিডি’র অফিসার এরিক রবিনসন।
কনভেনশনে নাত পরিবেশন করেন অ্যাটর্নি মঈন চৌধুরী ও ইকবাল হোসেন। পরিচালনায় ছিলেন মুফতি আব্দুল মালেক। সার্বিক সহযোগিতায় ছিলেন ইমাম হাফেজ রফিকুল ইসলাম ও মওলানা মঞ্জুরুল করীম। উল্লেখ্য, এবারের কনভেনশন ছিল ১৫তম কনভেনশন। আয়োজক ছিল আমেরিকান মুসলিম সেন্টার।
এশার নামাজ শেষে বিশেষ মোনাজাতের মধ্যদিয়ে কনভেনশনের সমাপ্তি ঘটে। এতে কয়েক শত মুসলিম নরনারী সপরিবারে অংশ নেন।
মাসব্যাপী ঈদে মীলাদুন্নবী (সা.) উদযাপন অনুষ্ঠান : উত্তর আমেরিকায় এ বছর মহানবী (সা.) এর জন্ম মাস মাহে রবিউল আউয়াল শুরু হয় গত ২৭ সেপ্টেম্বর। মাসটি শুরু হওয়ার পরপরই বিশ্বের বিভিন্ন স্থানের মতো নিউইয়র্কের মিনি বাংলাদেশ জ্যাকসন হাইটসেও শুরু হয়েছে মাসব্যাপী মিলাদ উদযাপন অনুষ্ঠান। গত ২ অক্টোবর ছিল মুসলিম কোয়ালিশন অব আমেরিকার মিলাদ উদযাপন-২০২২। দুপুরে বৃষ্টি ভেজা শোভাযাত্রা শেষে সবাই জড়ো হোন স্থানীয় কাবাবকিংয়ের দু’তলার পার্টি সেন্টারে। সেখানে চলে আলোচনা, নাত, সালাত ওয়া সালাম, দোয়া ও লাঞ্চ শিরনি। বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান ও শ্রীলংকার মুসলমানরা এতে জড়ো হয়ে উদযাপন করেন ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.)। আল নূর সেন্টারের আয়োজনে আগামী ৮ অক্টোবর বেলা ৩টায় জ্যাকসন হাইটসের দ্বিতীয় ঈদে মিলাদুন্নবীর আউট ডোর প্রোগ্রামটি শুরু হবে ডাইভার সিটি প্লাজায়। এ দিকে নিউইয়র্কে আঞ্জুমানে আল ইসলাহ ব্রঙ্কস ব্যুরোর উদ্যোগে গত ৩ অক্টোবর ব্রঙ্কসের শাহজালাল দারুসসুন্নাহ জামে মসজিদে পবিত্র ঈদেমিলাদুন্নবী (সা.) উপলক্ষে এক আলোচনা ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়।
