১৮ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ সোসাইটির নির্বাচন করার জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে নির্বাচন কমিশন। প্রার্থীরাও প্রস্তুত। জোর প্রচার-প্রচারণা চলছে। তবে এখনো নির্বাচনী আমেজ পুরোপুরি নেই। কারণ, নির্ধারিত তারিখে নির্বাচন হবে কি না, এ প্রশ্ন সবার মনে। নির্বাচনের আগ মুহূর্তে ওসমান চৌধুরী নির্বাচন স্থগিত চেয়ে আদালতে আবেদন করবেন বলে জানা গেছে। এ জন্য তিনি সব প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছেন। পাশাপাশি আরো দু-একজন মামলা করতে পারেন। এ অবস্থায় আদালত থেকে কোনো আদেশ এলে আবার নির্বাচন বন্ধ হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। ইতিমধ্যে ওসমান চৌধুরী মামলা করার বিষয়টি সোসাইটির পরিচালনা কমিটিকে জানিয়েছেন। তিনি এ-ও জানিয়েছেন, গঠনতন্ত্র মোতাবেক নির্বাচন করার জন্য। এদিকে মামলার আশঙ্কা থাকলেও নির্বাচন কমিশন, ট্রাস্টি বোর্ড ও সোসাইটির পরিচালনা পরিষদ নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। ৪৪ হাজার ডলারের বাজেটও ঘোষণা করা হয়েছে। কমিশন সোসাইটির কাছে নির্বাচন করার জন্য ৪৭ হাজার ডলার চেয়েছিল। অনেক দেন-দরবারের পর অবশেষে ট্রাস্টি বোর্ড ও নির্বাহী কমিটি ৪৪ হাজার ডলার অনুমোদন দিয়েছে। ইতিমধ্যে পুরো অর্থ হাতে পেয়েছে নির্বাচন কমিশন। অর্থ পাওয়ার পর নির্বাচন কমিশন ভোট গ্রহণের জন্য পাঁচটি কেন্দ্র চূড়ান্ত করেছে। কেন্দ্রগুলো হলো কুইন্স : গুলশান ট্যারেস (ঢাকা ক্লাব), ৫৯-১৫ ৩৭ অ্যাভিনিউ, উডসাইড, নিউইয়র্ক-১১৩৭৭; ওজন পার্ক : দেশি সেন্টার, ৮৩-১০ রকাওয়ে বুলেভার্ড, ওজন পার্ক, নিউইয়র্ক-১১৪১৬; ব্রুকলিন : পিএস ১৭৯-২০২ অ্যাভিনিউ, সি ব্রুকলিন, নিউইয়র্ক-১১২১৮; ব্রঙ্কস : গোল্ডেন প্লেস, ১৪৫১ ইউনিয়ন পোর্ট রোড, ব্রঙ্কস, নিউইয়র্ক-১০৪৬২ এবং জ্যামাইকা : ইকরা পার্টি সেন্টার, ৮৯-১৬, ১৭৫ স্ট্রিট, জ্যামাইকা, নিউইয়র্ক-১১৪৩২. নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে ঘোষণা করা হয়েছে, পাঁচটি কেন্দ্রের জিপকোড অনুযায়ী টাচ স্ক্রিন ভোটিং মেশিনের মাধ্যমে নির্বাচনী কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। নির্বাচন কমিশনের প্রধান এস এম জামাল ইউ আহমেদ (জনি) এবং কমিশনাররা হলেন মোহাম্মদ এ হাকিম মিয়া, মোহম্মদ আনোয়ার হোসেন, কাওসারুজ জামান (কয়েস), মোহাম্মদ আর সরকার ও খোকন মোশারফ। নির্বাচন কমিশন বলেছে, ভোটকেন্দ্র্রে ভোটারদের মূল আইডি কার্ড নিয়ে যেতে হবে; ফটোকপি, পিকচার, স্ক্রিন শর্ট আইডি গ্রহণযোগ্য হবে না। আইডির পাশাপাশি গ্রিন কার্ড, ওয়ার্ক অথরাইজেশন, পাসপোর্টও ব্যবহার করা যাবে। নির্বাচন কেন্দ্রের ২০০ ফুটের মধ্যে কোনো ধরনের ব্যানার, পোস্টার, ফেস্টুন লাগানো ও ব্যবহার করা যাবে না। কেউ যদি তা করেন, তাহলে নির্বাচন কমিশন তা রিমুভ করবে। নির্বাচন কেন্দ্রের কাছে রেডিও স্পিকার, মাইকিং ডিভাইস ব্যবহার করা যাবে না, কেউ আন-অথরাইজড ও বেআইনি কার্যক্রম করতে পারবে না। কেউ যদি নির্বাচনী কেন্দ্রে তা করেন, তাহলে নিকটস্থ পুলিশকে জানানো হবে এবং পুলিশ ব্যবস্থা নেবে। যেসব ভোটার হুইলচেয়ারে আসবেন, তারা একজন সহযোগী সঙ্গে নিয়ে আসতে পারবেন। কমিশনের অনুমতি ছাড়া কোনো প্রার্থী ভোট দেওয়ার পর আর ভোটকেন্দ্রের ভেতরে থাকতে পারবেন না। কমিশন কাউকে অনুমতি দিলে একজন সর্বোচ্চ ১০ মিনিট সময় পাবেন। প্রার্থীরা ভোট শুরুর আগে ভোটকেন্দ্র ও মেশিন পরীক্ষা করে দেখতে পারবেন। লাইফ মেম্বাররা তাদের লাইফ মেম্বারের কার্ড দেখিয়ে সরাসরি ভোট দিতে পারবেন। যার ভোটকেন্দ্র যে এলাকায়, তাকে সেই এলাকার ভোটকেন্দ্রে ভোট দিতে হবে। কেউ অন্য এলাকায় ভোট দিতে পারবেন না। পাশাপাশি যেসব কেন্দ্রে প্রিসাইডিং অফিসার ও পোলিং অফিসার রয়েছেন, তারা তাদের ভোটকেন্দ্রে ভোট দিতে পারবেন। প্রত্যেক ভোটারের নাম, জন্ম তারিখ, সাল ভোটার তালিকায় ও আইডি কার্ডে একই হতে হবে। পোলিং অফিসার, পোলিং এজেন্ট, প্রিসাইডিং অফিসার, ইলেকশন কমিশনার, মেশিন অপারেটর সবার কোভিড ভ্যাকসিনের টিকা দেওয়া থাকতে হবে। তাদেরকে টিকা দেওয়ার প্রমাণ দেওয়ার পাশাপাশি মাস্ক পরতে হবে। পোলিং সেন্টারে সবাইকে দূরত্ব বজায় রেখে চলতে হবে। ভোটের বিষয়ে কারও কোনো ডিসপুট বা আপত্তি থাকলে ইলেকশন কমিশনের কাছে ডিউতে থাকা অবস্থায় লিখিতভাবে জানাতে হবে। কমিশন ঘটনার তদন্ত করবে এবং চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবে। নির্বাচন সম্পন্ন হওয়ার পর মেশিন অপারেটররা নির্বাচনের ফলাফল প্রিন্ট দেবেন। প্রার্থী এবং তাদের মনোনীত প্রতিনিধিরা নির্বাচনের ফলাফল নিতে পারবেন। নির্বাচন কমিশন ফলাফল শিটে স্বাক্ষর করে ফলাফল ঘোষণা করবে। নির্বাচনের ব্যাপারে সব ক্ষমতা নির্বাচন কমিশনের হাতে ন্যস্ত থাকবে। ওসমান চৌধুরীকে বৈঠকে বসার অনুরোধ জানিয়ে বাংলাদেশ সোসাইটির চিঠি: বাংলাদেশ সোসাইটির সাবেক নেতা ও মামলার বাদী ওসমান চৌধুরীর সঙ্গে বৈঠকে বসার আগ্রহ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ সোসাইটির পরিচালনা পরিষদ। এ জন্য ওসমান চৌধুরীর কাছে সার্টিফায়েড মেইলের মাধ্যমে সোসাইটির পরিচালনা পরিষদের পক্ষ থেকে একটি চিঠি দেওয়া হয়েছে। চিঠিতে আগামী ১০ সেপ্টেম্বর বিকেলে তাকে সোসাইটির অফিসে উপস্থিত হয়ে কথা বলার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে। সোসাইটির পরিচালনা পরিষদের নেতারা সেখানে উপস্থিত থাকবেন বলে চিঠিতে তাকে অবহিত করা হয়েছে। সোসাইটির কোষাধ্যক্ষ মোহাম্মদ আলী বলেন, ওসমান চৌধুরী বাংলাদেশ সোসাইটির পরিচালনা পরিষদকে চিঠি দিয়েছেন। তিনি নির্বাচনের বিষয়ে আপত্তি জানিয়েছেন এবং নির্বাচনে গঠনতন্ত্রের বিভিন্ন দিক মানা হচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছেন। পাশাপাশি তিনি ওই সব বিষয় নিরসন করার কথা চিঠিতে উল্লেখ করেছেন। ওই চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে তার সঙ্গে বৈঠকে বসার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ জন্য তাকে সোসাইটির অফিসে এসে নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করার অনুরোধ জানানো হয়েছে। ওসমান চৌধুরী বৈঠকে বসলে আলোচনার মাধ্যমে মামলার বিষয়টির সমাধান হবে বলে মোহাম্মদ আলী আশা প্রকাশ করেন। সোসাইটির চিঠিতে তারিখ দেয়া হয়েছে ৩০ আগস্ট। আর রেফারেন্স হিসাবে ওসমান চৌধুরীর ১৪ আগস্টের চিঠির তারিখ উল্লেখ করা হয়েছে। ১০ সেপ্টেম্বর বিকেল পাঁচটায় তাকে সোসাইটির অফিসে উপস্থিত হতে হবে। এই সময়ে ওসমান চৌধুরীকে তার সদস্য পদ প্রমাণের পক্ষে নথি এবং তিনি নির্বাচনের যেসব গঠনতন্ত্র ভঙ্গ করাসহ বিভিন্ন অভিযোগ তুলেছেন সেই অভিযোগের স্বপক্ষে নথিপত্র থাকলে তাও নিয়ে যাওয়ার জন্য বলা হয়েছে। ওসমান চৌধুরী সোসাইটির চিঠি পেয়েছেন ঠিকানাকে অবহিত করেছেন। তবে তিনি ১০ সেপ্টেম্বরে সেখানে যানে কিনা তা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। এই জন্য অপেক্ষা করতে হবে।